আত্মীয় পরিচয়ে সুবিধা নেওয়ার জবাব রেলমন্ত্রীকেই দিতে হবে
এ দেশে সরকারি কর্মকর্তাদের সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা যে কত কঠিন এবং ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকলে সরকার কাঠামোকে ব্যবহার করে সুবিধা আদায় করা যে কতটা সহজ, সম্প্রতি রেলওয়ের এক ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরিদর্শকের (টিটিই) ঘটনাটি দিয়ে তা-ই সামনে ওঠে এলো।
রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বিনা টিকেটে ঈশ্বরদী জংশন থেকে ঢাকাগামী ট্রেনে ওঠেন ৩ জন। টিটিই শফিকুল ইসলাম তাদের জরিমানা করার সাহস দেখালেও, একদিন পরেই তাকে বরখাস্ত করা হয়। ওই ৩ জন বিনা টিকেটে এসি কেবিনে ভ্রমণ করেন। কিন্তু, টিটিই তাদের নন-এসির টিকেট দেন। বিষয়টি তাদের পছন্দ না হওয়ায়, তারা অভিযোগ দিলে শাস্তি হয় টিটিইর।
তার বিরুদ্ধে যে অসদাচরণের অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল, তা যদি সত্যও হয়, মন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় না দিলে কিন্তু অভিযোগের পরপরই এমন গুরুত্ব সহকারে বা তাত্ক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হতো না।
আত্মীয় পরিচয় দেওয়ার কারণে যা যা হয়েছে, তার দায় কি রেলমন্ত্রী এড়াতে পারবেন? মন্ত্রী প্রথমে ওই ভ্রমণকারীদের আত্মীয় বলে স্বীকার না করলেও, রোববার তার ওই মন্তব্য প্রত্যাহার করেছেন।
তিনি স্বীকার করেছেন যে ওই ৩ জন তার আত্মীয় এবং তার স্ত্রী টিটিইর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন। তবে মন্ত্রী জানান, তার স্ত্রী টিটিইকে বরখাস্ত করতে বলেননি।
মন্ত্রী আরও বলেন, বরখাস্তের আদেশ 'যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে' দেওয়া হয়েছে। তাই এ আদেশ প্রত্যাহার করা হবে। পুরো ঘটনাটি তার জন্য 'বিব্রতকর' ছিল বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আমরা মন্ত্রীর এমন অকপট স্বীকারোক্তি এবং দ্রুত ভুল বক্তব্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু, টিটিইর বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করাই কি আগের ভুল সিদ্ধান্ত শুধরে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট? এতে তার আত্মীয়রা যে অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম দিলেন এবং মন্ত্রীর আত্মীয়দের সন্তুষ্ট করতে সরকারি কর্মকর্তাদের যে কর্মতৎপরতা দেখা গেল, তার কি সমাপ্তি ঘটবে? অন্তত তার মন্ত্রণালয়ে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে রেলমন্ত্রী কি যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন?
আমরা মনে করি, জবাবদিহি প্রক্রিয়া দুর্বল থাকলে এবং বাইরের চাপে সরকারি কর্মকর্তারা অসহায় হয়ে পড়লে কী ঘটতে পারে, এ ঘটনাটি তার একটি উদাহরণ। এটি এমন রোগের লক্ষণ, যেখানে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং তা সরকার ও প্রশাসনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে সেটিকে কলুষিত করতে থাকে।
সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে কীভাবে দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে এবং দিন দিন তা স্বাভাবিক বিষয় হয়ে ওঠছে, বছরের পর বছর ধরে আমরা তা দেখছি। আমরা সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের শাস্তি পেতে দেখেছি এবং অসৎ কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ ও তাদের ঘনিষ্ঠজনদের পুরস্কৃত করতে দেখেছি।
টিটিইর এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না চাওয়ার ক্ষেত্রে যদি সরকার আন্তরিক হয়, তবে যে দুর্নীতিবাজদের জন্য এমন ঘটনা ঘটে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপনের সময় এখনই। এ ছাড়া, যারা তাদের দায়িত্বকে যথাযথ গুরুত্ব দেন, তাদের পুরস্কৃত করার মাধ্যমে অন্যদের উৎসাহিত করার উপযুক্ত সময়ও এখনই।
Comments