১৮ বছরেও শেষ হলো না হুমায়ুন আজাদ হত্যা চেষ্টার বিচার

২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে আনন্দ চিত্তে ঘরে ফিরছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রথা বিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছাত্র মিলনায়তনের কাছাকাছি এলে একদল আততায়ী তাকে আক্রমণ করে। হুমায়ুন আজাদকে হত্যার চেষ্টা করা হয়।

সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের চিকিৎসকরা ক্ষত বিক্ষত লেখকের শারীরিক অবস্থার অবনতিতে ভীত হয়ে দ্রুত বিদেশে পাঠানোর পরামর্শ দেন।

উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে পাঠানো হয় থাইল্যান্ডে। তখন বাংলাদেশ ও প্রবাসে গড়ে উঠেছে তীব্র আন্দোলন। তৎকালীন সরকারের দোসর জামাত-শিবিরকে দাবীতে জোটবদ্ধ হয়েছে প্রতিবাদী মানুষ। ব্যাংককের বামরুনগ্রাড হাসপাতালে নিরাপত্তার নামে বাংলাদেশের জ্যোতির্ময় লেখককে বন্দী করে রাখা হয়। থাইল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসের নির্দেশে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় অন্য নামে। নজরদারিতে রাখা হয় সার্বক্ষণিকভাবে। নিষিদ্ধ করা হয় দর্শনার্থীর প্রবেশ। তাকে কথা বলতে দেওয়া হয় না কোন গণমাধ্যমের সঙ্গে।

একমাত্র হুমায়ুন আজাদের বন্ধু ও প্রকাশক ওসমান গনিকে তার সঙ্গে থাকার অনুমতি দেয় দূতাবাস।

ওসমান গনি আমারও প্রকাশক। তাকে ফোন করে হুমায়ুন আজাদের একটি সাক্ষাৎকার নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করি। ওসমান গনি বলেন, কড়া নিষেধ আছে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার। তবে আমি বললে তিনি রাজী হবেন এবং আমি আপনার জন্য বলব।

হুমায়ুন আজাদ দেড় ঘণ্টা ধরে কথা বললেন আমার সঙ্গে। আক্রান্ত হবার পর সেটিই ছিল তার প্রথম সাক্ষাৎকার। ছাপা হলো অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রকাশিত 'সোনার বাংলা' পত্রিকায়। পরে সেটি 'শেকলে বাধা কফিন' নামে বই আকারে বের হয় আগামী প্রকাশনী থেকে।

২৭ ফেব্রুয়ারি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে লেখা হয়েছে একটি কালো অধ্যায়। এই দিবসটি বাংলা একাডেমির বইমেলা চত্বরে পালিত হচ্ছে গত ১৮ বছর ধরে। এবারের আয়োজনে বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আখতারুজ্জামান, বইমেলার সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ, সাংবাদিক জ ই মামুন, কবি মোহন রায়হান, কবি আসলাম সানি, গবেষক সৈয়দ জাহিদ হোসেন, মৌলি আজাদ, আকিদুল ইসলাম প্রমুখ। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রকাশক ওসমান গনি।

গত ১৮ বছরেও হুমায়ুন আজাদ হত্যা চেষ্টার বিচার না হওয়া এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার কোন স্মৃতি সংরক্ষণ না করায় বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

আমার মনে পড়ছে, ১৮ বছর আগে আমাকে হুমায়ুন আজাদ তার হত্যা চেষ্টার বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, এই বিচার ১০০ বছরেও শেষ হবে না। কারণ আগামী ১০০ বছর কোন না কোনভাবে বাংলাদেশ মৌলবাদীদের তলোয়ারের নিচেই থাকবে।'

হুমায়ুন আজাদ সন্ত্রাসীদের হাতে আক্রান্ত হবার মাত্র ৬ মাস পরেই মিউনিখে ঘুমের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যু রহস্য এখনো বাংলাদেশের মানুষের কাছে একটি বিশাল প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে আছে।

আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

'State intelligence agency' is attempting to form political party, Rizvi alleges

Doubts are growing as to whether there are subtle efforts within the government to weaken and break the BNP, he also said

3h ago