সিঙ্গাপুরের কথা বলে উড়োজাহাজে তোলা হয় জুয়েলকে, নেমে দেখেন চট্টগ্রাম

সিঙ্গাপুরের কথা বলে উড়োজাহাজে তোলা হয় জুয়েলকে, নেমে দেখেন চট্টগ্রাম
মো. জুয়েল। ছবি: সংগৃহীত

পরিবারের অভাব দূর করতে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের মো. জুয়েল (২৫) সিঙ্গাপুর যাওয়ার কথা। এজন্য চুক্তি হওয়ার পর ৪ লাখ টাকাও দিয়েছেন তিনি। সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে ঢাকার হয়রত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড়োজাহাজে ওঠেন। কিন্তু, উড়োজাহাজ থেকে নেমে জুয়েল দেখেন তিনি চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আছেন।

সিঙ্গাপুর নেওয়ার কথা বলে তার ফুফু আলেয়া বেগম প্রতারণা করে ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে জুয়েলের পরিবার। এ ঘটনার পর থেকেই আলেয়া বেগম ও তার ছেলে আওলাদ হোসেনসহ অন্য স্বজনরা আত্মগোপনে আছেন।

এদিকে জুয়েলের বাবা শহীজল মাঝি বাদী হয়ে গত ৯ মে আলেয়াসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে লক্ষ্মীপুর জেলা জজ আদালতে মামলা করেছেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী মুনসুর আহমেদ দুলাল দ্য ডেইলি স্টারকে মামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এই আইনজীবী জানান, মামলাটি আদালতের বিচারক আমলে নিয়েছেন। আদালত মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নোয়াখালী কার্যালয়কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি আরও জানান, মামলার আসামি আলেয়া ভোলা জেলার বোরহান উদ্দিন কুদবা গ্রামের বাসিন্দা। অন্য আসামিরা হলেন- আওলাদ, আওলাদের স্ত্রী আয়েশা আক্তার, তার শ্যালক সানী, দুলাভাই শামীম হোসেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, প্রায় ৩০ বছর পর আলেয়া ৬ মাস আগে চরমার্টিনে ভাই শহীজলের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। এর আগে, বাবার মৃত্যুর খবর পেলেও তিনি আসেননি। আলেয়া যাওয়ার কিছু দিন পর তার ছেলে আওলাদ ওই বাড়িতে বেড়াতে যান। তখন শহীজল জানতে পারেন, আওলাদ পারিবারিক কলহের জের ধরে স্ত্রীকে তালাক দেন। এতে বোনের আবদারে শহীজল পাত্রী দেখে লক্ষ্মীপুরেই তাকে দ্বিতীয় বিয়ে করান। একপর্যায়ে আলেয়া জানায়, আওলাদের প্রথম শ্বশুর তাকে সিঙ্গাপুরের একটি ভিসা দিয়েছে। ২-৩ দিনের মধ্যেই তাকে সিঙ্গাপুর যেতে হবে। তা না হলে ভিসা বাতিল হয়ে যাবে। এজন্য দ্বিতীয় শ্বশুরের কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা নিয়ে দিতে হবে। শ্বশুর বাড়ি থেকে টাকা নেওয়ার পরদিন সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে আওলাদ মামার বাড়ি থেকে বের হন। এর একদিন পরই অনলাইনের একটি নম্বর দিয়ে শহীজলের ফোনে কল দিয়ে আওলাদ সিঙ্গাপুর পৌঁছেছে বলে জানায়। এসময় মামাতো ভাই জুয়েলকেও সিঙ্গাপুর নেওয়ার জন্য বলে। এতে আলেয়া তার ভাই শহীজলের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা দাবি করেন। পরে ৯ লাখ টাকায় সমঝোতা হয়। তারা শহীজলকে ৫ লাখ টাকা দিতে বলেন। বাকি টাকা আলেয়া নিজে দেবে বলে জানান। অনলাইন থেকে বিদেশি ফোন নাম্বার দিয়ে প্রায়ই শহীজলের কাছে কল দিতেন আওলাদ। এতে শহীজল মাঝি স্থানীয় এনজিও, ৩ মেয়ের জামাতাদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ৪ লাখ টাকা সংগ্রহ করেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, ২৮ এপ্রিল বাড়ি থেকে টাকাসহ ছেলে-বোনকে নিয়ে শহীজল রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পৌঁছান। সেখানে আলেয়ার কথায় সানি নামের এক ব্যক্তিকে ৪ লাখ টাকা দেন। পরে জুয়েলের হাতে টিকিট ধরিয়ে দিয়ে দ্রুত বিমানে উঠতে বলেন। বিমান বন্দরের ২টি গেট পার হয়ে জুয়েল তার ফুফাতো ভাই আওলাদকে দেখতে পান। এতে তিনি একটু অবাক হন। এরপর আওলাদ তাকে ভয় দেখিয়ে বিমানে উঠতে বলে নিজেও বিমানে ওঠেন। পরে বিমানটি চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখানে শামীম নামের এক ব্যক্তি তাদের নিয়ে একটি আবাসিক হোটেলে ওঠেন। একপর্যায়ে তারা জুয়েলকে অস্ত্র দেখিয়ে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে তাদের কথামতো চলার নির্দেশ দেন।

প্রতারণার শিকার মো. জুয়েল বলেন, 'অস্ত্র ঠেকিয়ে আওলাদ ও শামীম আমার বাবাকে ফোন দিয়ে আমাকে ধরিয়ে দেন। তারা আমাকে সিঙ্গাপুরের পরিচয়পত্রের জন্য ফুফুর কাছে আরও দেড় লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলতে বলে। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে অন্য এক ব্যক্তির ফোন থেকে বাবাকে কল করে আমি ঘটনা জানাই। এরপর বাসে করে তারা আমাকে ঢাকার সায়েদাবাদ এলাকায় নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে গেছে।'

শহীজলের ছোট ভাই মাহে আলম বলেন, 'সিঙ্গাপুরের যাওয়ার জন্য শহীজল বোনের হাতে ৪ লাখ টাকা তুলে দেয়। ঋণের টাকা পরিশোধের চিন্তায় আমরা দিশেহারা। প্রতারক স্বজনদের এখন কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।'

জুয়েলের বাবা শহীজল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতারণা ফাঁদে পড়ে আমি এখন নিঃস্ব। টাকা ধার নেওয়ায় আমার ছোট মেয়ে নাছরিনকে শ্বশুরবাড়ি থেকে আমাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্য ২ মেয়ে-জামাইও টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে।'

তবে, প্রতারক চক্র পলাতক তাকায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে পিবিআই নোয়াখালী কার্যালয়ের পুলিশ পরিদর্শক সিরাজুল মোস্তফার বলেন, 'লক্ষ্মীপুর থেকে এ সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র এখনো এসে পৌঁছেনি।'

Comments

The Daily Star  | English

Govt publishes gazette of 1,558 injured July fighters

Of them, 210 have been enlisted in the critically injured "B" category, while the rest fall under the "C" category of injured fighters

5h ago