কলেরা প্রাদুর্ভাব নিয়ে জবাব দিতে হবে ঢাকা ওয়াসাকে

ছবি: রাশেদ সুমন/স্টার

এটি খুবই উদ্বেগজনক যে, ঢাকায় কলেরার প্রাদুর্ভাবে হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) মহাখালী হাসপাতালে রোগীর চাপ এতই বেশি যে, তাদেরকে অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে ৩৫০ শয্যার হাসপাতালটির প্রাঙ্গণে তাঁবু টানিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে।

এ বছরের ১৩ মার্চ থেকে দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, প্রতিদিন ১ হাজারেরও বেশি রোগী হাসপাতালটিতে ভর্তি হচ্ছেন। গত ২৬ মার্চ ভর্তি হয়েছিলেন প্রায় ১ হাজার ২০০ জন। অথচ, গত বছর এমন সময়ে এই হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগী ভর্তির সংখ্যা ছিল ৬০০ এর কাছাকাছি। বছরের এই সময়ে ডায়রিয়া ও কলেরার প্রকোপ স্বাভাবিক হলেও এ বছর রোগীর সংখ্যা আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে।

আমাদের প্রতিবেদকরা নগরীর বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং দেখতে পেয়েছেন, ঢাকা ওয়াসার পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যত্যয়ের কারণেই এই প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। অনেক এলাকায় বাসিন্দারা তাদের কলে সবুজাভ, বাদামী বা হলুদ রংয়ের দুর্গন্ধযুক্ত দূষিত পানি পাচ্ছেন। সাধারণত সুয়ারেজ লাইনের সঙ্গে মিলে গেলেই পানি এভাবে দূষিত হয়। পানির পাইপে ফুটো থাকার কারণে অথবা পুরানো ও পরিত্যক্ত পাইপগুলো বদলে নতুন পাইপ স্থাপনের সময় এই সমস্যা হয়ে থাকতে পারে। পানি সংকটে থাকা এলাকায় পাম্প থেকে সরাসরি পানি নিতে অবৈধ হোস পাইপ ব্যবহার করা হয়। এই পাইপগুলোতে প্রায়শই ছিদ্র থাকে, যেখান দিয়ে পানির সঙ্গে জীবাণু মিশে যায়। এটা সবচেয়ে অগ্রহণযোগ্য বিষয়।

যেসব এলাকায় ডায়রিয়া ছড়িয়েছে তার মধ্যে দক্ষিণখান ও যাত্রাবাড়ী অন্যতম। ২০১৯ সালে যাত্রাবাড়ী এলাকার পানির নমুনা পরীক্ষা করে স্থানীয় সরকার এবং পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়। তারা পানিতে কলিফর্ম ও হেটারোট্রফিক ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি শনাক্ত করে।

আমরা জানি না ওয়াসা এই সমস্যা সমাধানে কী ব্যবস্থা নিয়েছে। পানি দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ পুরোনো ও জরাজীর্ণ পাইপ প্রতিস্থাপন না করা। সব মিলিয়ে পরিষ্কার বোঝা যায় ওয়াসা যথেষ্ট উদ্যোগ নেয়নি।

প্রশ্ন হচ্ছে, সব বাসিন্দার জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করা কি ওয়াসার দায়িত্ব নয়? কেন এখনও মানুষকে পানের জন্য আলাদা পানি কিনতে হবে বা বাড়তি খরচ করে পানি বিশুদ্ধ করতে হবে? ২০১৯ সালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঢাকার ৯১ শতাংশ মানুষকে পানি ফুটিয়ে পান করতে হয় এবং এর জন্য বছরে প্রায় ৩৩২ কোটি টাকার গ্যাস পুড়ে। ওয়াসার এই মাত্রায় ব্যর্থতা সত্যিই অকল্পনীয়।

আমরা মনে করি, ওয়াসাকে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাবের দায় নিতে হবে। তাদের অবশ্যই সরবরাহ লাইনের দিকে নজর দিতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব লাইনের সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে। অন্যথায়, এই প্রাদুর্ভাব সহসাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

NBR officials end strike after govt warning

Following a stern government warning and mounting pressure from the country’s top business leaders, officials of the National Board of Revenue have withdrawn their shutdown.

3h ago