শখের কবুতরে জীবিকা

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় নিজের খামারে মো. শাহরিয়ার ফাহিম। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

দ্বিতল বাড়ির ছাদের ২ পাশে টিনের ছাউনির ঘর। ঘরের চারপাশ কাঠ ও তারের নেট দিয়ে ঘেরা। খামারের ভেতর কবুতরের পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন জাতের পাখি। পাখির কিচিরমিচিরে বাড়িটি সবসময় মুখরিত থাকে।

খামারটি মো. শাহরিয়ার ফাহিমের। বর্তমানে তার খামারে ২০ প্রজাতির কবুতর ও ৮ প্রজাতির প্রায় ৭০০ পাখি আছে।

কবুতর পালনের পাশাপাশি 'বার্ডস কেয়ার' নামে তার পাখির খাবারের দোকানও আছে।

পাখি ও পাখির খাবার বিক্রি করে ফাহিম প্রতি মাসে ৬০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা আয় করছেন।

এই যাত্রা খুব সহজ ছিল না ফাহিমের জন্য। শুরুতেই তিনি পরিবারের বাধার মুখে পড়েছিলেন। তবে সব বাধা ডিঙিয়ে তিনি আজ সফল। শুধু নিজের সফলতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে উপজেলার আগ্রহী অনেক তরুণকেও পথ দেখাচ্ছেন তিনি।

ফাহিমের খামার। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

ফাহিম মৌলভীবাজারের বড়লেখা পৌরসভার পাখিয়ালা এলাকার মৃত মো. আব্দুল মতিনের ছেলে। ভাই-বোনদের মধ্যে সবার বড়। বড়লেখা সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করেছেন তিনি।

ফাহিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কখনো বেকার থাকতে চাইনি। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি ব্যবসা শুরু করি। এসএসসি পাশ করে ২০১২ সালে কলেজে ভর্তি হই। তখন থেকেই কবুতর পালনের শখ জাগে।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রথমে ২ জোড়া কবুতর কিনেছিলাম। কিছুদিন পর কবুতরগুলো ডিম দেয় এবং সেগুলো থেকে বাচ্চা ফোটে। এরপর বাণিজ্যিকভাবে কবুতর পালনের চিন্তা আসে।'

ফাহিম জানান, তার খামারের প্রায় ৭০০ পাখির মধ্যে ফেনসি, রেসার, গিরিবাজ কবুতরের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। অন্য পাখিগুলোর মধ্যে বাজিগর, ককাটিয়েল, অস্ট্রেলিয়ান ঘুঘুর চাহিদাও আছে।

এক জোড়া কবুতরের দাম দেড় হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা। রেসার কবুতর সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।

ফাহিম ২০২০ ও ২০২১ সালে সিলেট বিভাগীয় পর্যায়ে কবুতর রেসে পুরস্কার পেয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, 'অনেক পরিশ্রম করে খামারটি গড়েছি। প্রথমে পরিবারের কেউ চাইত না যে কবুতর পালন করি। কিন্তু, এখন কেউ আর বাধা দেয় না।'

কবুতর ছাড়াও ফাহিমের খামারে আছে ৮ প্রজাতির পাখি। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

তার মতে, 'অনেকেই পাখি পালনে আগ্রহী হচ্ছেন। অনেকে আমার কাছ থেকে পাখি কিনছেন, পরামর্শ নিচ্ছেন। পরিশ্রম করলে সফলতা আসবেই। অনেকে শুধুই চাকরির পেছনে ছুটছেন। তাদের উচিত চাকরির পেছনে না ছুটে ভালো কোনো কাজে লেগে থাকা।'

পাথারিয়া গাংকুল মনসুরিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার আইসিটি বিভাগের প্রভাষক সঞ্জীব সরকার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এক বছর হলো আমি বাড়ির ছাদে কবুতর পালন শুরু করেছি। ফাহিমের খামার দেখেই কবুতর পালনে উদ্বুদ্ধ হয়েছি। আমারও শখ ছিল। বর্তমানে আমার কাছে ৩৫ জোড়া দেশি ও ফেনসি কবুতর আছে। ফাহিমের দোকান থেকে পাখির খাবার কিনি।'

লাইসিয়াম স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আফসার হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'লেখাপড়ার পাশাপাশি কবুতর পালন করছি। কবুতরের বিষয়ে আমাদের ধারণা কম ছিল। এগুলো পালন করা, অসুস্থ হলে চিকিৎসা দেওয়াসহ সব বিষয়ে ফাহিম ভাইয়ের কাছে পরামর্শ পাই।'

বড়লেখা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মুহাম্মদ তাজ উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'লেখাপড়ার পাশাপাশি কবুতর পালন করে ফাহিম স্বাবলম্বী হয়েছেন। তার মতো করে তরুণরা যদি লেখাপড়ার পাশাপাশি এভাবে গবাদি পশু-পাখি পালন শুরু করে, তাহলে দেশে বেকারত্ব কমবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Exports under strain as India slaps more restrictions

Industry insiders say the new restrictions could deepen Bangladesh's export woes at a time when global demand remains fragile and other sectors—from garments to processed foods—also face trade hurdles

22m ago