রক্তাক্ত সেই হুমায়ুন আজাদ

হঠাৎ বোমা বিস্ফোরণের মতো শব্দ! কী ঘটল বুঝতে টিএসসি থেকে হাঁটতে শুরু করলাম বইমেলার দিকে। পরমাণু শক্তি কমিশনের উল্টো দিকে যেতেই দেখি কয়েকজনের জটলা। কাছে গিয়ে দেখি রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন একজন। পুরো মুখমণ্ডল রক্তাক্ত। আমি ধরে মুখটা ঘোরাতেই চিনতে পারি। চিৎকার করে বলি, আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার হুমায়ুন আজাদ। তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে নিতে হবে। কিন্তু কীভাবে নেব?

ওই পথ দিয়ে সাদা রঙের একটি ব্যক্তিগত গাড়ি আসছিল। সামনে গিয়ে চালককে হাতজোড় করে অনুরোধ করলাম স্যারকে হাসপাতালে নিতে হবে। কিন্তু তিনি গাড়ি ঘুরিয়ে চলে গেলেন। সামনে দেখি পুলিশের ট্রাক। ছুটলাম তাদের কাছে। পুলিশের সেই ট্রাকে করেই রওয়ানা হলাম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দিকে।

তারিখটা আজো ভুলিনি। ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি। বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদ সেদিন বইমেলা থেকে রাতে বাসায় ফেরার পথে হামলার শিকার হন। এর পর ১৮ বছর পেরিয়ে গেছে। টিএসসি, ঢাকা মেডিকেল, উত্তপ্ত ক্যাম্পাস, বিক্ষোভ, পুলিশ, সিআইডি, জার্মানিতে স্যারের মৃত্যু, আদালত—স্মৃতিতে ঘটনাগুলো এখনো উজ্জ্বল। মনে হয়, এই তো সেদিনের ঘটনা!

ছবি: সংগৃহীত

আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ক্লাস শেষ করেই কলা ভবন থেকে ছুটে যাই টিএসসিতে। একটু-আধটু সাংবাদিকতা শুরু করছি। পাশাপাশি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের সদস্য। টিএসসিতেই থাকি বিকেলের পর। হলে ফিরতে ফিরতে সাড়ে ৯টা, কখনো ১০টাও বেজে যায়। সেই দিনটাও এমনি ছিল।

২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি। শীতকাল। বইমেলা চলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গানের উৎসব হবে। টিএসসির বইরে মহড়া চলছে। বেশ জমজমাট। আমি বন্ধুদের সঙ্গে গান শুনছি। রাত সাড়ে ৯টার দিকের ঘটনা। হঠাৎ বোমা বিস্ফোরণের মতো শব্দ হলো। নিজেকে খুব সাহসী দাবি করি না, কিন্তু ভয়টা একটু কম। কোথা থেকে সেই শব্দ এলো জানতে টিএসসি থেকে দ্রুত হাঁটা শুরু করলাম বাংলা একাডেমির দিকে।

আজো মনে আছে, রাস্তার মাঝে সড়ক বিভাজক ধরে হাঁটছিলাম। এক জায়গায় কয়েকজন লোকের ভিড় দেখে দেখে গেলাম। আগেই বলেছি রাস্তায় উপুড় হয়ে পড়ে ছিলেন রক্তাক্ত এক মানুষ। কিন্তু কেউ ধরছে না।

হুমায়ুন আজাদকে এর আগে আমি সামনাসামনি কখনো দেখিনি। তবে তার লেখা বইয়ের ফ্ল্যাপ কাভারের ছবি দেখে তাকে চিনি। আমি উপুড় হয়ে থাকা স্যারকে যখন তুলি স্যারের এক পাশের গাল ২ ভাগ হয়ে ২ দিকে চলে গিয়েছিল। আমি ২ পাশে চাপ দিয়ে জোড়া লাগানোর চেষ্টা করলাম। একটাই চিন্তা তখন মাথায় স্যারকে হাসপাতালে নিতে হবে। কী করব? তখন আমার মোবাইল ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের খুব ঘনিষ্ঠ বিটু ভাইকে ফোন দিয়ে আসতে বললাম।

আগেই বলেছি, সাদা রঙয়ের ব্যক্তিগত গাড়ির চালক রাজি না হওয়ায় টিএসসির দিকে থাকা পুলিশের ট্রাকের দিকে ছুটে গিয়ে কিছুটা অনুনয় কিছুটা ধমক দিয়ে তাদের রাজি করিয়েছি। এরপর স্যারকে পুলিশের সেই ট্রাকে তুললাম।

স্যারকে যখন রক্তাক্ত অবস্থায় তুলছি তার আগেই সেখানে হাজির হলেন টিএসসির চেনামুখ ফটোসাংবাদিক পাভেল ভাই। তিনি তখন একের পর এক ছবি তুলছেন। আমি চিৎকার করে তাকে বললাম, এখন ছবি তোলার সময়? পারলে আমাদের সাহায্য করেন। তার তোলা ছবিগুলোই পরদিন বিভিন্ন দৈনিকে ছাপা হয়।

যাই হোক আমরা স্যারকে পুলিশের ট্রাকে তুললাম অনেক কষ্টে। ভীষণ ভিড় আর চেঁচামেচিতে খুব অস্থির বোধ করছিলাম। পুলিশের ট্রাক ছাড়ার আগে পাশে বিটু ভাইকে দেখে কিছুটা স্বস্তি বোধ করলাম।

ট্রাকের মধ্যে স্যারকে জড়িয়ে ধরে আছি। এতো কাছের ঢাকা মেডিকেলকে মনে হচ্ছে বহুদূর। স্যারের হা করা মুখ দিয়ে আমি রাস্তা দেখছি। স্যার আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, 'বাবা আমাকে কই নিয়ে যাও?' আমি বললাম স্যার হাসপাতালে। আপনার কিছু হয়নি। আপনি ভালো হয়ে যাবেন। স্যার বললেন, আমার চশমা কই? আমি বললাম, স্যার আছে। স্যার বললেন, আমাকে তুমি পুলিশের গাড়িতে কেন নিয়েছ? আমি বললাম, স্যার আমরা আপনার ছাত্র। ঠিক আছে স্যার আমরা এখুনি নেমে যাব।

স্যার খুব শক্ত হয়ে বসে আছেন। ট্রাক চলছে। আমরা যাচ্ছি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বাংলা একাডেমি থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ গেলে দোয়েল চত্বর পেরিয়ে সোজা চলে গেলেই হয়। কিন্তু পুলিশের ভ্যান দোয়েল চত্বর হয়ে আবার ডানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেডিয়ামের দিকে চলে গেল। আমি চিৎকার করে বললাম, ভাই আপনারা ঢাকা মেডিকেলটাও চেনেন না?

বারবার মনে হচ্ছিল হাসপাতালে তাড়াতাড়ি নিতে হবে। রক্ত বন্ধ করতে হবে। পুলিশের ট্রাক ঘুরে শহীদ মিনার হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের সামনে থামল। আমি আর বিটু ভাই অনেক কষ্টে ট্রাক থেকে স্যারকে নামিয়ে গেলাম জরুরি বিভাগে। ডাক্তারকে বললাম আমাদের স্যার। তিনি জানতে চাইলে রোগীর স্লিপ কোথায়?

আমি হতভম্ব! ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগে রোগীর জন্য স্লিপ কাটতে হতো। ৫ টাকা ছিল তখন। আমি দ্রুত সেটা কাটলাম। এরপর স্যারকে নিয়ে ট্রলিতে করে রওয়ানা দিলাম সম্ভবত ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের দিকে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসককে ফের বললাম উনি আমাদের স্যার। বারবার এই কথা বলছিলাম যেন দ্রুত চিকিৎসা শুরু হয়। এবারো ডাক্তার স্লিপ চাইলেন! আমি প্যান্টের পকেট থেকে স্লিপ বের করতে গিয়ে দেখি রক্তে ভিজে গেছে। কারণ স্যারের মুখ দিয়ে অনবরত রক্ত বের হচ্ছিল। সেই রক্তে আমার পরনের টিশার্টটাও ভিজে যাচ্ছিল।

আমার ভীষণ কান্না পেল। ডাক্তার আবারো স্লিপ আনতে বললেন! আমি আবারো স্লিপ কাটতে ছুটলাম। এসে দেখি স্যারের চিকিৎসা শুরু হয়েছে। ডাক্তাররা রক্তপাত থামানোর চেষ্টা করছিলেন। আমরা স্যারের হাত-পা ধরে আছি। এরপর ডাক্তাররা একটা কাগজে লিখে কিছু ওষুধ আনতে বললেন। আমি আর বিটু ভাই নিজেদের টাকায় ওষুধগুলো আনালাম। ডাক্তার আরও ওষুধের নাম লিখে দিলেন। এরপর দেখি আমাদের টাকা শেষ। ছাত্র মানুষ। কতো টাকাই বা আমাদের পকেটে থাকে। আমরা সেখানে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তাকে বললাম, এই ওষুধগুলো দয়া করে আনার ব্যবস্থা করেন। তিনি রাজি হলেন।

ততক্ষণে অরও অনেক লোকজন এসে গেছে। স্যারকে ঢাকা মেডিকেলে আনার পরপরই আমি মোবাইলে বন্ধু শুভকে হাসপাতালে আসতে বলেছিলাম। শুভ তখন প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক। কিছুক্ষণ পর শুভ, তৎকালীন উপাচার্য ফায়েজ স্যারসহ আরও অনেকেই এসেছেন। আমার চেনা-পরিচিতরা বললেন, তোমার তো জামাকাপড় রক্তে ভিজে গেছে। যাও ড্রেস চেঞ্জ করো।

আমার হাসপাতাল থেকে আসতে ইচ্ছা করছিল না। তবুও হলে এলাম। জহুরুল হক হল ঢাকা মেডিকেল থেকে অনেক দূরে। আমি তখন বিটু ভাইয়ের সঙ্গে তার ফজলুল হক হলে গেলাম। ওই হলেই গোসল সেরে ড্রেস চেঞ্জ করে বের হলাম। ততক্ষণে হামলার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে মিছিল শুরু হয়ে গেছে। যোগ দিলাম সেই মিছিলে। অনেক রাতে হলে ফিরলাম। ঘুমাতে গেলাম আরও অনেক রাতে।

একটি বিষয় আজো ভেবে খুব ভালো লাগে। আমরা পরে জেনেছিলাম, স্যারকে কুপিয়ে ফেলে যাওয়ার ১০-১২ মিনিটের মাথায় আমরা হাসপাতালে নিতে পেরেছিলাম। চিকিৎসকেরা বলেছিলেন, আরেকটু দেরি হলে রক্তক্ষরণে স্যার মারা যেতেন। ভেবে খুব ভালো লাগছিল যে, স্যারকে আমরা বাঁচাতে পেরেছিলাম। কিন্তু, আসলে কি বাঁচাতে পেরেছিলাম? ৬ মাস পর স্যার মারা গেলেন জার্মানিতে।

যাই হোক, ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতের পরিশ্রম-উত্তেজনার ক্লান্তিতে দীর্ঘক্ষণ ঘুমালাম। পরদিন সকালে দেরিতে ঘুম ভাঙল। জানতে পারলাম, স্যারকে রাতেই সিএমএইচে নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে বিদেশে নেওয়া হবে। টিএসসিতে আমাদের রুমে গিয়ে দেখলাম অনেক পত্রিকা। অনেক দৈনিকে আমার ছবি। রক্তাক্ত স্যারকে ধরে আছি আমি। দৈনিক জনকণ্ঠ বিরাট করে সেই ছবি ছেপেছে। পরিবার উদ্বিগ্ন।

শুরু হলো নতুন সমস্যা। শুধু পত্রিকা নয় সারা ক্যাম্পাসেও সেই ছবি। হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলার বিচার চেয়ে ক্যাম্পাসে শুরু হলো তীব্র আন্দোলন। দেওয়ালে দেওয়ালে বিচার চেয়ে পোস্টার টানানো হয়েছে। তাতে একটিই ছবি-আমি রক্তাক্ত স্যারকে ধরে আছি। আমার চিৎকার দেখে কেউ কেউ বলছে আমি স্যারকে জড়িয়ে ধরে কেন 'হাসছি'?

ক্যাম্পাসের যেদিকেই তাকাই আমার সেই ছবি। হাঁটতে বিব্রত লাগে। মনে হয় পুলিশ আমাকে ফলো করছে। কেউ কেউ বললেন, আমার উচিত কিছুদিন বাড়িতে গিয়ে বিশ্রাম নেওয়া। তাই করলাম। কিন্তু আসলেই পুলিশ আমাকে অনুসরণ করছিল, সেটা পরে টের পেলাম।

ঘটনার বোধহয় ২ মাস পর স্যার ব্যাংকক থেকে সুস্থ হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। মনে হলো স্যার ও তার পরিবারকে সেদিনের ঘটনা জানাই। একদিন বন্ধু সাংবাদিক শুভকে নিয়ে ফুলার রোডে স্যারের বাসায় গেলাম। দরজা না খুলে ভেতর থেকে জানানো হলো, স্যার বাসায় নেই। সেই আলাপ আর কোনদিন হয়নি।

স্যার দেশে ফেরার পর মামলার তদন্ত শুরু হলো। বিচারের দাবিতে শুরু হলো আন্দোলন। মামলার তদন্তভার পুলিশ থেকে এলো সিআইডির উপর। একদিন কলা ভবনে ক্লাস করে বের হচ্ছি, আমাদের জহুরুল হক হলের এক কর্মচারী এসে জানালেন, প্রভোস্ট স্যার এখুনি তার বাসায় যেতে বলছে। আমি বুঝলাম না এতো সকালে স্যার কেন আমাকে ডাকছেন?

প্রভোস্ট স্যারের বাসায় গেলাম। স্যার নানান তুচ্ছ বিষয় নিয়ে গল্প শুরু করলেন। কিছুক্ষণ পর দেখি সেখানে ২ জন লোক এসে ঢুকলেন। প্রভোস্ট স্যার চলে গেলেন। আমি দেখলাম তারা কতোগুলো ছবি দেখছেন আর ছবির সঙ্গে আমাকে মেলাচ্ছেন। এরপর নিজেদের পরিচয় দিলেন। জানালেন তারা সিআইডির কর্মকর্তা। তারা ২৭ ফেব্রুয়ারির ঘটনা জানতে চাইলেন।

সিআইডির ওই কর্মকর্তাদের একজনের নাম মনে আছে। আবদুল মালেক। তারা বললেন, পুলিশ এতদিন আপনাকে ফলো করেছে। আপনার প্রভোস্ট বলেছেন আপনি ভালো ছেলে। তাই আপনাকে গ্রেপ্তার করছি না। আপনার সঙ্গে আরেকটা ছেলে ছিল। তাকে আসতে বলেন। বিটু ভাইকে ফোন দিলাম। সিঅইডি পরদিন আমাদের ২ জনকে তাদের প্রধান অফিস মালিবাগে যেতে বললেন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য।

কিছুটা উদ্বেগ নিয়েই কাটল রাতটা। পরদিন সকাল ১১টায় সেই উদ্বেগ নিয়েই আমি আর বিটু ভাই গেলাম মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে। কিছুক্ষণ পর মালেক সাহেব আমাকে নিয়ে গেলেন সিআইডির ঊর্ধ্বতন আরেক কর্মকর্তার কক্ষে। তিনি আমাকে ভালো করে দেখলেন। তারপর বললেন, ঘটনার পরদিন যখন আপনার ছবিটা পত্রিকায় ছাপা হলো তখন ওপর থেকে আমাদের খুব চাপ দেওয়া হয়েছিল যে ছেলেটা রক্তাক্ত স্যারকে জড়িয়ে ধরে আছে তাকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। কিন্তু আমরা সেটা করিনি। আমরা জেনেছি, পুলিশের ট্রাকে আপনারা স্যারকে হাসপাতালে নিয়েছেন। কাজেই আপনাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এখন সব প্রশ্নের উত্তর দেন।

এরপর তারা একই কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বারবার জানতে চাইলেন। সবশেষে বললেন, যা যা বলেছেন সব লিখিত স্টেটমেন্ট হিসেবে দিয়ে যান।

হুমায়ুন আজাদ স্যারকে জড়িয়ে গল্পটা এখানেই শেষ হতে পারত। কিন্তু হলো না। ২০০৪ সালের আগস্ট মাস। আমি তখন একটি দৈনিকের পুরোদস্তুর সাংবাদিক। ১২ আগস্ট শুনতে পেলাম জার্মানিতে স্যার মারা গেছেন। সেদিন সম্ভবত শুক্রবার ছিল। সেদিন অফিসে ক্রাইম রিপোর্টারদের কেউ ছিলেন না। চিন্তিত চিফ রিপোর্টারকে বললাম, আমি রিপোর্টটা করছি। চিফ রিপোর্টার পড়ে বললেন, দারুণ রিপোর্ট। পরদিন স্টোরিটা লিড হলো। এরপর টানা কয়েকদিন ফলোআপ স্টোরি করলাম।

শুধু পুলিশ আর পত্রিকাতেই শেষ না! ২০০৭ সালে শুনলাম এই হামলায় জঙ্গিরা জড়িত ছিল। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হলো। হামলার ৯ বছর পর ২০১৩ সালে একদিন বাসায় আদালত থেকে কাগজ গেল। পুলিশের ফোন এলো। এই হত্যা মামলায় আমি রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী। ২০১৩ সালের ১১ জুলাই মৌলি আজাদ আর আমি সাক্ষ্য দিলাম। আবার একদিন আদালতে যেতে হলো। মাঝে-মধ্যে কিছুটা বিরক্ত হলেও মায়ের সেই কথাটা মনে পড়ে, যতো বিপদই হোক মানুষের পাশে থাকবে।

১৮ বছর পর শুনছি হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলার রায় হবে। ১৮ বছর পরও যে রায় হচ্ছে সেটি স্বস্তির। আফসোস শুধু হুমায়ুন আজাদকে আর কখনো পাওয়া যাবে না। এই সময়ে সত্য কথাগুলো মাথা উঁচু করে বলার জন্য তাকে খুব দরকার ছিল। রায়ের আগে একটাই কথা, লেখালেখি বা মত প্রকাশের জন্য এভাবে যেন আর কাউকে হামলার শিকার হতে না হয়। কাউকে যেন জীবন দিতে না হয়। কাউকে যেন জেলে যেতে না হয়।

শরিফুল হাসান: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, দ্য ডেইলি স্টার

Comments