‘অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণেও পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেছেন, স্থানীয় বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতার কারণেও আমাদের পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আজ বুধবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত 'বেসরকারিখাত এবং সরকারি সংস্থাসমূহের মধ্যকার সমন্বয় সুসংহতকরণ' স্টেকহোল্ডার আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।
তপন কান্তি ঘোষ বলেন, 'তেল-চিনিসহ বেশকিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের স্থানীয় চাহিদা আমদানির মাধ্যমে মেটাতে হয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্যের অস্থিতিশীলতার কারণে দেশীয় বাজারে পণ্যের মূল্যে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। তবে স্থানীয় বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতার কারণেও আমাদের পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, ফলে ভোক্তারা মূল্যস্ফীতির শিকার হচ্ছেন।'
বাণিজ্য সচিব বলেন, 'ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় সরকারের কিছু নীতিমালা ও নিয়ম আছে, এগুলোর ব্যবহারে উদ্যোক্তারা আরও বেশি হারে সচেতন হলে হয়রানিসহ অনেক ক্ষেত্রে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব।'
ডিসিসিআইয়ের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার মন্তব্য করেন, ভ্যাট রিটার্ন প্রক্রিয়া পুরোপুরি অনলাইন ও অটোমেটেড হওয়া প্রয়োজন। একইসঙ্গে তিনি ব্যবসার পরিচালন ব্যয় কমাতে যৌক্তিক হারে ভ্যাট কমানোর আহ্বান জানান।
মো. সামীর সাত্তার বলেন, 'স্থানীয় উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থাপনার ওপর আমাদের অর্থনীতির সাফল্য অনেকাংশে নির্ভরশীল। কারণ বাজারের অব্যবস্থাপনার জন্যে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় উদ্যোক্তারা যেমন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন, তেমনই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ও মান কমার ফলে ভোক্তারা মানসম্মত পণ্য থেকে বঞ্চিত হন।'
তিনি ব্যবসায়ীদের হয়রানিমুক্ত ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা, ভোক্তা অধিকার সমুন্নত রাখতে আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোরারোপ করেন।
এ ছাড়াও, কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স প্রক্রিয়া দ্রুত করা, বিএসটিআইর সক্ষমতা বাড়ানো এবং এনবিআর, ট্যারিফ কমিশন, প্রতিযোগিতা কমিশনসহ সরকারের অন্যান্য সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধির আহ্বান জানান তিনি।
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, 'বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে বেসরকারি খাত ও সরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয় একান্ত আবশ্যক, বিশেষ করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর ও শ্রম অধিদপ্তরের কার্যক্রমের সমন্বয় বিশেষভাবে প্রয়োজন।'
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, 'আমাদের তৈরি পোশাক খাতের কমপ্লায়েন্স বৈশ্বিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে এবং অন্যান্য খাতেও কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে হবে। দেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে সহায়ক নীতিমালা নিশ্চিত করা অপরিহার্য।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের ব্যবসায়িক কাজে প্রয়োজনীয় 'স্যাম্পল' ছাড়া করতে যদি সময় বেশি লাগে, তাহলে ব্যবসা চলে যাবে ভিয়েতনামসহ প্রতিযোগী অন্যান্য দেশে, তাই এক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া সহজ করার কোনো বিকল্প নেই।'
বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপার্সন প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, 'ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মাঝে গ্যাপ আছে, যেটি নিরসন করা দরকার। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেসরকারিখাতের অবদান প্রায় ৮২ শতাংশ এবং বেসরকারিখাতের উন্নয়নে সহায়ক নীতি সহায়তা প্রদানে সরকার বদ্ধ পরিকর।'
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, 'এলসিডি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে ইন্দোনেশিয়া-বাংলাদেশের মধ্যকার একটি পিটিএ স্বাক্ষর প্রায় শেষ পর্যায়ে আছে। জাপানের সঙ্গে 'ইকোনেমিক পার্টনারশিপ' চুক্তি স্বাক্ষরে কার্যক্রম অব্যাহত আছে।'
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, 'অসাধু চক্রের কারণে আমাদের সৎ ও সত্যিকারের ব্যবসায়ীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে, যা রোধে সবার যৌথ ও সমন্বিত উদ্যোগ অপরিহার্য।'
Comments