ইউক্রেনের ক্যাম্প থেকে ২ বাংলাদেশি যেভাবে মুক্ত হলেন
ইউক্রেনে মিকোলাইভ শহরের ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে থাকা ২ জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে পোল্যান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাস। তারা এখন পোল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসের শেল্টার সেন্টারে অবস্থান করছেন।
তাদের সঙ্গে সোমবার দুপুরে হোয়াটসঅ্যাপে কথা হয় দ্য ডেইলি স্টারের। তাদের একজনের নাম জহিরুল ইসলাম, অন্যজন নাম প্রকাশ করতে চাননি। ডিটেনশন সেন্টার থেকে ছাড়া পাওয়া এবং তারপর পোল্যান্ডে পৌঁছানোর দীর্ঘ যাত্রার কাহিনী বলেছেন তারা।
উল্লেখ্য, ইউক্রেনের মিকোলাইভের ক্যাম্পে এই ২ বাংলাদেশিসহ ৬০ জন ছাড়াও জুরাভিস শহরে আরেকটি ডিটেনশন ক্যাম্পে আরও ৫ বাংলাদেশিসহ ১২০ জন আটকে আছেন। মিকোলাইভের ক্যাম্পে এখনো কয়েকটি দেশের ৫৮ জন নাগরিক আটকে আছেন। এসব আটকে থাকা বেসামরিক নাগরিকদের ইউক্রেনীয় বাহিনী 'মানবঢাল' হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ আছে।
পোল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ইমেল ও টেলিফোনে আমরা ইউক্রেন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। বলেছি, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আমাদের নাগরিকদের এভাবে আটকে রাখতে পারেন না। তাদের মুক্ত করে দেন, সব দায় দায়িত্ব আমরা নেবো। যুদ্ধের সময় এই যোগাযোগ করা খুবই কঠিন। আমি বারবার তাদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছি। একটি ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে ২ জন বাংলাদেশিকে বের করে আনতে সক্ষম হয়েছি। আরেকটি ক্যাম্প থেকে ৫ জনকে বের করে আনার চেষ্টা চলছে। আজ আবার ইউক্রেন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব। আশা করছি তাদেরকেও বের করে আনতে সক্ষম হব।'
মিকোলাইভের ক্যাম্প থেকে বের হয়ে যেভাবে পোল্যান্ডে এসে পৌঁছান দ্য ডেইলি স্টারকে সেই বিবরণ দিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশি। তিনি বলেন, 'মিকোলাইভের ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে পোল্যান্ড সীমান্তের দূরত্ব প্রায় ৮০০ কিলোমিটার। পোল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত অবিশ্বাস্য আন্তরিকতা নিয়ে আমাদের জন্যে কাজ করেছেন। যে কারণে আমরা জীবন নিয়ে ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি।তার কাছে আমরা গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। দূতাবাস থেকে ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। পরে সেই চিঠি ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে ইউক্রেনীয় ভাষায় অনুবাদ করে দিতে বলে। আমরা সেই চিঠি পোল্যান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর অনির্বাণ নিয়োগীকে পাঠাই। অনির্বাণ নিয়োগী অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ইউক্রেনীয় ভাষায় অনুবাদ করে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠায়। তারা পরে ক্যাম্পে "নো অবজেকশন" পেপার দিলে আমরা ছাড়া পাই।'
'আমরা যেখানে ছিলাম সেখান থেকে সীমান্তের দূরত্ব প্রায় ৮০০ কিলোমিটার। বের হওয়ার পর দেখি তছনছ হয়ে গেছে।চারিদিকে ধ্বংসস্তুপ। যুদ্ধবিধ্বস্ত ওই এলাকায় কোনো যান চলছে না। আমরা সেখান থেকে প্রায় ২০-২৫ কিলোমিটার হেঁটে একটা শহরে পৌঁছানোর পর সেখান থেকে ট্যাক্সি ধরে পোল্যান্ডের কাছাকাছি লিভিভ শহরের একটা রেল স্টেশনে পৌঁছাই,' বলছিলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, 'সেখানে পৌঁছাতে ট্যাক্সিতে প্রায় ৩ ঘণ্টার মতো সময় লেগেছে। প্রতি ৫ কিলোমিটার পর পর ইউক্রেনীয় সেনাদের চেকপোস্ট ছিল। আমাদের কাছে ট্যাক্সি ভাড়া দেওয়ার মতো যথেষ্ট টাকা ছিল না। ভাড়ার অর্ধেকটা পরিশোধ করা হয়েছে দূতাবাসের মাধ্যমে। বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬-৭ হাজারের মতো ভাড়া আসে।'
দূতাবাস কীভাবে ট্যাক্সি ভাড়া পরিশোধ করেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'পোল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা ইউক্রেনের ভেতর যারা আছেন তাদের সহায়তার ব্যবস্থা রেখেছেন। ইউক্রেনের ভেতরে থাকা অনারারি কাউন্সিলর মাববুব আলম সরাসরি ড্রাইভারের কাছে টাকা পাঠিয়েছেন।'
'সীমান্ত পার হওয়ার পর রেডক্রসের গাড়ি আমাদের কাছের একটা শহরে নিয়ে আসে। রেডক্রসের সদস্যরা সেখান থেকে আমাদের একটি ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবস্থা করে দেয়। পোলান্ডের এক দম্পতি ওয়ারশতে যাচ্ছিলেন, তাদের সঙ্গে আমরা দুজন গতকাল রাতে ওয়ারশতে এসেছি।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের ক্যাম্পে আমরা ২ জন বাংলাদেশিসহ মোট ৬০ জন ছিলাম। আমরা বাংলাদেশি ২ জনই বের হয়েছি। বাকিরা সেখানে রয়ে গেছেন। তাদের অধিকাংশ জর্জিয়া, আজারবাইজান, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন ও কিউবার নাগরিক।'
Comments