বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ দূর করুন

বন্যায় আশ্রয়ের খোঁজে সিলেট নগরের কাষ্টঘর এলাকার এক পরিবার। ছবি: শেখ নাসির/স্টার

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, কারণ উজান থেকে আসা পানি এবং ভারী বর্ষণের ফলে অনেক গ্রাম ও শহরে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিলেট ও সুনামগঞ্জ। সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি এক সপ্তাহ ধরে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই অঞ্চল থেকে যেসব খবর পাওয়া যাচ্ছে তাতে একটি ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। বিপুল সংখ্যক রাস্তা, বাড়িঘর এবং ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। মানুষ বন্যার পানিতে আটকা পড়ছেন অথবা বন্যা কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছেন। খাদ্য এবং অন্যান্য মৌলিক প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অভাব তৈরি হয়েছে। এলাকার স্কুলগুলো হয় বন্ধ বা আশ্রয়কেন্দ্রে রূপান্তরিত করা হয়েছে। অনেক বন্যা কবলিত এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। এই পরিস্থিতিতে মানুষ অবর্ণনীয় কষ্টে আছেন।

এটি একটি আপৎকালীন অবস্থা যা প্রাকৃতিক এবং মনুষ্যসৃষ্ট উভয় কারণেই আরও খারাপ হয়েছে। পুকুর, খাল এবং হাওর, যেগুলো একসময় এই অঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত ছিল এবং বন্যার সময় অতিরিক্ত পানির জলাধার হিসেবে কাজ করত, গত কয়েক দশকে সেগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেছে। অবিবেচনাপ্রসূত উন্নয়ন, নগরায়ন এবং ত্রুটিপূর্ণ সরকারি নীতির জন্য এমনটা হয়েছে। ওই এলাকায় অনেক নদ-নদীও দখল করা হয়েছে এবং এর ফলে গ্রীষ্মকালে এগুলো শুকিয়ে যায় এবং স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি বৃষ্টি হলেই উপচে পড়ে। বুধবার সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন নদীগুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ড্রেজিং করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নিয়ে অতীত অভিজ্ঞতা থেকে এ ব্যাপারে আশ্বস্ত হওয়া যাচ্ছে না।

আমরা আশা করি, আরও ভালোভাবে বন্যা মোকাবিলায় সব কর্তৃপক্ষ সমন্বিতভাবে কাজ করবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘন ঘন বন্যা আরও তীব্র আকার ধারণ করছে। তবে এই মুহূর্তে চ্যালেঞ্জ হলো ত্রাণ ও ওষুধ সরবরাহ করা এবং বন্যা কবলিত এলাকায় জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করা। বন্যায় সিলেট শহরসহ প্রায় ১৩টি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র প্লাবিত হয়ে প্রায় দেড় লাখ মানুষ অন্ধকারে বসবাস করছেন। প্রায় ৬৭৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা যদিও এর আগে বলেছিলেন যে, বাজারে পর্যাপ্ত খাদ্য এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের সরবরাহ রয়েছে, তবে অনেক দোকান এবং গুদাম পানির নিচে চলে যাওয়ায় সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। এর ফলে সেখানে শিগগির খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। প্রত্যন্ত গ্রামগুলোর অবস্থা আরও ভয়াবহ বলে জানা গেছে।

আমরা তাই বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারকে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাই। বন্যার পানি শিগগির স্বয়ংক্রিয়ভাবে কমে যাবে বলে আশা করাই যথেষ্ট নয়, যেমনটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন। আমাদের যা দরকার তা হলো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ, যাতে করে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে অবিলম্বে সাহায্য পৌঁছানো যায়। ত্রাণ ও চিকিৎসা দলগুলোর জন্য পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পাঠানো এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিদ্যুৎ চালু করা প্রয়োজন। দীর্ঘমেয়াদে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্যও সরকারের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

Comments

The Daily Star  | English

Armed goons attempt robbery in Keraniganj bank

Locals, law enforcement lock robbers inside as police try to defuse situation

36m ago