নারায়ণগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে নিহত ৩

মা বেঁচে নেই, জানে না ৭ বছরের পিয়াস

চাচাত ভাইয়ের কোলে পিয়াস। ছবি: সনদ সাহা

৭ বছরের পিয়াস ঘোষ জানে না তার মা বেঁচে নেই। সে জানে মা ঘুমিয়ে আছে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ভারী বৃষ্টিতে শহরের দেওভোগ এলাকায় ঘরে যখন পিয়াস খেলা করছিল তখন বাড়ির গেটে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন তার মা। সেখানেই মৃত্যু হয় মনি রানী ঘোষ (৪০) এবং পিয়াসের ২ চাচি বাসন্তী ঘোষ (৪৫) ও বিমলা রাণী ঘোষ (৫৫)।

সরেজমিনে দেখা যায়, স্বজন ও প্রতিবেশীরা ৩ জনের মরদেহের পাশে আহাজারি করছেন। একটু দূরে একা দাঁড়িয়ে আছে পিয়াস। তখনই বড় ভাই রাজু ঘোষ এসে তাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করেন। তখনও পিয়াস চুপ। এ সময় বড় ভাই রাজুকে দেখে চিপস খাওয়ার বায়না করে টাকা চায় পিয়াস। ভাইও কান্নারত অবস্থায় পকেট থেকে টাকা বের করে দেয় পিয়াসকে।

রাজু ঘোষ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পিয়াস আমার ছোট কাকুর ছেলে। ৬ থেকে ৭ মাস আগে আমার বাবা ও মা ২ জন মারা যান। তারা অসুস্থ ছিলেন। মায়ের মতো করে কাকিরা আমায় আগলে রেখে ছিলেন। এখন ৩ কাকিকেও আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে গেলেন স্রষ্টা।'

তিনি আরও বলেন, 'এই যে ছোট ভাইটা, ওকে এখন কে দেখবে? মাকে ছাড়া তো এই ছেলে কখনো থাকেনি। কিছুদিন আগে আমার বাসায় গিয়েছিল বেড়ানোর জন্য। রাতে রাখার জন্য অনেক চেষ্টা করি, কিন্তু ওর মা থাকবে না তাই সেও চলে আসে।'

তোমার মা তোমাকে কী বলে ডাকে জানতে চাইলে পিয়াস ঘোষ বলে, 'মা আমাকে 'বাবু' বলে ডাকে।'

তোমার মায়ের কী হয়েছে জানতে চাইলে পিয়াস বলে, 'না। কিছু হয়নি। 'মা, জেঠিমনিরা ঘুমিয়ে আছে।'

নিহত বিমলা রাণী ঘোষের স্বামী রঞ্জিত ঘোষ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বৃষ্টিতে গেটের সামনে জল জমে থাকে। সেই জল ঝাড়ু দিয়ে সরিয়ে দিতে গিয়ে গেট ধরে আমার স্ত্রী। তখনই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। পরে আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী বাসন্তী আরেক ছোট ভাইয়ের স্ত্রী মনিকে ডাক দিয়ে বলে বড়দি (আমার স্ত্রী) অসুস্থ হয়ে গেটে পড়ে গেছে। তাকে তুলতে গিয়ে বাসন্তী ও মনি দু'জনই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। পরে জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।'

তিনি আরও বলেন, 'আগে কখনো বিদ্যুতের লাইনে লিকেজ ছিল না। বৃষ্টি শুরুর আগে ঝড়ো বাতাসে তার ছিড়ে গেটের উপর পড়তে পারে।'

এদিকে বিকেল ৪টায় ৩ গৃহবধূর নিহতের ঘটনায় ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন করেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। এসময় তিনি দুঃখ প্রকাশ করে শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। পাশাপাশি সিটি করপোরেশন শ্মশানে মরদেহ দাহ করতে সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।

নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সাইদুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটি একটি দুর্ঘটনা। তাই পরিবারের কোনো অভিযোগ নেই। তারা বিনা ময়নাতদন্তে মরদেহ নেওয়ার জন্য লিখিত আবেদন দিয়েছে। তবে, একটা অপমৃত্যুর মামলা প্রক্রিয়াধীন।'

Comments

The Daily Star  | English

S Alam threatens int'l legal action against govt over asset freezing: FT

Alam says his family's bank accounts were frozen, they were subjected to travel bans, and they lost control of their companies, all while facing investigations for alleged money laundering without formal notification.

53m ago