পতনের মুখে ইসরায়েলি সরকার, কে এই ইদিত সিলমান?

ইদিত সিলমান। ছবি: সংগৃহীত

নাফতালি বেনেটের নেতৃত্বে শপথ নেওয়া ইসরায়েলি সরকারের এখনো এক বছর পূর্ণ হয়নি। আর এই জোট সরকারের বছর পূর্তির সম্ভাবনাও এখন অনেক ক্ষীণ হয়ে এসেছে। এমনকি খুব শিগগির ইসরায়েলি সরকারের পতন হতে পারে। তার একমাত্র কারণ বেনেটেরই দল ইয়ামিনার সদস্য ইদিত সিলমান। গতকাল বুধবার হঠাৎ করেই পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন ইদিত। তাতেই বেনেটের পতন অনেকটা সময়ের ব্যাপার হয়ে উঠেছে। নিজের দলের সদস্যই এখন বেনেটের সবচেয়ে বড় শত্রুতে পরিণত হয়েছেন। এ যেন 'ঘরের শত্রু বিভীষণ'।  

কিন্তু, ইসরায়েলের রাজনীতিকে হঠাৎ করে এভাবে চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী ইদিত সিলমান আসলে কে? আর কেনইবা তিনি পদত্যাগ করলেন? 

ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটের আইনপ্রণেতা ইদিত সিলমানের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত ক্ষমতাসীন জোটকে নাড়িয়ে দিয়েছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ইদিত সিলমান বেশ কিছুদিন ধরে ডানপন্থী বিরোধীদের চাপে ছিলেন। এ ছাড়া, সাম্প্রতিক বিতর্ক শুরুর আগেই জোটের বামপন্থী দলের সদস্যদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে মতাদর্শগত দ্বন্দ্ব ছিল। তবে, তার এমন সিদ্ধান্তে নেসেটে ক্ষমতাসীন জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। আর এটিই এখন ইসরায়েলের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে।

সিলমান ২০১৯ সালে প্রথম নেসেটে প্রবেশ করেন। রাজনীতি জীবনের শুরুতে সিলমান ধর্মভিত্তিক রাজনীতি দল ন্যাশনাল রিলিজিয়াস পার্টির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরে তিনি হাবায়িত হায়েহুদিতে যোগ দেন এবং তাকে দলটির একজন অগ্রদূত হিসেবে গণ্য করা হয়। পরে, ইয়ামিনা গঠনের জন্য হাবাইত হায়েহুদি অন্যান্য ডানপন্থী দলগুলোর সঙ্গে একীভূত হয়।

মূলত কাহানিস্ট প্রার্থী মাইকেল বেন আরিকে ২০১৯ সালের নির্বাচনের সময় আরবদের বিরুদ্ধে উসকানির জন্য স্লেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অযোগ্য ঘোষণা করেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। এরপরই ইদিত সিলমান নেসেটে প্রবেশ করেন। ফলে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সরকার গঠনে ব্যর্থ হন এবং ইসরায়েলিরা আরেক দফা নির্বাচনে ফিরে আসতে হয়।

২০২১ সালের মার্চে ইসরায়েলে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে পুনরায় নেসেটের আইনপ্রণেতা হন ইদিত সিলমান। তখন ইদিত সিলমানকে নেসেটের কোয়ালিশন হুইপ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। পাশাপাশি নেসেটের স্বাস্থ্য কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

ইদিত সিলমান রাজনৈতিক জীবন শুরুর আগে একজন শিক্ষক ছিলেন। পরে ইসরায়েলের বৃহত্তম স্বাস্থ্য রক্ষণাবেক্ষণ সংস্থা ক্ল্যালিট হেলথ সার্ভিসেসের বেশ কয়েকটি ব্যবস্থাপনা পদের দায়িত্বে ছিলেন। তার অনেক আইনি প্রচেষ্টায় দেশটির চিকিৎসা ব্যবস্থায় বেশকিছু পরিবর্তন আসে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ইসরায়েলি সেনাদের শুক্রাণু হিমায়িত করার বিষয়ে একটি বিলের সহ-পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন তিনি। যেন ইসরায়েলি সেনারা যুদ্ধে নিহত হলে এবং তাদের পরিবার চাইলে এটি ব্যবহার করতে পারে।

সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলের ডানপন্থী এই আইনপ্রণেতা দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিতজান হরোভিতজ সঙ্গে মতাদর্শগতভাবে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। যদিও তাদের মতাদর্শগত দ্বন্দ্ব আরও আগেই শুরু হয়েছিল। কারণ, ইসরায়েলে পাসওভার উৎসবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিতজান হরোভিতজ হাসপাতালে দর্শনার্থীদের খামিযুক্ত খাবার আনার অনুমতি দেন। যা ইহুদি আইনের লঙ্ঘন। মূলত তখন থেকেই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তার মতাদর্শ নিয়ে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত।

দেশটির ডানপন্থী ধর্মীয় প্রচার মাধ্যমের মতে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী  নিতজান হরোভিতজ গর্ভধারণ বিষয়ক নীতি সংস্কারের পর ডিসেম্বরে ইসরায়েলের গর্ভপাতবিরোধী সংগঠন এফরাতের জেরুজালেম ভিজিটর্স সেন্টার পরিদর্শন করেন সিলমান। ইসরায়েলের কিপা নিউজ ওয়েবসাইটের মতে, সিলমান এবং তার পরিবার নিয়মিতভাবে এফরাতের বিভিন্ন বিষয়ে অবদান রাখেন।

সিলম্যান নেসেটের ডানপন্থী বিরোধী দলগুলো কাছে সমালোচনার লক্ষ্যবস্তু ছিলেন। এমনকি লিকুদের আইনপ্রণেতা ইয়োভ কিশ তাকে 'ম্যানিপুলেটিভ' এবং মিথ্যাবাদী বলে অভিহিত করেন।

গত নভেম্বরে সিলমান ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ১২ নিউজকে বলেছিলেন, তাকে ২ বার লিকুদ পার্টিতে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তার পরপরই কিশ টুইট করেন, কেউ এভাবে সিলমানকে লিকুদে যোগ দেওয়ার পাগলাটে ধারণা নিয়ে এলে আমি তার বিরোধিতা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি বিরোধী দলে বসতে রাজি, কিন্তু নীতিহীন মানুষদের লিকুদে জায়গা দিতে রাজি নই।

স্ত্রীর রাজনীতি নিয়ে সিলমানের স্বামী শমুলিক সিলমান স্বাধীনভাবে মিডিয়ার কাছে নিজের মন্তব্য জানিয়েছেন এবং তিনি তাকে সমর্থন দিয়েছেন। শমুলিক সিলমান গালে ইসরায়েল রেডিওকে দেওয়া একটি সাক্ষাত্কারে বেনেট সরকার থেকে ইদিত সিলমানের দলত্যাগের ইঙ্গিতও দেন।

তিনি বলেছিলন, যদি ইদিত ঘরে ফিরে আসে তাহলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি বড় পদ দখল করবে। সবকিছুই তার জন্য ভালো। তবে, এখনো কিছুই ঘটেনি এবং এখানেই সব শেষ নয়।

সোমবার গালে ইসরায়েল রেডিওকে দেওয়া আরেকটি সাক্ষাত্কারে শমুলিক সিলমানকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তার স্ত্রী যখন বর্তমান সরকারে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেন তখন তার ভোটারদের কাছে মিথ্যা বলেছিলেন কিনা। তিনি উত্তর বলেন, আমি মনে করি তারা এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তাদের ক্ষমা চাওয়া ‍উচিত। দেশের কেউ কি বলছে যে তারা মিথ্যাবাদী নয়?

সিলমাট উইঙ্গেট ইনস্টিটিউট থেকে খেলাধুলায় ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ৪ বছর বয়স থেকে মাঠ এবং জিমন্যাস্টিকস ক্লাসে অংশ নেন। এমনকি তিনি কিছু কিছু ক্ষেত্রে চ্যাম্পিয়নও হন। তিনি নিজের শহর রেহোভোটের মালোত মেশুলাম এলিমেন্টারি স্কুলে পড়াশোনা করেন। তারপরে জাফিরা স্টুডিওতে ভর্তি হন। সেখানে স্নাতক শেষ হওয়ার পর ট্যুর গাইড হওয়ার ইচ্ছা ছিল তার। কিন্তু, তারপরই তিনি বাধ্যতামূলক সামরিক সেবা শুরু করেন।

কিপার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের নভেম্বরে নির্বাচন বিজয়ী হয়েও আত্মতুষ্টিতে ভোগেননি। তিনি এতোটাই পরিশ্রমী যে প্রতি রাতে ৩ ঘণ্টার বেশি ঘুমান না। তিনি ইদিত শামুলিকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং তাদের তিনটি সন্তান আছে, যথাক্রমে- ইলি, আইতান এবং রনি। তিনি সন্তানদের নাম রেখেছেন দাদা-দাদির নামে। আইতানের নামকরণ করা হয়েছে প্রয়াত আইডিএফ সদস্য আইতান নাভার নামে। যিনি একটি সংঘর্ষের সময় নিহত হয়েছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English
Dhaka University Madhur Canteen

Madhur Canteen: The story of an eatery and Bangladesh

If one says Madhur Canteen and Bangladesh’s history is inextricably interlinked, will it be an exaggeration?

14h ago