নভেরার ভাস্কর্য ক্ষতিগ্রস্তের দায় কার?

তদন্ত প্রতিবেদন জমার ৩ বছরেও জড়িত কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে রাখা এদেশের আধুনিক শিল্পকলার অন্যতম পথিকৃৎ ভাস্কর নভেরা আহমেদের একটি প্রখ্যাত ভাস্কর্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তিন বছর পেরিয়ে গেছে। তবে এখনও এই ঘটনায় জড়িত কাউকে আইনের আওতায় আনা যায়নি।

'পরিবার' বা 'কাউ অ্যান্ড টু ফিগার্স' ভাস্কর্যটির কনজারভেশনে অনিয়মের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বন্ধ আছে নভেরার ক্ষতিগ্রস্ত ভাস্কর্যসমূহের কনজারভেশনের কাজ।

ভাস্কর্যটি এদেশে লন বা উন্মুক্ত চত্বরে স্থাপন করা প্রথম আধুনিক ভাস্কর্য। নভেরার ভাস্কর্য কনজারভেশন কমিটির মতে, নভেরার 'পরিবার' বা 'কাউ অ্যান্ড টু ফিগার্স' নামে ভাস্কর্যটি নিয়ম বহির্ভূতভাবে কনজারভেশন করার সময় কয়েকভাবে নষ্ট করা হয়েছে। নভেরা গবেষক ও ভাস্কর অধ্যাপক লালারুখ সেলিম ভাস্কর্যটি সম্পর্কে বলেন, নভেরার এই ভাস্কর্যটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং বাংলাদেশের ভাস্কর্যের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্তে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছিল। দুই বছর আগে জমা দেওয়া তদন্ত রিপোর্টে ভাস্কর্য নষ্ট করার ঘটনায় জড়িত একজন কর্মকর্তাকে শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, তদন্ত রিপোর্টটি গত দুই বছর ধরে ফাইলবন্দী অবস্থায় আছে। অন্যদিকে ভাস্কর্য নষ্ট করার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির শাস্তির দাবিতে নভেরার ভাস্কর্য কনজারভেশন কাজ বন্ধ রেখেছে জাতীয় জাদুঘরে রক্ষিত নভেরার ভাস্কর্য কনজারভেশনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষজ্ঞ কমিটি।

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে বর্তমানে নভেরার ৪৩টি ভাস্কর্য সংরক্ষিত আছে। এর মধ্যে নিবন্ধিত ৩৬টি এবং অনিবন্ধিত ৭টি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার সংলগ্ন চত্বর থেকে ১৯৯৮ সালে সংরক্ষণের জন্য ৭টি ভাস্কর্য জাতীয় জাদুঘরে আনা হয়েছিল।

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর সূত্র জানায়, ২০০০ সাল পর্যন্ত জাতীয় জাদুঘরের সংগ্রহে ছিল নভেরার ৩২টি ভাস্কর্য। ২০০১ সালে ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকা 'পরিবার' নামে নভেরার একটি ভাস্কর্য এবং ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে বিসিআইসির দিলকুশা কার্যালয় চত্বরে থাকা নভেরার আরেকটি ভাস্কর্য শিল্প মন্ত্রণালয় জাতীয় জাদুঘরকে দান করে। সম্প্রতি ফ্রান্স থেকে জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ সংগ্রহ করে নভেরার ২টি ভাস্কর্য। ফ্রান্স থেকে সংগ্রহ করা নভেরার ভাস্কর্য দুটি সাম্প্রতিককালের। নভেরার বাকি ৪১টি ভাস্কর্যই ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় ছিল। ভাস্কর্যের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরে গিয়েছিল। কোনো কোনো অংশ ছিল ভাঙা। উল্লিখিত ৪১টি ভাস্কর্য বেশ পুরোনো।

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে রক্ষিত নভেরার ভাস্কর্যগুলো কনজারভেশনের জন্য জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য বিভাগের অধ্যাপক লালরুখ সেলিমকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি কনজারভেশন কমিটি গঠন করে। কনজারভেশন কমিটির অপর দুজন সদস্য হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ভাস্কর নাসিমা হক মিতু এবং সহকারী অধ্যাপক ভাস্কর নাসিমুল খবির ডিউক। কাজের পরিসরের কথা বিবেচেনা করে পরবর্তীতে ভাস্কর্য বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক সৈয়দ তারেক রহমানকে কমিটির সদস্য করা হয়।

জাতীয় জাদুঘর সূত্রে জানা যায়, কনজারভেশন কমিটি দায়িত্ব গ্রহণের পর জাতীয় জাদুঘরে রক্ষিত নভেরার ভাস্কর্যগুলো পরিদর্শন করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেন। প্রতিবেদনে কোন ভাস্কর্যের কী কী পুনরায়ণ প্রয়োজন-তা বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছিল। ২০১৫ সালে নভেরার ভাস্কর্য কনজারভেশন কাজ শুরু হয়। কনজারভেশন কাজ শেষ হওয়া নভেরার ভাস্কর্য নিয়ে ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে জাতীয় জাদুঘরে একটি প্রদর্শনী হয়।

নভেরা গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগের শিল্পকলার ইতিহাস বিষয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক ড. রেজাউল করিম সুমনের মতে, জাতীয় জাদুঘরে রাখা নভেরার ভাস্কর্যগুলো কনজারভেশনের বিষয়টি আমাদের আধুনিক শিল্পকলার ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। আমাদের দেশে আধুনিক ভাস্কর্য চর্চা শুরু হয় বিশ শতকের পঞ্চাশের দশকে। কিন্তু কনক্রিটের ভাস্কর্য কীভাবে কনজারভেশন করতে হয়-সেই দৃষ্টান্ত, সেই অভিজ্ঞতা আমাদের ছিল না। জাতীয় জাদুঘরে রক্ষিত নভেরার ভাস্কর্য আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে কনজারভেশনের মধ্য দিয়ে কনক্রিটের ভাস্কর্য কনজারভেশনের কাজটি বাংলাদেশে শুরু হয়।

সূত্র জানায়, ২০১৮ সাল পর্যন্ত নভেরার ৪১টি ভাস্কর্যের মধ্যে ৩৫টি ভাস্কর্যের কনজারভেশনের কাজ সম্পন্ন হয় বলে জানা গেছে। কনজারভেশনের বাকি ৬টি ভাস্কর্য আকৃতিতে বড় এবং ক্ষতির পরিমানও সেখানে বেশি। 'পরিবার' বা 'কাউ অ্যান্ড দু ফিগার্স' নামের ক্ষতিগ্রস্ত ভাস্কর্যটি এর অন্যতম। জাতীয় জাদুঘরের রেজিস্টারে ভাস্কর্যটির 'পরিবার' নাম দেয়া হয়েছে। তবে নভেরা গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগের শিল্পকলার ইতিহাস বিষয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক ড. রেজাউল করিম সুমন জানান, ভাস্কর্যটি ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত নভেরার একক ভাস্কর্য প্রদর্শনীর ক্যাটালগে 'কাউ অ্যান্ড দু ফিগার্স' নামে উল্লেখ ছিল।

নভেরার ভাস্কর্যের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত এই ভাস্কর্যটি। মনিপুরীপাড়ায় এম আর খানের বাসভবনের সামনে সড়ক সংলগ্ন চত্বরে স্থাপন করা নভেরার ভাস্কর্যটি ফার্মগেট থেকে বিজয় সরণী যেতে চোখে পড়তো। ভাস্কর্যটি মনিপুরীপাড়া থেকে জাতীয় জাদুঘরে স্থানান্তর বিষয়ে ভূমিকা রাখে ১৯৯৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভাস্কর নভেরার সাক্ষাতের ঘটনা। আনা ইসলামের লেখা 'নভেরা বিভূঁইয়ে স্বভূমে' শীর্ষক গ্রন্থ থেকে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কার নিতে প্যারিসে অবস্থানকালে ভাস্কর নভেরার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান। বইটিতে আনা ইসলাম উল্লেখ করেন, 'প্যারিসে হোটেল হিলটনের কক্ষে সোয়া এক ঘণ্টা আলাপকালে নভেরা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন তার ইচ্ছার কথা-স্বাধীনতা যুদ্ধের নয় মাসে পাকিস্তানি সেনাদের দ্বারা নির্যাতিত মৃত মা-বোনদের স্মরণে ও সম্মানে সরকারি অনুদানে একটি বিশাল ভাস্কর্য করতে চান। প্রধানমন্ত্রী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আশ্বাস দিয়েছিলেন নভেরাকে। নানা সামাজিক সংস্কার, প্রতিকূলতা সত্ত্বেও যেভাবে নভেরা ভাস্কর্যের মতো শ্রমসাধ্য মাধ্যমে এলেন, তা নিয়েও প্রধানমন্ত্রী নভেরাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছিলেন-ঢাকাতে নভেরার করা প্রথম উদ্যান ভাস্কর্য জাতীয় জাদুঘরের সামনের উন্মুক্ত সবুজ প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হবে। ব্যবসায়ী এম আর খানের ফার্মগেটের বাড়ির সামনে এটি ছিল। প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহের কথা জেনে সেই ব্যবসায়ী পরিবার জাদুঘরকে সেটি দান করেন।'

নভেরার প্রথম উদ্যান ভাস্কর্য 'পরিবার' এম আর খানের পরিবারের পক্ষে বেগম মায়মুনা খাতুন ২০০১ সালের ২৪ জুলাই জাতীয় জাদুঘরে দান করার পর জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ সেটিকে জাদুঘরের সামনের উন্মুক্ত চত্বরে স্থাপন করেছিল। ২০১৫ সালে নভেরার ভাস্কর্যের কনজারভেশনের কাজ শুরু হলে কনজারভেশন কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী ভাস্কর্যটিকে জাতীয় জাদুঘরের ভেতরে নিয়ে আসা হয়।

কনজারভেশন কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাসিমুল খবির ডিউক এ প্রসঙ্গে জানান, উন্মুক্ত স্থানে অর্ধ শতাধিক বছর আগে কনক্রিটে নির্মিত ভাস্কর্যকে ইনডোরে নিয়ে যাওয়া অথবা উপরে ছাউনি দেয়ার প্রবণতা সম্প্রতি শুরু হয়েছে বিশ্বজুড়ে। শান্তি নিকেতনে ভাস্কর রামকিংকর বেইজের করা ভাস্কর্য ইতোমধ্যেই ইনডোরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর পরিবর্তে স্থাপন করা হয়েছে মেটালের রেপ্লিকা।

নাসিমুল খবির ডিউক আরও উল্লেখ করেন, গ্রানাইট পাথর ও মেটালের তৈরি ভাস্কর্য দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে। অন্যদিকে উন্মুক্ত স্থানে কনক্রিট দিয়ে তৈরি ভাস্কর্য দীর্ঘস্থায়ী হয় না। উন্মুক্ত স্থানে সাধারণত একশ বছর হলে কনক্রিটের বন্ডিং ছেড়ে দিতে শুরু করে। ফাটল দেখা দেয়। আর আমাদের দেশে আদ্রতা বেশি থাকায় ক্ষতির পরিমাণ ও প্রভাব বেশি হয়ে থাকে। ফাটল শুরু হয় আরও আগে। জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত ৭০ বছর আগে করা নভেরার অধিকাংশ ভাস্কর্যে ফাটল ধরে গিয়েছিল। উন্মুক্ত স্থানে রাখা হলে ভাস্কর্যগুলোর ফাটলের সংখ্যা ও পরিমান বেড়ে যেত। তাই বিশেষজ্ঞ কমিটি উন্মুক্ত স্থানে থাকা নভেরার সব ভাস্কর্য ইনডোরে স্থাপন এবং সংশ্লিষ্ট স্থানে মেটালের রেপ্লিকা পুনঃস্থাপনের সুপারিশ করেছিল। 

নভেরার ভাস্কর্য কনজারভেশনের কাজ চলাকালে কনজারভেশন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী জাতীয় জাদুঘরের সামনের প্রাঙ্গণে স্থাপন করা 'পরিবার' এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনের চত্বরে স্থাপন করা ৭টি ভাস্কর্য জাতীয় জাদুঘরে আনা হয়। জাতীয় জাদুঘরের কনজারভেশন ল্যাবরেটরিতে চলছিল নভেরার ভাস্কর্যের কনজারভেশনের কাজ।

'পরিবার' বা 'কাউ অ্যান্ড টু ফিগার্স'সহ ৬টি ভাস্কর্য কনজারভেশন কাজের জন্য ২০১৮ সালের জুন মাসে কমিটির সদস্যরা কনজারভেশন ল্যাবরেটরিতে গেলে সেখানকার শীতাতাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রটি নষ্ট দেখে। কনজারভেশন কাজের জন্য নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রা প্রয়োজন। তখন যন্ত্রটি ঠিক করতে বিশেষজ্ঞ কমিটি লিখিতভাবে জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানায়। কয়েক মাস পর তারা জাতীয় জাদুঘরে গেলে লক্ষ্য করেন, নভেরার 'পরিবার' ভাস্কর্যটির কনজারভেশন ও রেপ্লিকা তৈরি করা হয়েছে। নিয়ম বহির্ভূতভাবে 'পরিবার' ভাস্কর্যটি কনজারভেশন করা হয়েছে এবং কনজারভেশনকালে ভাস্কর্যটিকে নষ্ট করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে ভাস্কর্য নষ্টের ঘটনায় দায়ী ব্যক্তির শাস্তির দাবিতে তখন বাকি ভাস্কর্যসমূহের কনজারভেশন কাজ বন্ধ রাখে কনজারভেশন কমিটি।

কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক লালারুখ সেলিম এ প্রসঙ্গে বলেন, নভেরার ভাস্কর্যগুলো কনজারভেশনের জন্য কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কনজারভেশন কমিটিকে অবহিত না করেই ভাস্কর্যটির কনজারভেশন ও রেপ্লিকা তৈরি করা হয়েছে। 'পরিবার' বা 'কাউ অ্যান্ড টু ফিগার্স' ভাস্কর্যটি কনজারভেশনের ক্ষেত্রে প্রচলিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও জাতীয় আইন ও নীতিমালা মানা হয়নি। কনজারভেশন ও রেপ্লিকা তৈরির নামে কয়েকরকমভাবে 'পরিবার' বা 'কাউ অ্যান্ড টু ফিগার্স' ভাস্কর্যটিকে নষ্ট করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী পুনরায়নের ক্ষেত্রে ভাস্কর্য যে উপাদানে নির্মিত, তার চেয়ে নরম উপাদান ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু ভাস্কর্যটির কয়েকটি স্থানে আরো শক্ত উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে। বিকৃত করা হয়েছে ভাস্কর্যটির আকৃতি। যুক্ত করা হয়েছে একটি বেদী, যা আগে ছিল না। এছাড়াও যে পদ্ধতি ও ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করে রেপ্লিকা তৈরি করা হয়েছে, এতেও ভাস্কর্যটি নষ্ট হয়েছে। 

অধ্যাপক লালারুখ সেলিম আরো বলেন, ভবিষ্যতে যাতে নভেরার আর কোনো ভাস্কর্য নষ্ট না করা হয়, সেজন্য 'পরিবার' বা 'কাউ অ্যান্ড টু ফিগার্স' ভাস্কর্যটি কনজারভেশনের নামে নষ্ট করার ঘটনার শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশের আধুনিক শিল্পকলার গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনটির নষ্ট করার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিকে শাস্তি না দিলে ভবিষ্যতে জাতীয় জাদুঘরে রক্ষিত নভেরার আরও ভাস্কর্য নষ্ট করার ঘটনা ঘটতেই থাকবে।   

নভেরার 'পরিবার' বা 'কাউ অ্যান্ড টু ফিগার্স' ভাস্কর্যটি নষ্ট করার ঘটনায় অসন্তোষের সৃষ্টি হয় শিল্পকলা অনুরাগীদের মধ্যে। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগ ও ভাস্করদের সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভাস্কর্য প্রাক্তনি সংঘ (ডুসকা) ভাস্কর্য নষ্ট করার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দেয়ার জন্য জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিতভাবে দাবি জানান এবং এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে তারা প্রতিবাদ কর্মসূচি গ্রহন করবেন উল্লেখ করেন। এ অবস্থায় জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ড তৎকালীন সভাপতি হাশেম খানকে আহ্বায়ক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক সুলতানা শফি ও চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেনকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করে এবং ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি তদন্ত কমিটি মহাপরিচালকের কাছে রিপোর্ট দেয়।

নভেরার ভাস্কর্য কনজারভেশনে অনিয়মের ঘটনা তদন্ত করতে গঠিত কমিটির অন্যতম সদস্য ও জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক নিসার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, নীতিমালা ও বিধি লঙ্ঘন করে কনজারভেশন করার কারণে ভাস্কর্যটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তদন্ত কমিটি রিপোর্টে দায়ী কর্মকর্তাকে শাস্তির সুপারিশ করেছিল।

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে নভেরার 'পরিবার' 'কাউ অ্যান্ড টু ফিগার্স' ভাস্কর্য কনজারভেশনে অনিয়ম ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট ট্রাস্টি বোর্ডের সভায় উপস্থাপন না করার কারণ জানতে চাইলে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, ঘটনাটি আমার দায়িত্ব গ্রহণের আগে ঘটেছিল। বিষয়টি আমার তেমন জানা নেই। আমি খোঁজ নেবো

Comments

The Daily Star  | English

No place for Islamic extremism in Bangladesh

Islamic extremism will never find a place in Bangladesh again, said Chief Adviser Muhammad Yunus recently.

49m ago