হারের শঙ্কায় বাংলাদেশ
ক্যারিয়ারে প্রথম জোড়া শূন্য নিয়ে ফিরলেন তামিম ইকবাল। জোড়া শূন্য পেতে পারতেন আরেক ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়ও। তাতে যেন প্রথম ইনিংসের সেই ভয়ঙ্কর সূচনার শঙ্কা পেয়ে বসে টাইগারদের। শেষ পর্যন্ত ততোটা না হলেও যা হয়েছে তাতে বড় অস্বস্তিতে পড়েছে বাংলাদেশ। সিরিজ হারের শঙ্কায় পড়েছে স্বাগতিকরা।
বৃহস্পতিবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেটে ৩৪ রান করে দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ। মুশফিকুর রহিম ১৪ ও লিটন দাস ১ রানে ব্যাট করছেন। এখনও ১০৭ রানে পিছিয়ে আছে তারা। এর আগে শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংস শেষ হয় ৫০৬ রানে।
এদিন ১৩ ওভার ব্যাট করার সুযোগ পায় বাংলাদেশ। আর উইকেট হারাতে পারতো দ্বিতীয় ওভারেই। জয় ফিরতে পারতেন খালি হাতেই। আসিথা ফার্নান্ডোর বলে ব্যাটের কানা ছুঁয়ে গিয়েছিল তার। কিন্তু বুঝতেই পারেননি ফিল্ডাররা। তাতে বেঁচে যান এ ওপেনার। এরপর ব্যক্তিগত ৯ রানেও পেলেন জীবন। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। আর ৬ রান করার পর তাকে ঠিকই থামিয়েছেন সেই ফার্নান্ডো। আনাড়ির মতো ব্যাট চালিয়ে স্লিপে কুশল মেন্ডিসের ক্যাচে পরিণত হয়েছেন এ ওপেনার।
এর আগে ক্যারিয়ারের প্রথম 'পেয়ার' নিয়ে মাঠ ছাড়েন তামিম। ফার্নান্ডোর বলে রক্ষণাত্মক ঢঙ্গে খেলতে চেয়েছিলেন। তবে ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় স্লিপে। নাজমুল হোসেন শান্ত রানআউটে কাটা পড়েছেন নিজের দোষেই। নিজেই কল দিয়ে দুই দুই বার থামলেন রান নিতে গিয়ে। তৃতীয়বারে দিলেন দৌড়। ফলাফল যা হওয়ার তাই হলো। জয়াবিক্রমের সরাসরি থ্রোতে স্টাম্প ভাঙলে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে।
আর ব্যর্থতার বৃত্তে আবদ্ধ মুমিনুল হক তো দলকে ঠেলে দেন আরও বিপদের মধ্যে। অফ স্টাম্পের বাইরে রাখা কাসুন রাজিথার ফুল লেংথ বলে ড্রাইভ করতে যান মুমিনুল। এমন পরিস্থিতিতে চাইলেই ছেড়ে দিতে পারতেন। তবে কিপারের গ্লাভসে যাওয়ার আগে গেল আলতো চুমু খেয়ে। যদিও লঙ্কানদের জোরালো আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। তবে রিভিউ নিয়ে তাকে ফেরায় সফরকারীরা।
২৩ রানে ৪ উইকেট হারানো বাংলাদেশ তখন রীতিমতো যেন কাঁপছিল। তাই সাকিব আল হাসানকে থামিয়ে ব্যাটিং অর্ডারে প্রোমোশন নিয়ে মাঠে নামেন লিটন। প্রথম ইনিংসে মুশফিকের সঙ্গে তার অসাধারণ জুটিই ম্যাচে রেখেছিল বাংলাদেশকে। এদিনও এমন কিছুর আশায় টাইগাররা। এখন পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন ১১ রানের জুটি গড়ে উইকেট আছেন এ দুই ব্যাটার। চট্টগ্রামে এ দুই ব্যাটার গড়েছিলেন ১৬৫ রানের জুটি। আর প্রথম ইনিংসে তাদের জুটিতে আসে ২৭২ রান।
এদিন সকালে আগের দিনের ৫ উইকেটে ২৮২ রান নিয়ে খেলতে নামে শ্রীলঙ্কা। শেষ পাঁচ উইকেট হারিয়ে যোগ করে ২২৪ রান। ফলে প্রথম ইনিংসে ১৪১ রানের লিড পেয়েছে তারা। দিনের প্রথম দুই সেশনে লঙ্কানদের তেমন কোনো ঝামেলা সৃষ্টি করতে পারেননি টাইগাররা। আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ ও দিনেশ চান্দিমাল খেলেছেন সাবলীলভাবে। দুইজনই তুলে নেন সেঞ্চুরি।
দিনের শেষ সেশনে অবশ্য ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। যার নেতৃত্ব দেন সাকিব ও ইবাদত হোসেন। দিনভর টাইগারদের ভোগানোর পর ইবাদতের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে কভারে তামিম ইকবালের হাতে ধরা পড়েন চান্দিমাল। ভাঙেন ১৯৯ রানের জুটি। তবে চান্দিমাল ঠিকই তুলে নেন তার ক্যারিয়ারের দ্বাদশ সেঞ্চুরি। যার পাঁচটিই আবার বাংলাদেশের বিপক্ষে। তবে চার বছর অপেক্ষার পর মিলে এ সেঞ্চুরি। ২১৯ বলে ১১ চার ও ১ ছক্কায় খেলেন ১২৪ রানের ইনিংস।
এরপর বাকি ব্যাটাররা আসা যাওয়ার মধ্যেই ছিলেন। তবে অপর প্রান্তে অপরাজিত থেকেই মাঠ ছেড়েছেন ম্যাথিউজ। টানা দুই টেস্টে সেঞ্চুরি পাওয়া এ ব্যাটার খেলেছেন ১৪৫ রানের ইনিংস। ৩৪২ বলে ২টি চার ও ২টি ছক্কায় এ রান করেন তিনি। অথচ এই সিরিজের আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে ছয় টেস্টে খেলেও কোনো সেঞ্চুরি ছিল না তার।
ক্যারিয়ারের আরও একটি ফাইফার পেয়েছেন সাকিব। ৯৬ রানের বিনিময়ে পান ৫ উইকেট। সুযোগ ছিল ইবাদতের সামনেও। দেশের মাটিতে ২০০৮ সালে শাহাদাত হোসেনের পর প্রথম পেসার হিসেবে ফাইফার পাওয়ার হাতছানি। তবে চার উইকেট নিয়ে থেমেছেন তিনি। সাকিবের দারুণ থ্রোয়ে আসিথা ফার্নান্ডো রানআউট হলে শেষ হয়ে যায় তার আশা।
Comments