‘বিমানের কাউন্টারে আমার সঙ্গে ভিক্ষুকের মতো আচরণ করা হয়’
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সৌদিগামী এক যাত্রীর সঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কাউন্টারের কর্মীরা অসহযোগিতাপূর্ণ আচরণ করেছেন বলে ওই যাত্রী অভিযোগ করেছেন।
আজ মঙ্গলবার শাহজালালের বহির্গমন কনকোর্স হলে আয়োজিত এক গণশুনানিতে যাত্রীরা তাদের অভিযোগ তুলে ধরেন। গণশুনানিতে আসা অভিযোগগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ ছিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিরুদ্ধে।
যাত্রীসেবার মান ও যাত্রীদের অভিযোগ জানতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এ গণশুনানির আয়োজন করেছিল।
গণশুনানিতে প্রথম প্রশ্ন করেন কুমিল্লার দাউদকান্দির মোহাম্মদ রিয়াদ সরকার। আজ দুপুর ৩টায় বিমানের ফ্লাইটে তার সৌদি আরব যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি বিমানবন্দরে এসে জানতে পারলেন ফ্লাইটটি ছাড়তে দেরি হবে।
এ বিষয়ে জানতে তিনি বিমানের কাউন্টারে যান। গিয়ে কোনো সহযোগিতা পাননি বলে জানান তিনি।
এ অভিযোগ তুলে রিয়াদ গণশুনানিতে বলেন, 'বিমানের কাউন্টারে গেলে তারা আমার সঙ্গে ভিক্ষুকের মতো আচরণ করেন। কোনো সহযোগিতাই করেননি।'
তার প্রশ্ন, 'একটা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সেবা আন্তর্জাতিক নয় কেন?'
এ অভিযোগ শুনে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান গণশুনানিতে উপস্থিত বিমানের প্রতিনিধির খোঁজ করেন।
এ সময় দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এয়ারলাইনসের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকলেও বিমানের কোনো প্রতিনিধি ছিলেন না।
এতে বেবিচক চেয়ারম্যান অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং বিমানের প্রতিনিধিকে ৫ মিনিটের মধ্যে গণশুনানিতে উপস্থিত হতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন।
বেবিচক চেয়ারম্যান দুঃখ প্রকাশ করে রিয়াদকে বলেন, 'আপনার সঙ্গে এমন ঘটনার জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। দুঃখ লাগছে আপনি সকালে এসেছেন। দুপুরে ফ্লাইট, এখন রাতে যাচ্ছেন, অথচ বিলম্বের বিষয়টি বিমান আপনাকে জানায়নি।'
'এটা বিমান ঠিক করেনি। এটার জন্য এয়ারলাইনসকে আমরা জিজ্ঞাসা,' বলেন তিনি।
তিনি বলেন, 'বিমানবন্দরে কেউ ঠিকমতো সেবা না পেলে হেল্প ডেস্ক আছে, ম্যাজিস্ট্রেটরা আছেন। অভিযোগ পেলে দোষীদের শাস্তি দেওয়া হয়। বিমানবন্দরে প্রত্যেককেই জবাবদিহি করতে হয়। যারা সেবা দিতে ব্যর্থ হন, তাদের জরিমানা করা হয়।'
'আমরা যাত্রীসেবা বাড়ানোর চেষ্টা করছি,' যোগ করেন তিনি।
১০ মিনিট পর গণশুনানিতে উপস্থিত হন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের স্টেশন ম্যানেজার আরিফুজ্জামান খান।
তিনি রিয়াদ সরকারের অভিযোগ প্রসঙ্গে গণশুনানিতে বলেন, 'আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। উনার বিষয়টি শুনে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।'
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন গন্তব্যে বিমানের টিকিটের দাম বেশি উল্লেখ করে অভিযোগ করেন কুমিল্লার মো. তৌহিদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, 'আবুধাবি থেকে আমি ৫০ হাজার টাকায় যাওয়া-আসার টিকিট একসঙ্গে কিনতে পেরেছি। কিন্তু বিমানে আবুধাবিসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে টিকিট কিনতে শুধু যাওয়ার জন্য ৮০ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা গুণতে হয়। এটা কেন?'
এ প্রশ্নের জবাবে বেবিচক চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান বলেন, 'টিকিটের দাম মূলত এয়ারলাইনসের বিষয়। এয়ারলাইনসের সঙ্গে সরকার আলোচনা করে এ দাম কমানোর চেষ্টা করা হয়েছে।'
'বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের যাত্রীদের চাহিদার তুলনায় উড়োজাহাজের সংখ্যা কম' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এ কারণে অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যেতে ভাড়া বেশি লাগছে। বিমান ইতোমধ্যে ভাড়া কমিয়েছে, আসনের ধারণক্ষমতা বাড়িয়েছে।'
সৌদিগামী যাত্রী গোলাম মোস্তফা প্রশ্ন করেন, 'অন্য দেশের বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে সময় কম লাগে, বিমানবন্দর থেকে বের হতেও কম সময় লাগে। এর বিপরীতে শাহজালাল বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে বেশি সময় লাগে। বিমানবন্দরে অবতরণের পর ব্যাগেজ নিয়ে বের হতে ২ ঘণ্টার বেশি লাগে। এটা কেন? আর বিমানের ফ্লাইট প্রায়ই দেরি হয়, কেন?'
এমন প্রশ্নের জবাবে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, 'বিমানের ফ্লাইট কেন বিলম্ব হয়, তা আমরা বিমান কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাইব। আমার জানা মতে, এ সমস্যা কাটিয়ে উঠছে বিমান। তবু কেন হচ্ছে, আমরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ব্যাখ্যা চাইব।'
গণশুনানিতে আরও অংশ নেন শাহজালাল বিমানবন্দরের সদ্য বিদায়ী নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এইচ এম তৌহিদ-উল আহসান, নবনিযুক্ত নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলামসহ বেবিচকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
Comments