রবীন্দ্রজয়ন্তী: শাহজাদপুর কাছারি বাড়িতে ৩ দিনের উৎসব

শাহজাদপুরে রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি। ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পারিবারিক জমিদারির দেখভাল করার জন্য বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব বাংলা) কুষ্টিয়ার  শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের (তৎকালীন পাবনা) শাহজাদপুর, নওগাঁর পতিসর এলাকায় বার বার ভ্রমণ করেছেন। এ সব এলাকায় রয়েছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পদধূলি, গড়ে উঠেছে কাছারি বাড়ি।

তবে কবিগুরুর কাছে শাহজাদপুর কাছারি বাড়িটি ছিল বিশেষ আকর্ষণের। কবিগুরু এখানে বার বার এসেছেন, এখানকার জনমানুষের সাথে গড়ে তুলেছিলেন আত্মার সম্পর্ক, পেয়েছেন সাহিত্য রচনার অনুপ্রেরণা।

কবিগুরুর সাহিত্য কর্মে রয়েছে শাহজাদপুরের বিরাট ভূমিকা, ঊনিশ শতকের গোড়ার দিকে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ভাতিজি ইন্দিরা দেবির কাছে লেখা একটি চিঠিতে শাহজাদপুরের গুরুত্ব তুলে ধরে নিজেই লিখেছেন, 'আমি এখানে (শাহজাদপুরে) লেখার এমন অনুপ্রেরণা পাই যা অন্য কোথাও পাই না'।

কবিগুরুর স্মৃতি ধরে রাখতে শাহজাদপুর কাছারি বাড়িটিতে গড়ে তোলা হয়েছে রবীন্দ্র যাদুঘর। প্রতিবছর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী ২৫শে বৈশাখে উৎসবে মাতে কবিগুরুর স্নেহধন্য শাহজাদপুর এলাকার মানুষ।

তবে করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর শাহজাদপুর কাছারি বাড়িতে কোনো আয়োজন না থাকলেও এ বছর কবিগুরুর ১৬১তম জন্মবার্ষিকীতে শাহজাদপুর কাছারি বাড়িতে তিন দিনের উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।

শাহজাদপুর রবীন্দ্র কাছারি বাড়ির কাস্টডিয়ান আবু সাইদ এনাম তানভিরুল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তিন দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে কবিগুরুর জীবন ও সাহিত্যকর্ম নিয়ে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা, কবিগুরুর সাহিত্য কর্ম নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গীতিনাট্য।

কবিগুরুর ১৬১তম জন্মবার্ষিকীতে তিন দিনব্যাপী রবীন্দ্র মেলারও আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান তিনি। দুই বছর বিরতির পর এবারের উৎসবে প্রাণের মেলা বসবে বলে জানান তিনি।

ঐতিহাসিকদের মতে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা প্রিন্স  দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮৪০ সালে নাটোরের রানি ভবানীর কাছ থেকে  শাহজাদপুরের জমিদারি কিনে নেন। পরে এ জমিদারি উত্তরাধিকার সূত্রে কবিগুরুর উপর ন্যস্ত হয়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদারি দেখভালের জন্য ১৮৯০ সালে প্রথম শাহজাদপুর কাছারিবাড়িতে আসেন।

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক ড. আব্দুল আলিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, জমিদারি কাজের সুবাদে এখানকার মাটি ও মানুষের সাথে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক গড়ে উঠে কবির।

আলিম বলেন, এখানকার নদী, ফসলের ,মাঠ, সাধারণ মানুষের জীবন কবিকে সাহিত্য কর্মে উদ্বুদ্ধ করেছে যার প্রমাণ তিনি তার সাহিত্য কর্মের মধ্যে রেখে গেছেন।

কবিগুরু বিসর্জন, সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালি, গোলাপগুচ্ছ, ছিন্নপত্র, পঞ্চভুতের ডায়েরিসহ বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ শাহজাদপুর কাছারিবারিতে বসেই রচনা করেছেন বলে জানান তিনি।

কবিগুরুর বিভিন্ন চিঠিতেও শাহজাদপুরের প্রকৃতি, পরিবেশ, সাধারণ মানুষের জীবন যাপনের অনেক দিক তুলে ধরেছেন। প্রকৃতপক্ষে শাহজাদপুর কাছারি বাড়ি তার কাছে সাহিত্যের অন্যতম প্রধান অনুপ্রেরণা ছিল বলে জানান তিনি।

শুধু যে সাহিত্য কর্ম করেছেন তাই নয়, কবিগুরু এ অঞ্চলের মানুষের দুঃখ, দুর্দশা লাঘবের জন্য দুগ্ধ শিল্প সমৃদ্ধ এ অঞ্চলের গবাদি পশু পালনের জন্য তার জমিদারির একটি বড় অংশ গো-চারণ ভূমি হিসেবে দান করে গেছেন।

তবে কবিগুরুর স্মৃতিধন্য কাছারি বাড়ির ঐতিহাসিক কাছারি ঘরটি সংস্কারের অভাবে এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। অথচ এখানে বসেই কবি প্রজাদের সাথে কথা বলতেন, তাদের দুঃখ দুর্দশার কথা শুনতেন। কবিগুরুর স্মৃতি ধরে রাখতে কাছারি বাড়ির ঐতিহাসিক কাছারি ঘরটি সংস্কারের দাবি জানান রবীন্দ্র ভক্তরা।

কবিগুরুর স্মৃতিধন্য শাহজাদপুর কাছারি বাড়িটি বর্তমানে সরকারের পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এখানে গড়ে তোলা হয়েছে একটি মিউজিয়াম। যাদুঘরে সংরক্ষণ করা হচ্ছে কবিগুরুর ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিস, বিভিন্ন চিত্রকর্ম।

ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু

শাহজাদপুর কাছারি বাড়ির কাস্টডিয়ান তানভিরুল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, কালের বিবর্তনে অনেক কিছু হারিয়ে গেলেও এখানে কবির ব্যবহৃত কাঠের চেয়ার, টি টেবিল, সোফাসেট, আরাম চেয়ার, পালংকসহ প্রায় ১৪৮ টি প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন আছে। এছারাও রয়েছে কবিগুরুর ঐতিহাসিক ছবির সমারোহ। বর্তমানে এই পুরো ভবনটি জাদুঘর হিসেবে সাধারণ দর্শকদের জন্যে উন্মুক্ত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রথমবারের মতো শাহজাদপুর কাছারি বাড়িতে রবীন্দ্র কর্নার গড়ে তোলার কাজ চলছে বলে জানান তিনি। রবীন্দ্র কর্নার স্থাপন করা হলে যাদুঘরে আগতরা কবিগুরু সম্পর্কে আরও অনেক তথ্য জানতে পারবে বলে জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Putin says 'unprovoked aggression' on Tehran 'unjustified'

"This is an absolutely unprovoked aggression against Iran," Putin told Araghchi

14m ago