ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক: মেঘনা টোলপ্লাজায় প্রায় ১ কিলোমিটার যানজট

ছবি: সংগৃহীত

আর মাত্র কয়েকদিন পরই ঈদ-উল-ফিতর। প্রতি বছর ঈদের আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহসড়কে প্রচণ্ড যানজট দেখা যায় । কিন্তু এবারের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে যানজট নেই। শুক্রবার থেকে গাড়ি চাপ বাড়লেও যানজট থাকবে না আশা করছেন কাঁচপুর হাইওয়ে থানা পুলিশ।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড থেকে সোনারগাঁও উপজেলার মেঘনা টোল প্লাজা পর্যন্ত প্রায় ২২ কিলোমিটার এলাকায় চট্টগ্রামগামী যানবাহনগুলো স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে। তবে মেঘনা টোলপ্লাজা থেকে ঢাকাগামী সড়কের মদনপুর চৌরাস্তা মোড়ে সিগনালে ১০ থেকে ১৫ মিনিট যানবাহনগুলোতে বসে থাকতে হচ্ছে। এতে প্রায় ১ কিলোমিটার রাস্তা পর্যন্ত যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।

তাছাড়া সাইনবোর্ড মোড় ও শিমরাইল মোড়ে (চিটাগাং রোড নামে পরিচিত) যানজট দূর করতে কয়েকশ গজ দূরে ইউটার্নের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জগামী গাড়িগুলো সানারপাড় ইউটার্ন হয়ে সাইনবোর্ড দিয়ে প্রবেশ করছে। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে চট্টগ্রাম বা সিলেটগামী গাড়িগুলো মাতুয়াইল ইউটার্ন নিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে এখন এসব মোড়ে কোনো গাড়ি জটলাও নেই। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অবৈধ কাটাগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে মহাসড়কে যত্রতত্র গাড়ি ঘোরানো বন্ধ হয়েছে।

এদিকে সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর মোড় থেকে রূপগঞ্জের ভুলতা গাউছিয়া পর্যন্ত সড়কে গাড়ি চাপ থাকলেও যানজট নেই। তবে ভুলতা ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে গাড়িগুলো ধীরগতিতে চলাচল করছে। প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন পরিবহনের বাস ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে নির্বিঘ্নে চলে যাচ্ছে।

এছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী তিশা পরিবহনের চালক সোলেমান মৃধা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সকালে ঢাকায় আসতে কোনো যানজট পাইনি। এখন (দুপুর ২টা) চট্টগ্রাম যাচ্ছি। যানজট নেই।'

তিনি বলেন, 'মহাসড়কের কাটাগুলো বন্ধ করে দিয়ে সব থেকে ভালো করেছে। এর কারণে যত্রতত্র গাড়ি ইউটার্ন নিতে গিয়ে যানজট ও দূর্ঘটনা হয়। তাছাড়া শিমরাইল মোড়ে পুলিশ গাড়ি দাঁড়াতেই দিচ্ছে না। এমন পরিবেশ থাকলে যানজট হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে মেঘনা টোল প্লাজায় যানজটের সম্ভবনা রয়েছে।'

প্রাইভেটকার চালক মেহেদী হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মেঘনা টোল প্লাজায় টোল নিতে দেরি হয়। এছাড়াও বুথ ৯টার মধ্যে ৪টা অনেক সময় বন্ধ রাখে। এসব কারণে গাড়ির সিরিয়াল লেগে যায়। তখন যানজট হয়। এছাড়া রাস্তায় কোনো যানজট নেই।'

মেঘালয় পরিবহনের চালক রহমত হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শাহে-প্রতাব থেকে ঢাকা পর্যন্ত কোথাও যানজট নেই। তবে ভুলতা ফ্লাই ওভারের নিচে গাড়িগুলো একটু ধীর গতিতে চলে। কারণ এখানে যাত্রী উঠে ও নামে সেজন্য এটা হয়। তাছাড়া ট্রাক সহ অন্যান্য গাড়ির জন্যও কিছুটা ধীরগতি। তবে সেটা যানজট বলা যায় না।'

কাঁচপুর হাইওয়ে থানার পরিদর্শক ওমর ফারুক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঈদ যাত্রায় ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে কোথাও যানজট নেই। যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। ঢাকা থেকে গাড়িগুলো ভালোভাবে বের হয়ে যেতে পারছে। তবে ঢাকামুখী পণ্যবাহী ট্রাক, কভার্ডভ্যান, লরী, পিকআপ এসব বেশি ঢুকছে। এজন্য মদনপুর চৌরাস্তা মোড়ে সিগনালে একটু যানজট আছে। তবে সেটাও ৫ থেকে ১০ মিনিটের জন্য হয়। সিগনাল ছাড়লে কোনো যানজট থাকে না।'

তিনি বলেন, 'যানজট যেন না হয় সেজন্য মহাসড়কের অবৈধ যেই কাটাগুলো আছে সেগুলো সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের উদ্যোগে বন্ধ করা হয়েছে। আর সহযোগিতায় ছিল হাইওয়ে পুলিশ। তাছাড়া সাইনবোর্ড মোড় ও শিমরাইল মোড়ে যানজট দূর করতে ২০০ গজ দূরে ইউটার্নের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে গাড়ির চাপ থাকলেও যানজট নেই।'

তিনি আরও বলেন, 'শুক্রবার সকাল থেকে গাড়ি চাপ আরও বাড়বে। তবে তখনও যানজট হবে না। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এখন মেঘনা টোল প্লাজা নিয়ে কিছু আশঙ্কা আছে। সেখানে টোল নিতে সময় লাগলে গাড়ির সিরিয়ালে যানজট লেগে যায়। সেই বিষয়েও আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।'

মেঘনা টোল প্লাজার সহকারী ব্যবস্থাপক হযরত আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখনও পর্যন্ত (বিকেল ৩টা) যান চলাচল স্বাভাবিক। মূলত শুক্রবার থেকে গাড়ির চাপ বাড়বে। তবে টোলের ৮টি বুথ চালু আছে। ফলে গাড়ির কোনো সিরিয়াল হচ্ছে না। একটি বুথ মেরামত করা হচ্ছে সেটাও চালু করা হবে। কার্ড স্ক্যান করে ও ফ্রাস্ট ট্র্যাক সুবিধাও আছে। এখন প্রতিদিন ২৫ হাজার গাড়ি চলাচল করছে। আজ রাত থেকে ঈদের আগে পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিন ৪০ হাজার গাড়ি চলবে ধারণা করা যাচ্ছে। তবে এতেও কোনো সিরিয়াল ধরতে হবে না।'

তিনি বলেন, 'মোটরসাইকেলের জন্য একটা সিরিয়াল তৈরি হয়ে যায়। সেজন্য মোটরসাইকেলের আলাদা লেন করা হয়েছে। ট্রাক স্কেল করার জন্যও সিরিয়াল ধরতে হবে না। কোন ট্রাক স্কেল নিয়ে সমস্যা হলে এর জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর বাইরে মাইকিং সহ ব্যানার টানানো আছে গাড়ি চালকেরা যেন টোল সম পরিমান টাকা ভাংতি রাখে। তাহলে আর কোনো সিরিয়াল বা যানজট হওয়া সুযোগ নেই। এসবের পরও র‌্যাব, পুলিশ, আনসার সদস্যরাও থাকবেন এখানে।'

তিনি আরো বলেন, 'এখন মহাসড়কের কোথাও কোনো দূর্ঘটনা হলে। তখন এক সঙ্গে সব গাড়ি এসে টোলে সিরিয়াল হয়ে যায়। তখন যানজট হতে পারে। তাছাড়া আশা করি যানজট হবে না।'

Comments