ইসরায়েলের দায়মুক্তির কি শেষ নেই?

অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আল জাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহকে হত্যার ঘটনায় আমরা ক্ষুব্ধ।
শিরিন আবু আকলেহ। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া

অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আল জাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহকে হত্যার ঘটনায় আমরা ক্ষুব্ধ।

গত বুধবার ভোরে আবু আকলেহ প্রেস ভেস্ট ও হেলমেট পরে জেনিন শহরে ইসরায়েলি অভিযানের খবর সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন। এরপরও তার মুখমণ্ডলে গুলি করা হয়।

ঘটনার পর থেকেই ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীদের ওপর দায় চাপাচ্ছিল। দেশটির সামরিক প্রধান এখন পুরনো অবস্থান থেকে সরে এসে বলছেন, 'কে গুলি চালিয়েছে তা স্পষ্ট নয়।'

এই ঘটনার প্রতি আমাদের ক্ষোভ ও নিন্দা দুটি কারণে- একজন সাংবাদিককে হত্যার জন্য ও ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের অব্যাহত দখলদারত্ব ও সহিংসতার জন্য।

আবু আকলেহকে যখন গুলি করা হয়, তখন সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকরা নিশ্চিত করেছেন যে ইসরায়েলি বাহিনীই তার মৃত্যুর জন্য দায়ী। আবু আকলেহ ও তার সহকর্মীরা স্পষ্টভাবে 'প্রেস' লেখা ভেস্ট পরে ছিলেন এবং ইসরায়েলি বাহিনীর কাছে নিজেদের পরিচয় দিয়ে রেখেছিলেন।

কর্তব্যরত সাংবাদিকের মুখমণ্ডলে গুলি করে হত্যার ঘটনা থেকে বোঝা যায় যে, যেসব খবরে ফিলিস্তিনিদের কণ্ঠ শোনা যায় তা বন্ধ করতে ইসরায়েল বদ্ধপরিকর। যদিও ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর ও নির্বিচার সহিংসতাকে চিরস্থায়ী করে ফেলেছে ইসরায়েল।

সাম্প্রতিক রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি দখলদারত্বের বিষয়টিকে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে। ইউক্রেনীয় শরণার্থী ও যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশ্বব্যাপী সমর্থন-সহানুভূতি প্রশংসনীয় এবং এটা তাদের প্রাপ্য। কিন্তু বিস্মিত হতে হয়, ৭ দশকেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি বাহিনীর তৈরি করা নরকের মধ্য দিয়ে যাওয়া ফিলিস্তিনি জনগণ কি সেই সহানুভূতির একাংশও পেতে পারে না?

তাদের কথা কেন প্রচারিত হয় না, কেন তাদের সহায়তা করা হয় না? এই বৈষম্যের ক্ষেত্রে অনস্বীকার্যভাবে জাতি ও ধর্ম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, বিশেষ করে পশ্চিমের দেশগুলোর কাছে। তবুও, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি সহিংসতা অব্যাহত আছে। যুক্তরাষ্ট্রও দখলদারদের সামরিক সহায়তা দিয়েই চলেছে।

আমরা এখন শুধু আশা করতে পারি যে, শিরিন আবু আকলেহের মৃত্যু, এর আগের হাজার হাজার ফিলিস্তিনি হত্যার ভিড়ে হারিয়ে যাবে না। কোন পরিস্থিতিতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তা খুঁজে বের করতে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে।

প্রকাশ্য দিবালোকে কর্তব্যরত সাংবাদিককে হত্যা করার এই ঘটনা এটাই আভাস দেয় যে, পশ্চিমাদের দ্বারা ইসরায়েল কতটা আশকারা পেয়েছে।

ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ করার জন্য আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে তাদের চোখের ঠুলি সরিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি অব্যাহত রাখছি।

Comments