‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জমিতে’ লেক খনন প্রকল্পের প্রতিবাদে সমাবেশ

ছবি: স্টার

টাঙ্গাইলের মধুপুর জাতীয় উদ্যানে কৃত্রিম হ্রদ (লেক) খননের বিষয়ে বন বিভাগের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে সমাবেশ করেছেন স্থানীয় বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনগণ। 

আজ সোমবার জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সাবেক সভাপতি অজয় এ মৃ'র সভাপতিত্বে দোখলা চৌরাস্তায় অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে স্থানীয় কয়েকশ গারো এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ সমবেত হন।

গারো স্টুডেন্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক লিয়াং রিছিলের সঞ্চালনায় সভাপতির বক্তব্যে গারো নেতা অজয় এ মৃ বলেন, 'শত শত বছরের বংশপরম্পরায় আমরা আমাদের ভূমিতে চাষবাস করে জীবিকা নির্বাহ করছি। কিন্তু বন বিভাগ প্রায় সময় উন্নয়নের নামে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভূমি দখল ও উচ্ছেদের চেষ্টা করে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা আমাদের কৃষি জমিতে কোনোভাবেই লেক খনন করতে দেব না।'  

প্রতিবাদ সমাবেশে বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠনের (বাগাছাস) সভাপতি জন জেত্রা বলেন, 'কৃষি জমি নষ্ট করে বিনোদনের নামে লেক খনন এ কেমন উন্নয়ন? আমরা আমাদের চোখের জলের ওপর কাউকে প্রমোদ তরী চালাতে দেব না। জীবন থাকতে আমরা আমাদের কৃষিজমির এক ইঞ্চি মাটিও ছাড়বো না।'

বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলীক মৃ বলেন, 'বন বিভাগ সৃষ্টির আগে থেকেই আদিবাসীরা এ অঞ্চলে বসবাস করে আসছে। নিজেদের জীবন-জীবিকার জন্য এই জমিতে চাষবাস করে আসছে। বন বিভাগ কোন অধিকারে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কৃষি জমিতে সাইনবোর্ড টানিয়ে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণা করে। ভূমি রক্ষার আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য আদিবাসী নেতাদের নামে মিথ্যা মামলা করে আমাদের ন্যায্য আন্দোলনকে দাবিয়ে রাখতে পারবেন না। বরং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ওপর যত মামলা-হামলা করবেন ততই আমাদের আন্দোলন দাবানলে পরিণত হবে।' 

বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক টনি ম্যাথিউ চিরান বলেন, 'উন্নয়নের নামে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কৃষি জমিতে যদি লেক খনন করতে যান তাহলে সেটি হবে আগুনের ওপর ঘি ঢালা। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর উন্নয়নের বিরোধী না। কিন্তু অমানবিক উন্নয়নের বিরোধী। আমাদের জীবিকার ওপর লেক খনন করার চেষ্টা করলে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলবো। অবিলম্বে দুর্নীতিবাজ বন কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করতে হবে। লেক খনন পরিকল্পনা বাতিল করতে হবে।'

জমির মালিক এবং জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পরেশ চন্দ্র মৃ'র মেয়ে মুকুল দারু তার বক্তব্যে বলেন, 'বঙ্গবন্ধু এই দোখলা আর চুনিয়ায় এসেছিলেন আমাদের বাড়িতে গিয়ে বাবার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন মধুপুর বনের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের উচ্ছেদ করা হবে না। অথচ আজকে বন বিভাগ আমাদের কৃষি জমিতে বিনোদনকেন্দ্র করার নামে লেক করার ষড়যন্ত্র করছে। আমাদের জমিতে সাইনবোর্ড টানিয়ে সংরক্ষিত বনাঞ্চল বলছে। কবে এই জমি সংরক্ষিত বনাঞ্চল ছিল। আমরা তো বহু বছর ধরে বংশপরম্পরায় এখানে চাষবাস করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছি। আমরা জমির মালিকরা আমাদের জমিতে কৃত্রিম লেক খনন করতে দেব না। এতে রক্ত দিতে হলে দেব।'

সমাবেশকে কেন্দ্র করে প্রচুর সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপস্থিতি ছিল।

উল্লেখ্য, পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য মধুপুর জাতীয় উদ্যানের আমতলীতে একটি কৃত্রিম হ্রদ খননের পরিকল্পনা করেছে বন বিভাগ। 

দোখালা রেস্ট হাউসের পাশে নির্মাণাধীন দোতলা রেস্ট হাউসের কাছে ১২ বিঘা জমিতে ৮০০ ফুট বাই ২০০ ফুটের লেক খনন করা হবে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।

বন বিভাগ জানিয়েছে লেকটি 'স্থানীয় ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের সহায়তায় মধুপুর জাতীয় উদ্যানে ইকো-ট্যুরিজম উন্নয়ন এবং টেকসই ব্যবস্থাপনা' নামে একটি প্রকল্পের অধীনে খনন করা হবে। লেকের চারপাশে পায়ে হাঁটা রাস্তা এবং বসার ব্যবস্থা রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।

এটি তাদের জীবিকা ও সংস্কৃতির ক্ষতি করবে এই মর্মে স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বাসিন্দারা শুরু থেকেই এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করে আসছে।

Comments

The Daily Star  | English

Expatriates' remittance helps Bangladesh make turnaround: Yunus

It is the expatriates who help sustain the country, says the chief adviser

6h ago