পি কে হালদার ‘শিবশঙ্কর’ পরিচয়ে ভারতে ছিলেন

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের সরকারি পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে 'শিবশঙ্কর হালদার' পরিচয়ে পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান করছিলেন পি কে হালদার।

আজ শনিবার ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য জানায়।

কয়েক কোটি টাকার আর্থিক জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনা করা হয় বলে জানায় ইডি।

কলকাতায় বাংলাদেশ উপদূতাবাস সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেন, আজ দুপুরে পশ্চিমবঙ্গের অশোকনগর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ইডি জানিয়েছে, তারা ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের মধ্যে পি কে হালদারসহ ৩ জন বাংলাদেশি। পশ্চিমবঙ্গে পি কে হালদারের সহযোগীদের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন জায়গাতেও এই অভিযান চালানো হয়।

ইডি জানিয়েছে, পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে ভারত ও অন্যান্য দেশে পাচার করার অভিযোগ রয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গ থেকে রেশন কার্ড, ভারতীয় ভোটার আইডি কার্ড, স্থায়ী অ্যাকাউন্ট নম্বর ও আধার কার্ডের মতো বিভিন্ন সরকারি পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছেন পি কে হালদার। তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে এসব পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে শিবশঙ্কর হালদার নামে নিজেকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান করছিলেন বলে এক বিবৃতিতে জানায় ইডি।

তার অন্যান্য সহযোগীরাও একই কাজ করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে।

ইডি নিশ্চিত করেছে যে, এই বাংলাদেশি নাগরিকরা জালিয়াতির মাধ্যমে প্রাপ্ত পরিচয়ের ভিত্তিতে ভারতে প্রতিষ্ঠান খুলেছে এবং কলকাতার অভিজাত এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিও কিনেছে।

ইডির এক কর্মকর্তা বলেন, 'শুধু কাগজে-কলমেই আছে যে আসামিরা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে। প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ পুলিশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটকে জানায়, যারা পরবর্তীতে ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে।'

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে গতকাল ভারত সরকারের কাছে পি কে হালদারকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে অনুরোধ করা হয়েছিল বলে দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছে একটি সূত্র।

২০১৯ সালে দেশে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় পি কে হালদার স্পটলাইটে আসেন।

তিনি এবং তার সহযোগীরা ২০০৯ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান- পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেড, এফএএস ফাইন্যান্স এবং রিলায়েন্স ফাইন্যান্স থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন।

এই ৪টি প্রতিষ্ঠান তখন থেকে ভয়াবহ সংকটে আছে এবং এদের মধ্যে পিএলএফএস এখন লিকুইডেশনের প্রক্রিয়ায় আছে।

এই ৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে জমা দেওয়া তহবিল পুনরুদ্ধার করতে বেশ কয়েকটি ব্যাংক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।

দুদকের একজন তদন্তকারী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে তারা হালদারকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানতে পেরেছেন। তারা শিগগির পি কে হালদারের বিরুদ্ধে ৩টি মামলার চার্জশিট দেবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, 'হালদারের স্যালারি অ্যাকাউন্টে প্রায় ২২৫ কোটি টাকা পাওয়া যায়। তিনি ঋণ জালিয়াতির সুবিধার্থে কমিশন হিসেবে এই অর্থ নিয়েছিলেন।'

পি কে হালদার চারটি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে এমন কৌশলে পরিচালনা করেছেন যে, হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার আগে কেউ কিছু সন্দেহ করতে পারেননি।

হালদার তার লোকদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষে বসান। যেন তিনি সহজেই তাদের কাছ থেকে ঋণ নিতে পারেন এবং তহবিলের অপব্যবহার করতে পারেন।

হালদারের প্রতারিত ৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের (পিএলএফএস) চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ তথ্য জানা যায়।

পি কে হালদার এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৩৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এখন পর্যন্ত পি কে হালদারের সঙ্গে সম্পর্কিত ৮৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে এবং প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

এছাড়া, পি কে হালদারসহ ৬৪ জন অভিযুক্তকে বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং ১১ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

Comments

The Daily Star  | English

S Alam threatens int'l legal action against govt over asset freezing: FT

Alam says his family's bank accounts were frozen, they were subjected to travel bans, and they lost control of their companies, all while facing investigations for alleged money laundering without formal notification.

46m ago