রাজনীতি করা কি অপরাধ?

২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) প্রণয়নের পর থেকে তা বারবার সমালোচনাত্মক কণ্ঠস্বরকে লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়েছে। এর কিছু অতি-বিস্তৃত এবং অস্পষ্ট বিধানের নির্বিচারে প্রয়োগের মানে হচ্ছে এর ভুক্তভোগীরা সব শ্রেণি-পেশার। যদিও সবসময় আশঙ্কা করা হচ্ছিল, এর মাধ্যমে সাংবাদিক ও রাজনৈতিক কর্মীদের অসমভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হবে।

সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের (সিজিএস) একটি প্রকল্প ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলাগুলোর একটি পর্যালোচনা প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা গেছে, এই আইনের শিকার বেশিরভাগ ভুক্তভোগী হচ্ছেন রাজনীতি করা মানুষ। ২০২০-২০২১ সালের মধ্যে এই আইনের অধীনে অভিযুক্ত প্রায় ৪০০ জনের পেশা পর্যালোচনা করেছে সিজিএস। সেখানে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে কমপক্ষে ১৬৭ জন রাজনীতিবিদ ছিলেন। এই তালিকায় সাংবাদিকরা আছেন দ্বিতীয় স্থানে। এ সময়ের মধ্যে কমপক্ষে ১৬০ জন সাংবাদিক এই আইনে বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন।

সব মিলিয়ে এই আইনে করা মামলা ও আসামির সংখ্যা অবশ্য অনেক বেশি। কিন্তু, সিজিএসের ফলাফল যেখানে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠছে তা হলো উপরোক্ত দুই পেশার ভুক্তভোগীদের সংখ্যা। কারণ, এই দুই পেশার মানুষেরা জনমানুষের কাছাকাছি থাকেন, আর তারা জনগণের সবচেয়ে খাঁটি প্রতিনিধি। আমরা ডিএসএ মামলার আসামিদের আরও বিস্তৃত তথ্য-উপাত্তের জন্য অপেক্ষা করছি। তবে সতর্কতার সঙ্গে এটি বলা যায় যে, তাদের বেশিরভাগকে লক্ষ্যবস্তু করার কারণ হলো, তারা 'আপত্তিকর' কিছু বলেছিলেন বলে ধরে নেওয়া হয়।

এই আইনের পক্ষে বলতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বলেছেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতারও একটা সীমা আছে। আমরা তাতে বিনয়ের সঙ্গে দ্বিমত জানাতে চাই। কারণ, কথা বলার স্বাধীনতার অর্থই হলো দ্বিমত জানাতে পারা এবং চ্যালেঞ্জ করার স্বাধীনতা থাকা। কারও কথা যার ভালো লাগবে না, তিনিও এর প্রতিবাদ করতে পারেন। তবে, কণ্ঠরোধের চেষ্টা করতে পারেন না।

কিন্তু, এখন ঠিক এমনটাই ঘটছে। আইনমন্ত্রীর কাছ থেকে ডিএসএ মামলা দায়েরে অযাচিত ছাড়ের প্রতিশ্রুতির পর রাজনৈতিক কর্মী, অধিকার কর্মী, এমনকি সাংবাদিকরা ঝুঁকির মধ্যে আছেন। এই ধরনের মামলা দায়েরে ২টি অজুহাত হলো 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আঘাত করা' এবং 'ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা'। ২০২০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ডিএসএ আইনের অধীনে ১ হাজার ৫৩০ জনের বিরুদ্ধে ২ হাজারের বেশি মামলা দায়ের হয়েছে। যার মধ্যে কমপক্ষে ৯০ জনের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও 'সহিংসতা উস্কে দেওয়ার' অভিযোগে মামলা হয়েছে। এদের মধ্যে অন্তত ৫৫ জন সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের। একইভাবে আতঙ্কের বিষয় হলো, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হয়েছে কিনা তা নির্ধারণে পুলিশকে এককভাবে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

একটি আইনি নথিতে এই অনির্ধারিত শর্তাবলী এবং অস্পষ্ট বিধানগুলোর অস্তিত্ব দ্ব্যর্থহীনভাবে আমাদের অসহিষ্ণুতার সাধারণ সংস্কৃতির মতোই দায়ী বলে মনে করা হয়। এর প্রভাব কত দূর ছড়িয়েছে তা সিজিএসের ফলাফলে উঠে এসেছে। এখন সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে তরুণরা রাজনীতিতে যোগ দিতে ও নেতৃত্বের দায়িত্ব গ্রহণে ক্রমবর্ধমানভাবে অনীহা প্রকাশ করে আসছেন। কারণ ডিএসএ'র এ ধরনের লক্ষ্য ও অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যবহার তাদের কাছে ভুল বার্তা পাঠাচ্ছে। তাই তারা রাজনৈতিকভাবে সোচ্চার না হয়ে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হবে বলে আমরা আশা করতে পারি না। তাই আমরা আইনটি বাতিল করতে সরকারকে অনুরোধ করছি।  অথবা, অন্তত এর সন্দেহজনক বিধানগুলো সংশোধনের আহ্বান জানাচ্ছি।

Comments

The Daily Star  | English
IMF sets new loan conditions

Bangladesh needs more time for fully flexible exchange rate, says IMF

Bangladesh is currently going through a transition towards a fully flexible exchange rate regime, and the process may take time, said the International Monetary Fund (IMF).

8h ago