‘ক্লিন ইমেজের’ প্রার্থীরা কোথায়?

আসন্ন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত। ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো 'ক্লিন ইমেজের' প্রার্থীদের মনোনয়ন দেবে, এটা সম্ভবত আমাদের অতিরিক্ত চাওয়া। অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, একবার নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতার স্বাদ পাওয়ার পর কেউ আগের 'ক্লিন ইমেজ' ধরে থাকতে পারবেন, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তবুও 'ক্লিন ইমেজের' প্রার্থী সাধারণত জয়ের পথে নিজে যেমন এগিয়ে থাকেন, তেমনি দলকেও এগিয়ে রাখেন।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও জনগণের স্বার্থের কথা উল্লেখ করে এ বিষয়ে বিভিন্ন সময় ইঙ্গিত দিয়েছে। কিন্তু, আসন্ন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর 'ইমেজ' নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। এতে দলটি আসলেই প্রার্থীর ইমেজ নিয়ে ভাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কুমিল্লায় মাদক চোরাকারবারিদের ১৬ পৃষ্ঠপোষকের তালিকায় প্রথম নামটিই আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের।

কেন বা কীভাবে এমন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়, তা আমাদের বোধগম্য নয়। মনোনয়ন দেওয়ার আগে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় কি করে পার পেলেন তিনি? দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ কি প্রার্থীদের অতীত রেকর্ড খতিয়ে দেখেননি? আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এক বৈঠকে আরফানুল হকের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয় বলে জানা গেছে।

যে তালিকায় তার নাম এসেছিল তার সত্যতা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় মাদক চোরাকারবারি, তাদের পৃষ্ঠপোষক ও তাদের সঙ্গে জড়িত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চিহ্নিত করতে দেশব্যাপী অভিযানের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (পিএমও) তালিকাটি তৈরি করেছিল।

২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চট্টগ্রাম বিভাগের তালিকাসহ একটি চিঠি পাঠিয়েছিল। চিঠিতে যাচাই-বাছাইয়ের পর তালিকাভুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছিল।

কুমিল্লা জেলা যুবলীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আরফানুল হক রিফাত কুমিল্লা-৬ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যের ঘনিষ্ঠজন বলে জানা গেছে। পেছনে এমন শক্তিশালী সমর্থন থাকলে এবং যেখানে নির্বাচনের পরিবেশ রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার সুযোগ আছে, সেখানে তার মনোনয়ন পাওয়ায় হয়তো অবাক হওয়ার কিছু নেই।

যেখানে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না, সেখানে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ছাড়া তাকে কে রুখবে?

অথচ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দায়িত্ব ছিল অপরাধের রেকর্ড নেই, এমন প্রার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। কিন্তু, রিফাতের মতো প্রার্থীদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ করে দেওয়া হলে বা তারা নির্বাচিত হলে তা একদিকে ইসির জন্য যেমন অস্বস্তিকর, তেমনি এতে যে জনগণের পরাজয় হয় তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

আসন্ন কুমিল্লা সিটি নির্বাচন নতুন ইসির আয়োজনে প্রথম নির্বাচন। তাই প্রার্থী বাছাই থেকে শুরু করে নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ পুরো নির্বাচনী কার্যক্রম কীভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে, সেদিকে সবার দৃষ্টি থাকবে।

আমরা আশা করি, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে যা যা দরকার ইসি তা-ই করবে। একইসঙ্গে এটাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ যে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ওপর জনগণের আস্থা তৈরিতে ক্ষমতাসীন দলকেও অবশ্যই যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রশ্নবিদ্ধ প্রার্থীকে মনোনয়ন না দেওয়া থেকে শুরু করে নির্বাচনকে কলুষিত করে এমন সব কিছুই এড়িয়ে যাওয়া উচিৎ।

Comments

The Daily Star  | English

The silent emergency: Politicisation of our healthcare sector

The erosion of trust in doctors is creating crisis for the healthcare sector.

6h ago