ক্ষমতায় টিকে থাকতে ইমরান খানের কৌশল

ইমরান খান। রয়টার্স ফাইল ফটো

পাকিস্তানের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার দাবিতে পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। তবে, কঠিন অবস্থায় ক্ষমতায় টিকে থাকতে ইমরানও তার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন।

সেই কৌশল হিসেবে অনাস্থা ভোটের দিনে তার দলের সদস্যদের পার্লামেন্টে অনুপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে, এই কৌশল তাকে টিকিয়ে রাখতে পারবে কিনা তা জানতে অপেক্ষা করতে অনাস্থা ভোট পর্যন্ত।

রয়টার্সের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বুধবার ক্ষমতাসীন পিটিআই নেতৃত্বাধীন জোটের একটি শরীক দল বিরোধী দলের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছেছে এবং তারা জোট থেকে বের হয়ে গেছে। এরপর বিরোধীরা ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে অনাস্থা ভোটে আরও উৎসাহী হয়ে ওঠে।

রয়টার্সের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ইমরান খান ক্ষমতা হারালে পারমাণবিক শক্তিধর দেশটিতে আরও এক দফা অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে। কারণ সেখানে সামরিক বাহিনীর রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের দীর্ঘ ইতিহাস আছে।

ইমরান খানের কৌশল

ইমরান খান পিটিআইয়ের সব সদস্যকে ভোটের দিন পার্লামেন্টে অনুপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। যেন তার দলের কেউ গোপনে ভিন্নমতাবলম্বীদের সমর্থন না দিতে পারেন।

পিটিআই সদস্যরা পার্লামেন্টে উপস্থিত না থাকলেও ইমরানের কোনো ক্ষতি হবে না। কারণ প্রধানমন্ত্রী থাকতে তার ভোটে জেতার প্রয়োজন নেই। তার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাব যেন পাস না হয়। সেজন্য বিরোধীরা যেন ১৭২ না পান সেটাই নিশ্চিত করতে হবে ইমরান খানকে।

ইমরান খান সম্ভাব্য ভিন্নমতাবলম্বীদের নিরুৎসাহিত করতে এবং যারা পদ ছেড়েছেন তাদের বিরুদ্ধে আজীবন নির্বাচনী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে একটি পিটিশন দায়ের করেছেন।

অনাস্থা ভোট কীভাবে কাজ করে

পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠদের মাধ্যমে একজন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। পাকিস্তানের পার্লামেন্টে ৩৪২ জন সদস্য আছেন।

অর্থাৎ, একজন প্রার্থীকে প্রধানমন্ত্রী হতে ১৭২ জন সদস্যের ভোটের প্রয়োজন হয়। আবার তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে এবং তার মন্ত্রিসভা ভেঙে দিতে হলেও একই সংখ্যক অনাস্থা ভোটের প্রয়োজন হয়।

তাই ইমরান খানকে অনাস্থা ভোটে টিকে থাকতে হলে ৩৪২ আসনের পার্লামেন্টে অবশ্যই ১৭২ ভোট পেতে হবে।

ভোটের পর কী হবে?

অনাস্থা ভোটে ইমরান খান হেরে গেলে তিনি প্রধানমন্ত্রী পদ হারাবেন এবং তার মন্ত্রিসভা ভেঙে যাবে। এরপর পার্লামেন্টের ভোটে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করা হবে। নতুন প্রধানমন্ত্রী চাইলে এই পার্লামেন্টের মেয়াদ শেষ না পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে যে কোনো দলই প্রার্থী দিতে পারবে।

উল্লেখ্য বর্তমানে পালামেন্টের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৩ সালের আগস্টে। মেয়াদ শেষে নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে একটি সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা।

কিন্তু, নতুন প্রধানমন্ত্রী ২০২৩ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা না করে চাইলে তার আগেই একটি সাধারণ নির্বাচন দিতে পারবেন।

সংবিধান বিষয়ক বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি কোনো প্রার্থী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট অর্জন করতে না পারেন অর্থাৎ ১৭২ ভোট না পান। তাহলেও সংসদ ভেঙে দেওয়া যেতে পারে এবং একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।

ভোটের টাইমলাইন কী?

বিরোধী দলগুলো মার্চের শুরুতে অনাস্থা প্রস্তাব দাখিল করে এবং গত সোমবার তা পাকিস্তানের পার্লামেন্টে উত্থাপন করা হয়।

পার্লামেন্টের স্পিকার প্রস্তাবটি উত্থাপনের তিন দিন পর এবং সাত দিনের মধ্যে অনাস্থা ভোট দিতে হয়। তাই সবচেয়ে আগে ভোট হতে পারে বৃহস্পতিবার এবং সর্বশেষ আগামী সোমবার।

অনাস্থা ভোট কবে?

ইমরান খান একটি কঠিন অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হয়েছেন। ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়ার পর তিনি প্রধানমন্ত্রী হন।

তবে, পিটিআইয়ের সরকার গঠনের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল না। ফলে, অন্যান্য দলের সঙ্গে একটি জোট গঠন করতে হয়।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিটিআইয়ের ১৫৫ জন সদস্য আছেন। ইমরান খান জোট অংশীদারদের সহায়তায় ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হতে ১৭২ ভোটের সীমা অতিক্রম করেন। পিটিআইয়ের নেতৃত্বাধীন জোট গত ৩ বছরে তাদের সংখ্যা বাড়িয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Dhanmondi’s dining delights

In the 1990s, Dhanmondi was just another quiet neighborhood in Dhaka, with the occasional tinny tinkle of rickshaws on Satmasjid Road. If you craved something to renew your taste buds, Bailey Road, Gulshan, or Banani were the places to go.

13h ago