ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ৪১৩ বছরের আতিয়া মসজিদ

ছবি: মির্জা শাকিল/স্টার

টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলায় দেশের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ৪০০ বছরেরও বেশি পুরনো আতিয়া মসজিদ দীর্ঘদিন ধরে পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে।

১৭ শতকের গোড়ার দিকে নির্মিত, ৪১৩ বছর বয়সী মসজিদটি এরই মধ্যে তার পুরনো সৌন্দর্য অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে।

এ ছাড়া, প্রাচীন মসজিদটির ৯ ফুট চওড়া দেয়ালে শোভাময় পোড়ামাটির ফলক (টেরাকোটা) ইতোমধ্যেই ক্ষয়ে গেছে।

মসজিদের মোটা দেয়ালও বিবর্ণ হয়ে গেছে এবং এর ইটগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

১৯৮০ দশকে ১০ টাকার নোটে আতিয়া মসজিদের ছবি ব্যবহার করা হলে মসজিদটি দেশের মানুষের কাছে ব্যাপক পরিচিতি পায়।

রাজধানী ঢাকা থেকে ঐতিহ্যবাহী মসজিদটির দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার এবং গাড়িতে আসতে সময় লাগে প্রায় ৩ ঘণ্টা।

মসজিদের ইমাম মাওলানা মোজাম্মেল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পরিচর্যা ও সংস্কারের অভাবে মসজিদের অনেক পোড়ামাটির ফলক ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে এবং মসজিদের অনন্য অলঙ্করণ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।'

ছবি: মির্জা শাকিল/স্টার

এখনো জেলা ও জেলার বাইরে থেকে অনেক মানুষ প্রতিদিন মসজিদটি দেখতে আসেন বলেও জানান তিনি।

সম্প্রতি, প্রাচীন এই মসজিদটি দেখতে গিয়েছিলেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।

ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে হতাশা প্রকাশ করে শিক্ষার্থী রায়হানুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মসজিদের ইতিহাস লেখা আছে এমন কোনো বোর্ড বা ফলক খুঁজছিলাম। কিন্তু, কেবল একটি ফলকে প্রতিষ্ঠাতা ও অন্যদের নামের তালিকা দেখতে পেয়েছি। মসজিদের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে এখানে একটি ফলক বা বোর্ডের প্রয়োজন।'

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও স্থানীয় ঐতিহাসিকদের মতে, আতিয়ার তৎকালীন জমিদার সাঈদ খান পন্নী ১৬০৯ সালে লৌহজং নদীর তীরে দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদটি নির্মাণ করেন।

তিনি ১৭ শতকের শুরুতে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে উপহার হিসেবে আতিয়া পরগানা পেয়েছিলেন।

৯১৩ হিজরিতে কাশ্মীর থেকে আতিয়ায় এসে এই অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করেছিলেন হযরত শাহান শাহ (রহ)। তার মাজারের পাশে রয়েছে মসজিদটি। মসজিদের আশেপাশেই রয়েছে তার ৪৯ অনুসারীর কবর।

১৮০০ সালের বিধ্বংসী ভূমিকম্পে মসজিদটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

১৮৩৭ সালে দিল্লির বণিক রওশন খাতুন চৌধুরানী ক্ষতিগ্রস্ত মসজিদটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন।

দেলদুয়ারের জমিদার আবু আহমেদ গজনভী খান ১৯০৯ সালে ওয়াজেদ আলী খান পন্নী ও অন্য জমিদারদের সহযোগিতায় এটি আবার মেরামত করেন।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ১৯৭৮ সালে ঐতিহাসিক মসজিদটির দায়িত্ব পায় এবং প্রাচীন মসজিদটির সামনে নোটিশ বোর্ড দেয়। এতে বলা হয়, 'এটি একটি সরকারি সম্পত্তি এবং কেউ মসজিদের ক্ষতি করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

তবে, মসজিদ সংস্কার বা কাঠামো রক্ষার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

ছবি: মির্জা শাকিল/স্টার

আতিয়া গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ জাহিদ ডেইলি স্টারকে জানান, স্থানীয় প্রশাসনসহ গ্রামবাসী একাধিকবার মসজিদটি রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করলেও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর থেকে তা করতে নিষেধ করা হয়েছে।

মসজিদের কেয়ারটেকার প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মচারী সৈয়দ মনিরুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জরাজীর্ণ মসজিদটি ২০০০ ও ২০০৯ সালে আংশিকভাবে সংস্কার করা হয়েছিল।'

স্থানীয় বাসিন্দা শাকিল আহমেদ শুভ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সুন্দর মসজিদটি এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। আমরা এটি সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাই।'

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের (ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগ) আঞ্চলিক পরিচালক রাখী রায় ডেইলি স্টারকে জানান, আগামী বছর মসজিদটি সংস্কার করা হবে।

Comments

The Daily Star  | English
International Crimes Tribunal 2 formed

Govt issues gazette notification allowing ICT to try political parties

The new provisions, published in the Bangladesh Gazette, introduce key definitions and enforcement measures that could reshape judicial proceedings under the tribunals

50m ago