২৪ বছর ধরে যে মামলার ফাঁদে রাজশাহীর আহাদ আলী

ইলাসট্রেশন: বিপ্লব চক্রবর্তী

ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-২ থেকে অভিযুক্ত আহাদ আলীর নাম ডাকা হলো। তিনি আদালত কক্ষে প্রবেশ করলেন। অসহায় চোখে মহামান্য বিচারকের দিকে তাকিয়ে হাতজোড় করে এজলাশে দাঁড়ালেন। ২৪ বছর আগে করা একটি মাদক মামলার শুনানি চলছে। মামলার একমাত্র আসামি আহাদ পরের ১০ মিনিট সেভাবেই কাঁদো কাঁদো চোখে হাতজোড় করে রইলেন।

বিচারক পরবর্তী শুনানির তারিখের ঘোষণা দিয়ে আদালত কক্ষ ত্যাগ করলেন। গত ২৪ বছর ধরে একের পর এক শুনানির তারিখে আদালত হাজির হওয়া যেন আহাদ আলীর জীবনের সবচেয়ে নির্মম সত্য হয়ে উঠেছে।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি এভাবেই এজলাশ থেকে নেমে আদালত কক্ষ থেকে বের হলেন আহাদ আলী। বাড়ি তার রাজশাহী। পরবর্তী শুনানির তারিখ দেওয়া হলো ১১ মে, সেদিন আবার আসতে হবে বাড়ি থেকে। আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে রওনা হলেন রাজশাহীর উদ্দেশে।

এভাবে ২ দশকেরও বেশি সময় ধরে আহাদ আলী হাজিরা দিতে রাজশাহী থেকে ঢাকা আসছেন আর যাচ্ছেন। মামলার এ দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় হারিয়েছেন অর্থ, সময়, জীবনীশক্তি। সারাক্ষণ এই দুশ্চিন্তা তাড়া করে বেড়াচ্ছে তাকে।

নিজেকে নিরপরাধ দাবি করে তিনি জানান, মামলার সঙ্গে তার কোনো সংশ্লিষ্টতাই নেই।

হেরোইন রাখার অভিযোগে ১৯৯৮ সালে ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে তাকে প্রথম গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তখন তার বয়স ছিল প্রায় ২৫। দুই সন্তানের বাবা আহাদের বয়স এখন প্রায় ৫০।

মামলার পর ২৪ বছরের মধ্যে চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি শুনানিতে কোনো সাক্ষীকে প্রথমবারের মতো আদালতে হাজির করা হলো।

সেদিন ওই শুনানির পর আদালত প্রাঙ্গণে দ্য ডেইলি স্টারকে আহাদ বলেন, 'আল্লাহই জানেন কবে এই বিপদ কাটবে, কবে আমি এই অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্ত হব।'

জটিল ও দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ায় কেউ ফেঁসে গেলে কী হয় এবং কীভাবে একটি মামলা এত বছর ধরে টেনে নিয়ে যাওয়া যায়, এটি তার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

দ্য ডেইলি স্টার গত ৬ মাস ধরে মামলাটির বিষয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে। মামলার সাক্ষী ও বাদীদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে এবং মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করছে।

অভিযুক্ত আহাদ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে তিনি মামলা সম্পর্কে আলাপ করতে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। তার ধারণা ছিল পত্রপত্রিকায় এ নিয়ে কথা বললে মামলাকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি জানালেন যে কীভাবে ফেঁসে গেলেন মামলায়, কীভাবে একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর জীবনে নেমে এলো চিরঅশান্তি।

যেভাবে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন

আহাদ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ১৯৯৮ সালের ২৮ মার্চ সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঢাকা থেকে বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী যাওয়ার উদ্দেশে গাবতলী বাস টার্মিনালে পৌঁছে টিকিট কেটে অপেক্ষা করছিলেন তিনি। সঙ্গে পুরান ঢাকার এক পাইকারের কাছ থেকে কেনা কয়েক বান্ডিল চপ্পল ও স্যান্ডেল। গোদাগাড়ীর খেতুর গ্রামে নিজের ছোট দোকানে নিয়ে গিয়ে সেগুলো বিক্রি করবেন।

হঠাৎ করে বাস টার্মিনাল ফাঁড়ির পুলিশের একটি দল সেখানে এলো। আহাদের কয়েক ফুট দূরে একটি প্যাকেট দেখতে পেলেন তারা। প্যাকেটটি তল্লাশি করে পুলিশ তাতে হেরোইন পেল। পুলিশ আহাদকে জিজ্ঞাসা করল যে প্যাকেটটি তার কি না।

আহাদ জানালেন যে না, প্যাকেটটি তার না। বিশ্বাস করলেন না পুলিশ সদস্যরা। তারা বারবার বলছিলেন যে প্যাকেটটি তারই।

এ অবস্থায় আহাদ পুলিশকে তার ঢাকায় আসার কারণ জানালেন এবং যার কাছ থেকে তিনি স্যান্ডেল কিনেছিলেন পুরান ঢাকার সেই পাইকারি বিক্রেতার সঙ্গে ফোনে কথা বলতে অনুরোধ করেন।

পুলিশ সদস্যরা তখন পাশের একটি টেলিফোনের দোকানে যান। কিন্তু ফিরে এসে জানান, ফোনে সেই বিক্রেতাকে পাওয়া যায়নি।

আহাদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পুলিশ আমাকেই অপরাধী বলতে থাকে। আমি বারবার তাদের বললাম যে প্যাকেটটা আমার নয়। কিন্তু তারা আমার কথা শুনলেন না।'

তাকে আটক করে গাবতলী বাস টার্মিনাল পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নেওয়ার পর পুলিশ সদস্যরা তার কাছে ৫ হাজার টাকা দাবি করে বলে আহাদ আলীর অভিযোগ।

'তাদের একজন বললেন যে টাকা দাও, ছেড়ে দেবো। আমি তাদের বললাম যে মালামাল কেনার পর আমার কাছে মাত্র ৫০০-৬০০ টাকা আছে। এই টাকা দিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। সঙ্গে তো তখন মোবাইল ফোনও নেই যে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করব,' বলেন তিনি।

পরে ফাঁড়ি থেকে তাকে মিরপুর থানায় স্থানান্তর করা হয়।

সেই দুঃস্বপ্নের কথা মনে করে গভীর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আহাদ বলেন, 'তখন কেউ ছিল না আমার পাশে দাঁড়ানোর।'

তার বক্তব্য যাচাইয়ের চেষ্টা করেছে দ্য ডেইলি স্টার। তবে তাকে গ্রেপ্তার করার সময় যারা ছিলেন, সেই পুলিশ সদস্যদের কাউকে পাওয়া যায়নি। মিরপুর থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

মিরপুর থানার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাজিরুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, মামলার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।

'এ মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যরা কে কোথায় আছেন আমরা জানি না। তারা এখনো সার্ভিসে আছেন, না কি অবসরে গেছেন, সেই রেকর্ডও আমাদের কাছে নেই,' বলেন ওসি

সেই মাদক মামলা

১৯৯৮ সালের ২৮শে মার্চ মিরপুর থানায় মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণী দাখিল করেছিলেন গাবতলী বাস টার্মিনাল পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন কনস্টেবল আবদুস সালাম।

এতে বলা হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তিনিসহ আরও ৪ কনস্টেবল জাফর আহমেদ, আবদুর রশিদ, হায়দার আলী ও মোর্শেদ অভিযুক্তের কালো ব্যাগ তল্লাশি করেন।

তল্লাশিতে তারা ২ 'প্রত্যক্ষদর্শী' বিধান কুমার সরকার ও শেখ আবুল কাশেমের উপস্থিতিতে একটি ছোট পলিথিন ব্যাগে প্রায় ১০০ গ্রাম হেরোইন পান।

বিধান কুমার ও কাশেম ছাড়াও ৭ পুলিশ সদস্য এবং সরকার নিযুক্ত এক কেমিক্যাল পরীক্ষককেও রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী করা হয়েছে মামলায়।

'জব্দকৃত মাদকের' ২০০ মিলিগ্রাম নমুনা রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। রিপোর্টে 'জব্দকৃত মাদক হেরোইন' বলে নিশ্চিত করা হয়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৯০ এর অধীনে করা মামলাটি পরদিন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে স্থানান্তর করা হয়।

এর প্রায় কয়েক সপ্তাহ পর জামিনে বেরিয়ে আসেন আহাদ।

আইন অনুযায়ী, ২৫ গ্রামের কম হেরোইন থাকলে ২-১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। তবে ২৫ গ্রামের বেশি হলে শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।

১৯৯৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন খান আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এর প্রায় ১ বছর পর আহাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

এভাবে শুরু হলো আহাদের বিরুদ্ধে এক অন্তহীন মামলার বিচার কার্যক্রম।

২৪ বছর পর আদালতে সাক্ষী

চার্জশিট গৃহীত হওয়ার পর মামলাটি ১৯৯৯ সালের মার্চ মাসে মেট্রোপলিটন সেশন জজ আদালতে এবং কয়েক বছর পর অ্যাডিশনাল মেট্রোপলিটন সেশন জজ আদালত-২ এ স্থানান্তর করা হয়।

২০১১ সালের এপ্রিলে মামলাটি বিশেষ জজ আদালত-২ এ পাঠানো হয়।  সেখানে গত ১১ বছরে এ মামলার অন্তত ৪০টি শুনানি হয়েছে বলে আদালতের নথিতে দেখা গেছে।

শুরুতে ৬ মাসের ব্যবধানে শুনানির তারিখ আসলেও, বর্তমানে ৩-৪ মাসের মধ্যেই শুনানির তারিখ পাওয়া যাচ্ছে।

সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, এত বছরে পুলিশ বা প্রসিকিউশন কেউই ১০ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করতে পারেনি।

আদালত সূত্র ও আহাদের আইনজীবী দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

আদেশে আদালত বলেছেন, আসামির কাছ থেকে জব্দকৃত মাদকের পরিমাণ বেশি হওয়ায় সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ না করে মামলা নিষ্পত্তি করা ঠিক হবে না।

এ কথা বলে আদালত একের পর এক নতুন তারিখ দিতে থাকেন।

অবশেষে চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো মামলার কোনো সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা হয়।

আদালতে হাজির হয়ে সাক্ষী আবুল কাশেম বলেন, 'সেদিন আমি গাবতলী বাস কাউন্টারে কাজে ছিলাম। পুলিশ এসে আমার নাম ঠিকানা লিখে নেয়। তারা বলেছিল যে তারা একটি মামলার তদন্তের জন্য আমার তথ্য নিচ্ছে।'

বিস্তারিত না জেনে কেন তিনি পুলিশকে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য দিলেন, বিচারকের এমন প্রশ্নে কাশেম বলেন, 'স্যার, তারা তো পুলিশ। আমার তো কিছু করার ছিল না।'

শুনানির সময় আদালত কক্ষে দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদক উপস্থিত ছিলেন।

জবানবন্দি নেওয়া শেষে কাশেম অভিযুক্ত আহাদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন, 'আপনি আমাকে চেনেন?'

'না' জবাব দিয়ে আহাদ পাল্টা প্রশ্ন করলেন, 'আপনি চেনেন আমাকে?'

কাশেম বললেন, 'আপনাকে জীবনেও দেখিনি, জানিও না।'

সাক্ষী কাশেম গত প্রায় ১৫ বছর ধরে ফরিদপুরে গ্রামের বাড়িতে বসবাস করছেন। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি জানান, ১৯৯৮ সালে তিনি গাবতলীতে জাকের পরিবহনের বাস কাউন্টারে চাকরি করতেন। প্রায় ১৫ বছর আগে তিনি চাকরি ছেড়ে গ্রামে চলে যান।

শুনানির প্রায় ১০ দিন আগে তিনি স্থানীয় পুলিশের মাধ্যমে আদালতের সমন পান। সমন পেয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি তিনি আদালতে এ মামলায় সাক্ষ্য দিতে যান।

সাক্ষ্য গ্রহণের দিন কাশেম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি অবাক হয়ে গেছি। আজকের আগে এ মামলা সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই ছিল না। জানতামই না কে বাদী, কে আসামি। আজ সকালে আদালতে আসার পর জানলাম।'

'একজন মানুষের বিরুদ্ধে এতদিন ধরে একটি মামলা চলছে শুনে আমি হতভম্ব হয়ে গেছি,' বলেন তিনি।

'মনেই করতে পারছি না'

মামলার আরেক সাক্ষী বিধান কুমার সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় দ্য ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে। তিনি ছিলেন মামলার ১০ জন সাক্ষীর মধ্যে দ্বিতীয়।

মামলাটি সম্পর্কে শুনে তিনিও অবাক হয়ে বলেন যে এ ঘটনা বা এই জাতীয় কোনো মামলায় তাকে সাক্ষী করা হয়েছিল কি না, তা তিনি 'মনেই করতে পারছেন না'।

টেলিফোনে তিনি বলেন, 'আমি মনে করতে পারছি না। আমি এ মামলা সম্পর্কে আপনার কাছ থেকেই শুনলাম। এ বিষয়ে কোনো কাগজপত্র পাইনি।'

বিধান কুমার গাবতলী টার্মিনালে ১৯৯৪ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সোহেল পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ৬২ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ এখন গোপালগঞ্জে থাকেন।

সঞ্জীব মণ্ডল গত কয়েক বছর ধরে আহাদের আইনজীবী হিসেবে মামলাটি লড়ছেন। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাদীপক্ষ কোনো সাক্ষী হাজির করতে না পারায়, আমরা বেশ কয়েকবার ডিসচার্জ পিটিশন দাখিল করেছি। কিন্তু মামলা এখনো চলছে।'

'প্রথম সাক্ষীর সাক্ষ্যও বিষয়গুলো পরিষ্কার করেছে। আশা করি আদালত শিগগির মামলাটি নিষ্পত্তি করবেন,' বলেন তিনি।

তার মক্কেলের আর্থিক দুর্দশার কথা উল্লেখ করে সঞ্জীব বলেন, 'দরিদ্র বলে আমি তার কাছ থেকে ফি নিচ্ছি না। বরং যাতায়াতের জন্য তাকে মাঝেমাঝে টাকা দিয়েছি।'

যোগাযোগ করা হলে পাবলিক প্রসিকিউটর ফরিদ আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, সাক্ষী হাজির করা তার দায়িত্ব নয়।

তিনি বলেন, 'কোনো সাক্ষী সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য হাজির হচ্ছে না উল্লেখ করে আদালতকে আসামিপক্ষের আইনজীবীর মামলাটি নিষ্পত্তির আবেদন করতে হবে।'

মামলার বিস্তারিত জানানো হয় মানবাধিকার আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়াকে। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দীর্ঘ ২৪ বছর এই মামলা টানার কোনো যৌক্তিক কারণ থাকা উচিত নয়।'

'২৫ গ্রামের বেশি হেরোইন থাকার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। তাই হিসাব করলে এটি একটি গুরুতর মামলা। যখন অপরাধটা এতটাই বড়, অথচ মামলার সাক্ষী এমন সাক্ষ্য দেয়, তখন আপনি বুঝবেন যে দোষটা কার,' বলেন তিনি।

এতে এটাও স্পষ্ট হয় যে মামলায় যথাযথ যাচাই-বাছাই ছাড়াই সাক্ষীদের নাম দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, 'রাষ্ট্রের দায়িত্ব মামলা করা, তদন্ত করা, সরকারি আইনজীবীদের মাধ্যমে সাক্ষীদের আদালতে হাজির করা এবং বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে আদালতে সব প্রমাণাদি উপস্থাপন করা।'

'এ ঘটনায় যদি কারো গাফিলতি থাকে, সেটা রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে,' বলেন সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী।

দ্য ডেইলি স্টারের রাজশাহী প্রতিবেদক অভিযুক্ত আহাদের প্রতিবেশী জয়নুল আহসানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। জয়নুল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অনেক আগে যখন শুনেছিলাম যে আহাদকে মাদক মামলায় আসামি করা হয়েছে, তখন থেকেই বিশ্বাস হয়নি।'

তিনি বলেন, 'আহাদ একজন ভালো মানুষ। এলাকার কারো সঙ্গে তার কোনো বিরোধ নেই।'

তিনি জানান, আহাদের কয়েক বিঘা জমি আছে। তিনি সেগুলো চাষ করেন। আহাদ ডিপ টিউবওয়েল অপারেটর হিসেবেও কাজ করেন।

'আহাদের সবকিছু এখন খেতখামার নিয়েই,' যোগ করেন কৃষক জয়নুল।

যোগাযোগ করা হলে গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের গত ১০ বছরের অপরাধের রেকর্ড কম্পিউটারে আছে। সেখানে আহাদের নাম নেই। তার আগে যদি কোথাও তার নাম থেকে থাকে, কাগজপত্র ঘেঁটে তা দেখতে হবে।'

এদিকে, এত বছর ধরে চলা এ মামলার বিচার কার্যক্রমে আহাদ ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। যতবারই তিনি ঢাকায় আসেন, ততবারই ভাবেন এটাই হয়তো শেষ।

তা আর হয় না। প্রতিবার তিনি নতুন শুনানির তারিখ নিয়ে বাড়িতে ফেরেন। আগামী বুধবার তাকে আবার আসতে হবে।

তার স্ত্রী সম্প্রতি স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন এবং স্ত্রীর চিকিৎসাই তার সবচেয়ে দুশ্চিন্তার বিষয়। বড় ছেলে কয়েক মাস আগে চাকরি পেয়েছেন, আর মেয়ে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বের হওয়ার আগে আহাদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখন তো অনেক বছর হয়ে গেছে। আমার শুধু একটাই আবেদন ও আশা, আদালত একদিন মামলাটি নিষ্পত্তি করে দেন। আমাকে যেন আর এই হয়রানি সহ্য করতে না হয়।'

Comments

The Daily Star  | English

Leading univs withdrawing from cluster system

Undergraduate admission tests under the cluster system faces uncertainty for the 2024-25 academic year, as several prominent universities have decided to withdraw and conduct their own admission tests independently. 

8h ago