৫২ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে স্কুলে হামলায় নিহত অন্তত ২০০

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে একটি প্রাথমিক স্কুলে এক তরুণ বন্দুকধারীর গুলিতে ১৯ শিশু শিক্ষার্থী ও ২ জন শিক্ষক নিহত হয়েছেন। এই ঘটনাকে ১৯৭০ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলে হামলায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভয়ংকর ঘটনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

নিউইর্য়ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্কুলে ১৯৭০ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত হামলায় হামলাকারী ছাড়াই কমপক্ষে ২০০ জন নিহত হয়েছেন।

বার্তা সংস্থা এএফপি ১৯৯৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্কুলে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হামলার ঘটনার একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করেছে।

কলামবাইন হাই স্কুল (১৯৯৯)

কলামবাইন, কলোরাডোর ২ তরুণ বেশ কয়েক ধরনের মারণাস্ত্র ও হাতে তৈরি বোমা নিয়ে তাদের স্থানীয় হাই স্কুলে হামলা চালায়। ১৯৯৯ সালের ২০ এপ্রিলের সেই ভয়াবহ হামলায় ১২ শিক্ষার্থী ও ১ শিক্ষক নিহত হন। আরও ২৪ জন আহত হন।

যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে ভয়াবহ স্কুল সহিংসতার ঘটনার সাক্ষী হিসেবে কলামবাইনের নাম ইতিহাসের পাতায় স্থান পেয়েছে। এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো স্কুলে এটাই সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা।

ভার্জিনিয়া টেক (২০০৭)

ভার্জিনিয়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের এক দক্ষিণ কোরীয় ছাত্র স্কুলের ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর এলোপাতারি গুলি চালায়। নিজে আত্মহত্যা করার আগে সে ৩২ জন শিক্ষার্থী ও শিক্ষককে হত্যা করে। ভার্জিনিয়া রাজ্যের ব্ল্যাকবার্গ শহরে অবস্থিত ক্যাম্পাসের এই হামলায় আরও ৩৩ জন আহত হন।

হামলাকারী ব্যক্তি কলামবাইনের আক্রমণকারীদের বিশেষ শ্রদ্ধা করতেন বলে জানা যায়। হামলা চালানোর সময় তিনি পুলিশকে একটি ভিডিও পাঠান, যেখানে তিনি তাদেরকে 'শহীদ' হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং একটি ঘৃণাযুক্ত ম্যানিফেস্টোর বর্ণনা দেন।

স্যান্ডি হুক এলিমেন্টারি স্কুল (২০১২)

২০ বছর বয়সী আততায়ীর মানসিক রোগে ভোগার পূর্ব-ইতিহাস ছিল। তিনি কানেকটিকাটের নিউটাউনে প্রথমে তার মাকে হত্যা করেন। তারপর ১৪ ডিসেম্বর স্যান্ডি হুক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হামলা চালান।

৬ থেকে ৭ বছর বয়সী ২০টি শিশু এবং ৬ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে গুলি করে হত্যা করার পর হামলাকারী আত্মহত্যা করেন।

স্যান্ডি হুকের ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা বন্দুকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের জন্য অসংখ্যবার প্রচারণা চালিয়েছেন, কিন্তু তাদের এই উদ্যোগগুলো ব্যর্থ হয়েছে।

ইন্টারনেটে কিছু মানুষ ছড়িয়ে দেয়, এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সরকারের সাজানো। তারা দাবি করেন, গোলাগুলির ঘটনাটি মিথ্যা এবং এতে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ব্যবহার করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য, 'গান লবি' বা বন্দুকের ব্যবহারের স্বপক্ষে থাকা জনমতের অসম্মান করা।

মার্জোরি স্টোনম্যান ডগলাস হাই স্কুল (২০১৮)

ভালোবাসা দিবসে মার্জোরি স্টোনম্যান ডগলাস হাই স্কুলের ১৯ বছর বয়সী একজন সাবেক শিক্ষার্থী তার স্কুলে ফিরে এসে অতর্কিতে গুলিবর্ষণ করে। তাকে এর আগে শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ডে অবস্থিত স্কুলটি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।

১৪ ফেব্রুয়ারির সেই ভয়াবহ ঘটনায় তিনি ১৪ শিক্ষার্থী ও ৩ জন প্রাপ্তবয়স্ক কর্মীকে হত্যা করেন।

স্টোনম্যান ডগলাস স্কুলের শিক্ষার্থীরা বন্দুকের ব্যবহারে সহিংসতার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে। 'মার্চ ফর আওয়ার লাইভস (জীবনের জন্য এগিয়ে যাও)' স্লোগান নিয়ে তারা বন্দুকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর আইন প্রণয়নের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। একই সঙ্গে নিয়মিত বিক্ষোভ ও জনসভারও আয়োজন করেন তারা।

তাদের এই প্রচারণা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সাড়া ফেলেছে। হাজারো তরুণ মার্কিন নাগরিক তাদের সঙ্গে একাত্ম হয়েছেন।

সান্তা ফে হাই স্কুল (২০১৮)

টেক্সাসের সান্তা ফে নামের পল্লী অঞ্চলে এক ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থী শটগান ও রিভলভার নিয়ে তার সহপাঠীদের ওপর হামলা চালায়। ৮ শিক্ষার্থীসহ ১০ ব্যক্তি এ ঘটনায় নিহত হন।

১৮ মে সকালে স্কুল শুরুর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আততায়ী অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সেখানে হাজির হয় এবং গুলিবর্ষণ শুরু করে।

এ মর্মান্তিক ঘটনার পর টেক্সাসের তৎকালীন গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট ৪০টি সুপারিশ প্রকাশ করেন। এ সুপারিশগুলোতে মূলত স্কুল ক্যাম্পাসে অস্ত্রধারী নিরাপত্তা কর্মী বাড়ানোর কথা বলা হয়েছিল। এ ছাড়াও, আগে থেকে সমস্যাগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করার জন্য বাধ্যতামূলকভাবে মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিধি চালুর সুপারিশ করেন গভর্নর।

টেক্সাসের অনেক অধিবাসীদের জন্য ঐতিহাসিক ভাবে আগ্নেয়াস্ত্রের মালিক হওয়া একটি গর্বের বিষয়। এমন কী সান্তা ফে স্কুলের অনেক শিক্ষার্থীও মত প্রকাশ করেন, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বন্দুকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কোনো সম্পর্ক নেই।

Comments

The Daily Star  | English
India visa restrictions for Bangladeshi patients

A wake-up call for Bangladesh to reform its healthcare

India’s visa restrictions on Bangladeshi nationals, while initially perceived as a barrier, could serve as a wake-up call for Bangladesh to strengthen its healthcare system and regain the confidence of its patients.

12h ago