মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সংসদ সদস্যদের উদ্বেগকে গুরুত্ব দিন
নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য এবং এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা নিয়ে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় ১০ জন সদস্যের উদ্বেগের সঙ্গে আমরা একমত। জাতীয় পার্টি, বিএনপি এবং গণফোরামের আইনপ্রণেতারা দেখিয়ে দিয়েছেন যে, মন্ত্রণালয় কীভাবে কাঁচাবাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে।
সিন্ডিকেট ভাঙতে বা কারসাজি করে দাম বৃদ্ধি বন্ধ করতে মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে মূল্য বৃদ্ধি করা এবং পরিবহন ভাড়া ও ইউটিলিটি সেবার খরচ বৃদ্ধির বিষয় তারা তুলে ধরেছেন। জনদুর্ভোগ বাড়াতে এসবের সঙ্গে যোগ হয়েছে নিত্যপণ্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি।
রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে এই উদ্বেগ আরও বেড়েছে। দ্য ডেইলি স্টারে গত কয়েকদিনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাঁচা মরিচ, শসা, বেগুন ও ফলের দাম কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৫০ টাকা, মাছ-মাংসের দাম কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ভোজ্য তেল, পেঁয়াজ ও চিনির দাম কিছুটা কমলেও অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ স্বস্তি পায়নি। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে দাম কমানোর বিষয়ে প্রতিশ্রুতি এবং ভোক্তাদের অনুরোধ সত্ত্বেও দাম কমাতে সরকারি উদ্যোগের এই অসারতা গভীর উদ্বেগজনক।
গত ৫ এপ্রিল বিরোধী আইনপ্রণেতারা যখন এসব উদ্বেগের কথা উত্থাপন করেছিলেন, তখন মনে হচ্ছিল সংসদ আবার জনগণের বিষয়ে আলোচনায় প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। জনপ্রতিনিধিরা জনগণের পক্ষে কথা বলার এবং সরকারের যেসব ব্যর্থতা আছে তা তুলে ধরার সৌন্দর্য এ দিন ফুটিয়ে তুলেছেন। একটি সরকার এই ধরনের বিরোধিতা থেকে স্পষ্টতই উপকৃত হয়। আমরা আশা করি কর্তৃপক্ষ, বিশেষ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে এই উদ্বেগগুলোকে যথাযথ গুরুত্ব সহকারে নেবে এবং সেগুলো মোকাবিলায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
একই সঙ্গে এটাও বলতে হবে যে চলমান সংকটের মূল কারণ সিন্ডিকেট। তাদের প্রভাব বলয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গভীর পর্যন্ত চলে গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। একটি শক্তিশালী তদারকি ব্যবস্থার অভাবের সিন্ডিকেটগুলো গুজব ও সরবরাহ ঘাটতি তৈরি করে বাজারের দুর্বলতাকে কাজে লাগায়। সরকারকে এই লোভী-নীতিহীন ব্যবসায়ী, ডিলার এবং আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় নিত্যপণ্যের দাম বাড়তেই থাকবে এবং জনগণের ভোগান্তি অব্যাহত থাকবে।
Comments