বাংলাদেশ থেকে ডাক্তার, প্রকৌশলী ও নার্স নিতে চায় সার্বিয়া: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। ফাইল ছবি

কূটনৈতিক ও সরকারি পাসপোর্টধারীদের ভিসাবিহীন যাতায়াত এবং নিয়মিত ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) বিষয়ে ২টি সমঝোতা স্মারক সই করেছে বাংলাদেশ ও সার্বিয়া।

আজ বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও ঢাকা সফররত সার্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোলা সেলাকোভিচের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে ২ মন্ত্রী চুক্তি ২টি সই করেন।

চুক্তি শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন মোমেন ও সেলাকোভিচ। 

ড. মোমেন বলেন, 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সাবেক যুগোস্লাভিয়ার নেতা মার্শাল টিটোর সময়ে আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়। তাদের সঙ্গে আমাদের অকৃত্রিম সম্পর্ক ছিল। স্বাধীনতার স্বীকৃতিসহ জতিসংঘ সদস্যপদ পেতে তারা আমাদের পাশে ছিল। আমাদের মধ্যে যে সলিড সম্পর্ক সেটাকে নতুন করে বাড়াতে চাই। সেই সুযোগটা নিতে চাই। তারাও রাজি।'

সার্বিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'এখানে আসতে পেরে আমি খুব আনন্দিত। এটা আমার প্রথম সফর। এটা আমার জন্য ঐতিহাসিক সফর। কেন না, এ বছর আমরা সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্ণ করেছি। ৫০ বছর আগে আমাদের মধ্যে যে সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে, সেটাকে আরও বাড়াতে চাই। ২ দেশের মধ্যে কানেক্টিভিটি আরও বাড়াতে চাই। আমি আশা করছি, আমাদের সম্পর্ক আরও বাড়বে; শক্তিশালী হবে। আগামী ৫০ বছর আমাদের মধ্যে ভালো কিছু হবে, সেই অপেক্ষায় থাকতে চাই।' 

দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে মোমেন বলেন, আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য খুব কম। কীভাবে এটা বাড়ানো যায় সে বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। তারা বলেছেন, আমাদের দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াবেন। আমরাও বাড়াতে চাই। ২ দেশের বাণিজ্য ছাড়াও আমরা আলোচনা করেছি, বিনিয়োগ বাড়ানো নিয়ে। আমরা বিদেশি বিনিয়োগে নিরাপত্তা এবং দ্বৈত কর পরিহার নিয়ে আলাপ করেছি। এগুলো নিয়ে এমওইউ তৈরি করব, যাতে আমরা কাজ করতে পারি।

তিনি বলেন, 'দু'দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে চাই আমরা। উভয়পক্ষের চেম্বার অব কমার্স আসা-যাওয়া করবে। তারা ঠিক করবে কীভাবে ব্যবসা বাড়ানো যায়। সার্বিয়ার সঙ্গে অনেক দেশের মুক্ত বাণিজ্য রয়েছে। তাদের অর্থনীতি অনেক বড়। তাদের থেকে ট্যারিফ সুবিধা পাওয়া যাবে। সেখানে আমাদের জন্য বড় ধরনের সুবিধা রয়েছে। তা ছাড়া সার্বিয়া কাঠামোগত উন্নয়নে খুব দক্ষ। এ ক্ষেত্রে তাদের থেকে আমাদের সুবিধা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।'

ড. মোমেন বলেন, 'আমরা রাজনৈতিক কনসালটেশন ঠিক করেছি। আগামীতে আমরা বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলাপ করব। যেভাবে আমরা ভারতের সঙ্গে জেসিসি করি। সার্বিয়ার সঙ্গেও ওই ধরনের করতে চাই। আমরা মিউচুয়াল ইস্টারস্টেট নিয়ে আলাপ করেছি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে আমরা একসঙ্গে কাজ করি এবং নতুন কয়েকটি ক্ষেত্রে আমরা একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেছি। যেমন- আমরা মানবাধিকার কমিশনের সদস্য হতে চাই। তারা সেখানে আমাদের সহায়তা করবে।'

সার্বিয়া বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানান মোমেন। তিনি বলেন, 'তারা আমাদের লেবার ফোর্স নিয়ে খুশি। তাদের যেসব কোম্পানি আমাদের লেবার নিয়োগ করেছে, তাদের সার্ভিস নিয়ে তারা সন্তুষ্ট। তারা মনে করে, আমাদের এখান থেকে আরও কর্মী যাবার সুযোগ রয়েছে। তারা ডাক্তার, প্রকৌশলী, নার্স ও ইংরেজি শিক্ষক নিতে চায়।'

দেশটির বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার আগ্রহ থাকলেও ঢাকায় দূতাবাস না থাকায় সমস্যা হচ্ছে বলে জানান মোমেন। তিনি বলেন, 'সার্বিয়ার দূতাবাস এখানে না থাকায় সমস্যা হচ্ছে। তাদের দূতাবাস হচ্ছে নয়া দিল্লিতে। আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি, কীভাবে তাদের সহজে ভিসা দেওয়া যায়। এ নিয়ে আমরা আলাপ করেছি।'

মোমেন বলেন, 'তারা আমাদের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিচ্ছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় মাত্র দু'জন আবেদন করেছেন। তারা চায়, আমাদের শিক্ষার্থীরা বৃত্তি নিয়ে যাক।'

বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে সেলাকোভিচ বলেন, 'আমাদের মধ্যে খুব ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। আমরা আজ গুরত্বপূর্ণ দুটো বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই করেছি। উভয়পক্ষ ব্যবাসীদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে রাজি হয়েছে। দুদেশের চেম্বার অব কমার্সের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনে আমরা একমত হয়েছি।'

বাংলাদেশ বিশাল জনশক্তির সম্ভবনাকে কাজে লাগাতে দেশটি অবদান রাখতে চায় বলে জানান সার্বিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ জনশক্তির সম্ভবনা অনেক। আমরা চাই, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা সার্বিয়ার বৃত্তি নিয়ে পড়তে যাক। ৫০ দেশের বেশি শিক্ষার্থী সার্বিয়ায় পড়তে আসে। আমরা চাই বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা আসুক।

মঙ্গলবার রাতে ২ দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন সার্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোলা সেলাকোভিচ। বৃহস্পতিবার রাতে বেলগ্রেডের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Beximco workers' protest turns violent in Gazipur

Demonstrators set fire to Grameen Fabrics factory, vehicles, vandalise property

30m ago