বৈশ্বিক কার্বন বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে চট্টগ্রাম: গবেষণা

গ্রাফিক্স: সুস্মিতা এস পৃথা

বাংলাদেশে প্রস্তাবিত জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই চট্টগ্রাম বিভাগে হওয়ার কারণে সেখানে বিশ্বের বৃহত্তম কার্বন বিপর্যয়ের ঝুঁকি রয়েছে বলে জানানো হয়েছে এক যৌথ গবেষণা প্রতিবেদনে। 

আজ সোমবার মার্কেট ফোর্সেস, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ 'চট্রগ্রাম অঞ্চলে জ্বালানি পরিকল্পনা: সম্ভাব্য কার্বন বিপর্যয়' শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জীবাশ্ম জ্বালানী প্রকল্পের এই বিশাল সম্প্রসারণ প্রধানত জাপান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে নির্মিত বা অর্থায়ন করা হবে। 

চট্টগ্রামের প্রস্তাবিত ২০ গিগাওয়াট নতুন কয়লা ও গ্যাস বিদ্যুৎ ক্ষমতার বিরূপ প্রভাবের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। যার মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর কর্মক্ষম জীবনকালে বায়ুমণ্ডলে ১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন টন পরিমাণে কার্বন-ডাই অক্সাইড যোগ হবে। 

অনুমান করা হয়েছে, বিশাল নির্মাণ প্রকল্পগুলো স্থানীয় বাস্তুবিদ্যা, জলপথ, সম্প্রদায়, জীবিকা, স্বাস্থ্য, সেই সঙ্গে জলবায়ুর জন্য বিপর্যয়কর পরিণতি ঘটাবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাতারবাড়ি-২, জাপানি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিকল্পিত একটি ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র। যা যুক্তিযুক্তভাবে সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনা। মাতারবাড়ি-১ ও ২ যদি নির্মিত হয়, তাহলে এই প্রকল্পগুলোর বায়ু দূষণের পলে স্বাস্থ্যগত প্রভাবগুলো তাদের কর্মক্ষম বছরগুলোতে আনুমানিক ৬ হাজার ৭০০ জনের অকাল মৃত্যু ঘটাবে। এই প্রকল্পটি বিদেশি কয়লা অর্থায়ন বন্ধ করার জন্য জাপানের ২০২১ সালের জি৭ প্রতিশ্রুতিরও বিরোধিতা করে। 

চট্টগ্রামে প্রকল্পের মূল উদ্যোক্তা, মিতসুবিশি করপোরেশন, জেরা-এর মালিক টেপকো এবং চুবু, সেই সঙ্গে এসএমবিসি গ্রুপ, সবাই সামনের সপ্তাহগুলোতে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে তাদের নেট জিরো অঙ্গীকারের সঙ্গে এই ধরনের কার্বনঘন প্রকল্পগুলোর সামঞ্জস্যতা সম্পর্কে প্রকাশের দাবির সম্মুখীন হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।  

এ ছাড়া ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে প্রস্তাবিত এলএনজি থেকে বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর জন্য প্রতি গিগাওয়াটে গড়ে ৯৬০ মিলিয়ন ডলার খরচ হবে এবং সেটা শুধু চট্টগ্রামের জন্য ১৬ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছাবে। যা প্রতিকূল প্রভাবগুলো প্রশমিত করার জন্য বাংলাদেশের ২০২২ সালের জলবায়ু পরিবর্তনের বাজেটের চেয়ে ৬ গুণ বেশি।

বাংলাদেশে ইতোমধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য ওভার ক্যাপাসিটির সমস্যা রয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০-২০২১ সালে স্থাপন করা সক্ষমতার প্রায় ৬০ শতাংশ ব্যবহার করা হয়নি। ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিক্স অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস (আইইইএফএ) অনুসারে, গত কয়েক বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা এবং প্রকৃত চাহিদার মধ্যে ব্যবধান ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে, উদপাদন ক্ষমতার ব্যবহার পরবর্তী ৫ বছরে ৪০ শতাংশের নিচে নেমে যাওয়ার ধারণা করা হয়েছে।

এ ছাড়া কম চাহিদা এবং ট্রান্সমিশন অবকাঠামো নির্মাণে বিলম্বের কারণে বাংলাদেশ সরকার ২০২১ সালে কম ব্যবহারযোগ্য বিদ্যুতের উদপাদন ক্ষমতার জন্য কোম্পানিগুলিকে ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন প্রদান করেছে। উদাহরণস্বরূপ, নতুন পায়রা কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কয়েক মাস ধরে পূর্ণ ক্ষমতায় কাজ করেনি। এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর পর থেকে জুন ২০২১ পর্যন্ত অলস বসে থাকার জন্য এর মালিকরা প্রায় ১১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পেয়েছেন। 

প্রকৃতপক্ষে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে (বিপিডিবি) বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদকদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ের মারাত্মক ব্যয়ের জন্য মূল্য বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছে, যা বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের কাছে বাংলাদেশের অতিরিক্ত উৎপাদন ক্ষমতা সংকটের আর্থিক বোঝা স্থানান্তরিত করে। 

আইইইএফএ'র মতে, বাংলাদেশের অর্থনীতি আমদানি করা জ্বালানি থেকে একটি অস্থিতিশীল মূল্যের বাজারে উন্মোচিত হবে। যদি এই প্রকল্পগুলো এগিয়ে যায়, তাহলে বাংলাদেশের জনগণ আর্থিক ঝুঁকির মুখে পড়তে বাধ্য হবে, যেটা বিদেশি বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদকদের বহন করা উচিত ছিল।

Comments

The Daily Star  | English

Climate finance: $250b a year needed

COP29 draft deal says rich nations should pay the amount to fight climate change

1h ago