খন্দকার মোশতাকের প্রতি ‘শ্রদ্ধা’, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতির বক্তব্য এক্সপাঞ্জ

অধ্যাপক ড. রহমত উল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী খন্দকার মোশতাক আহমদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর অভিযোগ উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. রহমত উল্লাহ'র ‍বিরুদ্ধে। তিনি আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দল থেকে নির্বাচিত সভাপতি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ এই অভিযোগ তুলে তার বক্তব্যের বিতর্কিত অংশটুকু এক্সপাঞ্জের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের প্রতি তাৎক্ষণিক দৃষ্টিপাত করেছেন।

পরে অলোচনা শেষে সভাপতির বক্তব্য দেওয়ার সময় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. রহমত উল্লাহ'র বক্তব্যের বিতর্কিত অংশ এক্সপাঞ্জ করেন।

আজ রোববার ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) মিলনায়তনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক আলোচনা সভার আয়োজন করে।

সভা সূত্রে জানা গেছে, অধ্যাপক রহমত উল্লাহ বক্তব্য দেওয়ার সময় মুজিবনগর সরকার নিয়ে আলোচনা করেছেন। এসময় তিনি মুজিব নগর সরকারের মন্ত্রণালয়ে যেসব মন্ত্রী ছিলেন তাদের নাম উল্লেখ করে তাদের শ্রদ্ধা জানান। এক পর্যায়ে মুজিবনগর সরকারের পররাষ্ট্র, আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় মন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমদের নামও উল্লেখ করেন তিনি। তবে শ্রদ্ধা জানানোর পর খন্দকার মোশতাকের প্রতি ঘৃণা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেও বক্তব্য রাখেন তিনি।

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ তার বক্তব্যে অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহ'র বক্তব্যের ওই অংশটুকু নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ' খন্দকার মোশতাক মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রী ছিলেন৷ অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহ সব মন্ত্রীদের নাম উল্লেখ করে তাদের অবদানের জন্য শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে মোশতাকের নাম উল্লেখ করেও শ্রদ্ধা জানান৷ পরে আমি আমার বক্তব্যে বলেছি, মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় মোশতাক মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন এবং তাকে চোখে চোখে রাখতে হয়েছে৷ সে পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশন করার প্রস্তাবেও যুক্ত ছিল৷ কাজেই শিক্ষক সমিতির সভাপতি যে বক্তব্য রেখেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা গ্রহণ করতে পারবে না৷ পরে উপাচার্য তার নিজের বক্তব্যে অধ্যাপক রহমত উল্লাহর বক্তব্যের ওই অংশটুকু এক্সপাঞ্জ করেছেন৷'

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অধ্যাপক রহমত উল্লাহর বক্তব্যে খন্দকার মোশতাক আহমেদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর অংশটুকু এক্সপাঞ্জ করা হয়েছে৷ তিনি মোশতাকের নাম এককভাবে নয়, আরও কয়েকটা নামের সঙ্গে বোধহয় উচ্চারণ করেছিলেন৷ পরে একজন আলোচক তার বক্তব্যে বিষয়টি আমার দৃষ্টিতে আনেন৷ পরে আমি ওই অংশটুকু এক্সপাঞ্জ করি৷'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, 'মুজিবনগর সরকারে কে কোন মন্ত্রণালয় বা বিভাগে ছিলেন, তা নিয়ে আমি আলোচনা করেছি৷ ২৫ মার্চে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা, ১০ এপ্রিলে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রসহ সার্বিক বিষয়ে আমি আলোচনা করেছি। মুজিবনগর সরকার সম্পর্কে বলতে গিয়ে যদি স্লিপ অব টাং কিছু বলেও থাকি... ইতিহাস তো আমি তৈরি করিনি৷ মোশতাক বাংলাদেশের ইতিহাসে একজন ঘৃণিত ব্যক্তি৷ আমি ব্যক্তিগতভাবে তার প্রতি নিন্দা জানিয়েছি। আমি আমার বক্তব্যে সেটা বলেছি। কিন্তু কেন এটাকে অতিরঞ্জিত করা হচ্ছে আমি সেটা বুঝতে পারছি না।'

'মন্ত্রণালয়ের নামগুলো বলার সময় আমি তার নাম বলেছি। এখানে কোনো ভুল হয়ে থাকলে আমি অবশ্যই দুঃখিত৷ সে এই জাতির ভাগ্যের জন্য কলঙ্ক৷ তার প্রতি সম্মান জানানোর প্রশ্নই আসে না৷ আমি আমার বক্তব্যে তার প্রতি নিন্দা জানিয়েছি৷ ইতিহাসের ঘৃণিত ব্যক্তিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ইতিহাসকে বিকৃত করার এখতিয়ার বা দুঃসাহস আমার নেই৷ আমি মুজিবনগর সরকারের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছি,' বলেন তিনি।

বক্তব্যের অংশ এক্সপাঞ্জ করার বিষয়ে তিনি বলেন, 'অধ্যাপক সামাদ হয়তো বলতে চেয়েছেন, মুজিবনগর সরকারের যারা মন্ত্রণালয় পেয়েছিলেন, সেখানে মোশতাকের নাম বলাটা আমার উচিত হয়নি৷ এ ধরনের কিছু বলা হলে সেটা যেন এক্সপাঞ্জ করা হয়। এটা পরে এক্সপাঞ্জ করাও হয়েছে। এ নিয়ে আমি কোনো আপত্তিও তুলিনি।'

Comments

The Daily Star  | English

Mohakhali blockade halts Dhaka's rail link

Students of Titumir College waged protest to press home their demand for upgradation of their institution as a university

55m ago