এসি ছাড়াই ঘর শীতল রাখার উপায়

গাছ রাখলে ঘর ঠাণ্ডা থাকে। ছবি: লিপি আহমেদ

গরমে শীতল হাওয়ার ছোঁয়া পেতে অনেকেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা এসি ব্যবহার করেন। তবে গরমের তীব্রতা দিন দিন বাড়তে থাকলেও অনেকের এসি কেনার সক্ষমতা নেই। অনেকেই আবার বিদ্যুৎ বিল, দুর্ঘটনার ঝুঁকি এমনকি পরিবেশের ক্ষতির বিষয়টি মাথায় রেখেও এসি ব্যবহার করেন না।

এসি ছাড়াই ঘর শীতল রাখার কয়েকটি উপায় সম্পর্কে জানা যাবে এই আলোচনায়।

প্রাচীন মিশরীয় পদ্ধতি

প্রাচীন মিশরীয়দের মধ্যে সাধারণ একটি নিয়ম ছিল শীতল জলাবদ্ধতা তৈরি করা। তারা জানালা-দরজায় বা রোদ প্রবেশের স্থানে ভেজা চট বা মাদুর রেখে দিত। রোদের তাপ ভেজা মাদুর বা ভেজা চটের পানি শুকিয়ে ঘরের ভেতরের তাপমাত্রা তেমন একটা বাড়ানোর সুযোগ পেতো না।

সিলিং ফ্যানের ঘূর্ণন

সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গ্রীষ্মকাল এবং শীতকালের একটি সম্পর্ক আছে। গ্রীষ্মকালে এমন ভাবে ফ্যান সেট করতে হবে যাতে সেটি ঘড়ির কাটার বিপরীত দিকে ঘুরে। আবার শীতকালে ফ্যান থাকা উচিত এমন ভাবে যাতে ফ্যানের পাখাগুলো ঘড়ির কাটার দিকে ঘুরতে পারে। গরমের সময় এমন ঘূর্ণনের ফলে ফ্যান গরম বাতাস দ্রুত অপসারণ করতে পারে।

ডাবল গ্লাসযুক্ত জানালার ব্যবহার

কাঁচের ২ স্তর বিশিষ্ট প্যানেলকেই সাধারণত ডাবল গ্লাসযুক্ত জানালা বলা হয়। ডাবল গ্লাসযুক্ত জানালার কাঁচের স্তর ৩ থেকে ১০ মিলিমিটার পুরু হয়ে থাকে। এসব কাঁচের মধ্যকার জায়গা গ্যাস দিয়ে পূর্ণ করা হয় এবং গ্যাস যেন বেড়িয়ে যেতে না পারে তাই সিল করে দেওয়া হয়।

কাঁচের ২ স্তরের মধ্যে শূন্যস্থান সিল করা থাকে বলে ডাবল গ্লাসযুক্ত জানালা সাধারণ জানালার থেকে অনেক ভাল তাপ নিরোধক হিসেবে কাজ করে। গ্রীষ্ম ও শীতকালের চরম তাপমাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। গ্রীষ্মের গরম দিনে, ডাবল গ্লাসযুক্ত জানালা আপনাকে রক্ষা করবে প্রচণ্ড তাপ থেকে। শীতকালে এই জানালা বাইরে থেকে শীতকে ঘরের ভেতর ঢুকতে বাধা দেবে। আবহাওয়া যাই হোক না কেন, বাড়ি বা অফিসে ডাবল গ্লাসযুক্ত জানালা ঘরের ভেতরে আরামদায়ক পরিস্থিতি নিশ্চিত করে।

জানালার পাল্লা কাঁচের হলে গরম বেশি অনুভূত হয়। কারণ কাঁচের মধ্যে দিয়ে সূর্যের তাপ দ্রুত শোষণ হয় এবং ঘরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

এক্ষেত্রে যেসব জানালায় সরাসরি সূর্যের আলো পড়ে সেসব জানালায় হিট প্রটেক্টিং উইন্ডো ফিল্ম লাগানো যেতে পারে। যার ফলে জানালার ভেতর দিয়ে সূর্যের তাপ শোষণ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায় এবং ঘর ঠাণ্ডা থাকে। এছাড়াও সাদা কাগজ, সাদা হার্ডবোর্ড, জানলার পাল্লার বাহিরের দিকে লাগালে সাদা রং প্রায় সব শক্তিই বিকিরণ করবে বাইরের দিকে। ঘরে খুব কম তাপ প্রবেশ করবে।

মোটা এবং গাঢ় রঙের পর্দা ব্যবহার

বাজারে বাহারি ধরনের পর্দা থাকলেও গরম কমাতে চাইলে মোটা কাপড়ের এবং গাঢ় রঙ যেমন কালো, বেগুনী, নীল, খয়েরী এমন রঙগুলো বাছাই করতে পারেন। কারণ এগুলোর তাপ শোষণ ক্ষমতা বেশি, তাপ বিকিরণ ক্ষমতা কম থাকে৷

তাপ প্রবেশ রোধ করা

জানালার মাধ্যমে প্রায় ২৫ শতাংশ তাপ ঘরে প্রবেশ করতে পারে। ঘর ঠাণ্ডা রাখতে দিনের বেলা বা দিনের যে সময় সবচেয়ে বেশি রোদ্রৌজ্জ্বল থাকে তখন তাপ প্রবেশ করার পথ বন্ধ করে দিলে উত্তাপ কম থাকবে।

রাতে ঘরে বাতাস প্রবেশ করতে দেওয়া

রাতে ঘুমাবার আগে জানালা খুলে শীতল বাতাস প্রবেশ করতে দিতে হবে। এতে করে ভেতরের গরম বাতাস বাইরে বের হয়ে ঘরকে শীতল করবে। দিনের বেলা নতুন ভাবে রোদ না ঢুকলে এই শীতল বাতাস প্রশান্তি দেবে।

অপ্রয়োজনে বৈদ্যুতিক যন্ত্র বন্ধ রাখা

যেকোনো সক্রিয় ডিভাইস চালু থাকলে তা নির্দিষ্ট কাজের পাশাপাশি কিছু শক্তি তাপ উৎপাদনে ব্যয় করে। এতে ঘর গরম হয়। তাই অব্যবহৃত যে কোনো কিছু বন্ধ করা উচিত। কম্পিউটার, টেলিভিশন, ওভেন, কিংবা এমন ডিভাইস যা প্রচুর তাপ উৎপন্ন করে তা বন্ধ রাখতে হবে। ঘরে ব্যবহৃত বাল্বগুলোও তাপের উৎস। তাই সব লাইট বন্ধ করা সবসময় সম্ভব না হলেও আলো যতটা সম্ভব কম রাখতে পারেন।

বরফ পদ্ধতি

এটি ঘর ঠাণ্ডা রাখার জনপ্রিয় এবং প্রচলিত পদ্ধতি। ফ্যানের নিচে বাটিতে বরফের টুকরা রাখলে এটি গরম তাপ শুষে নিয়ে গলতে শুরু করবে। এতে ঘর ঠাণ্ডা রাখা যায়।

উত্তাপ কমাতে গাছ রাখা

বেশ কিছু গাছ আছে যা তাপমাত্রা ঠাণ্ডা রাখতে সক্ষম। যেমন, অ্যালোভেরা, অ্যারিকা পাম, গোল্ডেন পোথোস বা সাদা-সবুজ মিশেলের মানি প্ল্যান্ট, স্নেক প্ল্যান্ট বা ফণিমনসা, ফার্ন ইত্যাদি। এছাড়াও আইভি, দ্রুত বর্ধনশীল লতা এবং আলংকারিক গৃহস্থালির উদ্ভিদ দেয়াল বা জানালায় ব্যবহার করা যেতে পারে। সৌন্দর্য বর্ধনের পাশাপাশি তাপ আর রোদ প্রবেশ নিরোধক হিসেবেও এটি কাজ করবে।

বেড়েই চলছে বৈশ্বিক তাপমাত্রা, যার প্রভাব কোনো দেশই এড়াতে সক্ষম নয়। আমাদের দেশও এর ব্যতিক্রম নয়। গরমের এই দুর্বিষহ জীবনযাত্রায় পুরোপুরি শান্তি না মিললেও স্বস্তি পেতে উপরের যে কোনো পদ্ধতি প্রয়োগে ঘরের কিংবা কাজের পরিবেশ ঠাণ্ডা রাখতে পারেন।

 

 

 

 

Comments

The Daily Star  | English

What if the US election ends in a Trump-Harris tie?

While not highly likely, such an outcome remains possible, tormenting Americans already perched painfully on the edge of their seats ahead of the November 5 election

3h ago