সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানো জরুরি

ছবি: মির্জা শাকিল/ স্টার ফাইল ফটো

ডলারের দাম নিয়ে অস্থিরতার মধ্যে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে এক ধরনের উদ্বেগ দেখা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলে কৃচ্ছ্রতা সাধনের পন্থা গ্রহণের উপলব্ধি তৈরি হয়েছে বলে অনুমান করা যায়।

সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বাতিল, বিদেশ থেকে আমদানির প্রয়োজন হয় অথচ কম গুরুত্বপূর্ণ এমন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন স্থগিত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত এরইমধ্যে নেওয়া হয়েছে।

অপ্রয়োজনীয় খরচ বন্ধের সদিচ্ছা থেকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বিশ্বাস করা শক্ত হলেও আমরা আশা করি সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও এর প্রভাব বিস্তৃত হবে, যেখানে প্রায়শই কাজ শেষ করার সময়সীমা ও বাজেট কয়েকগুণ পর্যন্ত বাড়াতে হয়। এই বাড়তি খরচ শেষ পর্যন্ত জনগণকেই যোগাতে হয়।

ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাব এই সংকটের একটি মোক্ষম উদাহরণ। এই প্রকল্পের মেয়াদ আগামী জুনে শেষ হবে, অথচ আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রকল্পের কাজ শুরুই হয়নি।

এই সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই প্রকল্পের জন্য কর্মকর্তারা আরও ৪ বছর বাড়তি সময় এবং ৬৫১ কোটি ৭২ লাখ টাকা খরচ বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রস্তাব পাস হলে প্রকল্পের খরচ বেড়ে দাঁড়াবে ১৭ হাজার ৫৫৩ কোটি ৪ লাখ টাকা।

এই প্রকল্পের খরচের বড় একটি অংশ আসছে ২০১৬ সালে চীনের প্রতিশ্রুত ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ থেকে। সেই সময় বাংলাদেশে ২৭টি প্রকল্পে অর্থায়নের নিশ্চয়তা দিয়েছিল চীন।

কিন্তু, এই প্রকল্পগুলো কতটা দ্রুততা ও দক্ষতার সঙ্গে বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করতে পারবে? বাংলাদেশ কি তার বৈদেশিক ঋণ সময়মতো পরিশোধ করতে পারবে? আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান ২ খাত—তৈরি পোশাক ও রেমিট্যান্স—কি সম্ভাব্য ঋণ সংকট থেকে আমাদের রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট?

সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন দুর্গতি আমাদের অর্থনীতিকে যে ক্ষতিগ্রস্ত করছে তা তেমনভাবে স্বীকারই করা হয় না। এই সমস্যার উৎস বিদেশ নয়। ফল হিসেবে, এই সমস্যার সমাধান না করে কৃচ্ছ্রতা সাধনের সিদ্ধান্ত দীর্ঘমেয়াদে ফলপ্রসূ হবে না।

দুঃখজনক হলেও সত্য, সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা বছরের পর বছর ধরে বাড়ানোর জন্য অজুহাতের কখনো অভাব হয় না। ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ক্ষেত্রে চীনা ঋণ নিয়ে বিলম্ব প্রধান কারণ।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সতর্ক না হলে শিগগির তা অন্যান্য প্রকল্পগুলোর মতো—সমন্বয়হীনতা, অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি—সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়তে পারে। এভাবে বিপুল অর্থ অপচয়ে আমাদের অর্থনীতি একধাপ এগোলো ২ ধাপ পিছিয়ে পড়বে।

Comments

The Daily Star  | English

Palak admits shutting down internet deliberately on Hasina's order

His testimony was recorded by the International Crime Tribunal's investigation agency following a questioning session held yesterday

18m ago