পাঠক প্রশংসা করলে আমি নিজেকে পুরস্কৃত মনে করি: মহিউদ্দিন আহমদ
চলছে অমর একুশে বইমেলা। প্রতিদিন মেলায় আসছে নতুন বই। এর মধ্যেই বাতিঘর প্রকাশনি থেকে এসেছে মহিউদ্দিন আহমদের 'আল-কায়দার খোঁজে'। বইমেলা ও নিজের নতুন বই নিয়ে তিনি কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।
দ্য ডেইলি স্টার: মেলায় আপনার 'আল-কায়দার খোঁজে' বইটি পাঠক চাহিদা অনেক। বইটি লিখতে কতদিনের পরিকল্পনা ছিল?
মহিউদ্দিন আহমদ: পরিকল্পনাটি ২ বছর আগের। তথ্য সংগ্রহ করে খসড়া পাণ্ডুলিপি তৈরি করতে লেগেছে দেড় বছরেরও বেশি। কাজ শেষ করেছি গত বছর নভেম্বরে। তারপর বই হিসেবে মেলায় প্রকাশ।
ডেইলি স্টার: 'আল-কায়দার খোঁজে' বইটি নিয়ে সংক্ষেপে ধারণা দিবেন?
মহিউদ্দিন আহমদ: একুশ শতকের শুরুতে বাংলাদেশে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে ধর্মীয় উগ্রবাদ। আল-কায়দা ও তালেবানের তৎপরতা নিয়ে বিদেশি পত্রিকায় খবর ছাপা হয়। সরকার এসব রটনা বলে উড়িয়ে দেয়। ঢাকার এক সাংবাদিক আল-কায়দার খোঁজে নামেন। ঢাকায় আসেন চ্যানেল ফোরের দুজন সাংবাদিক। গোয়েন্দারা তাদের পিছু নেয়। নানা ঘটনা-দুর্ঘটনায় বিষয়টি জট পাকিয়ে যায় এবং চার জনই গ্রেপ্তার হন। এক অনুসন্ধানী সাংবাদিকের ঝুঁকিপূর্ণ অভিযান আর বিপর্যয় নিয়ে গড়ে ওঠা এই কাহিনি।
ডেইলি স্টার: মেলাকেন্দ্রিক বই প্রকাশকে কীভাবে দেখেন?
মহিউদ্দিন আহমদ: অনেক প্রকাশক সারা বছর ধরেই বই প্রকাশ করেন। তবে মেলা উপলক্ষেই বেশি বই প্রকাশিত হয়। অনেক পাঠক মেলায় ঘুরে ঘুরে বই বাছাই করেন। ফলে দেখা যায়, মেলা উপলক্ষে যত বই প্রকাশিত ও বিক্রি হয়, অন্য সময় ততটা হয় না। এ ছাড়া অনেক প্রকাশকের একাধিক আউটলেট নেই। তারা মেলার ওপর ভরসা করেন বেশি। সম্প্রতি অনলাইনে বই সংগ্রহের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় মেলার গুরুত্ব কিছুটা কমেছে। তারপরও মেলা তো মেলাই। এর আবেদন থাকবে। এটাই একমাত্র প্ল্যাটফর্ম যেখানে লেখক, পাঠক আর প্রকাশকের মধ্যে সরাসরি সংযোগ ঘটে।
ডেইলি স্টার: আপনার গবেষণা সম্পাদনার পদ্ধতি কী?
মহিউদ্দিন আহমদ: খুব সবজ। বিষয়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নিই, পত্রিকা ও বই ঘেঁটে দরকারি তথ্যগুলো জুড়ে দিই। বইয়ে প্রাসঙ্গিক অনেক ছবি ব্যবহার করি। একেকটি ছবি আমার চোখে একেকটি দলিল। ছবি কথা বলে। এভাবেই তৈরি হয়ে যায় প্রাথমিক খসড়া। এরপর খসড়াটি নানান পরিচ্ছেদে সাজাই। শিরোনাম চূড়ান্ত হয় একদম শেষে। বইটি শেষমেশ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা আগেভাগে ঠিক করি না বা করতে পারি না। যেহেতু আমি হাতে লিখি, কম্পোজ হওয়ার পর বারবার প্রিন্ট এনে পরিমার্জন করি। এটি করে দেন প্রকাশক। চলনসই একটা খসড়া তৈরি হওয়ার পর পরিমার্জনের বা সম্পাদনার কাজে বেশ সময় লাগে। কখনো কখনো এক বছর বা তারও বেশি লেগে যায়। সম্পাদকীয় পরামর্শ পাই প্রকাশকের কাছ থেকেও। এরপর সব দায়িত্ব প্রকাশকের।
ডেইলি স্টার: ইতিহাস রাজনীতি নিয়ে কাজ করছেন অনেকদিন। পাঠকদের সাথে আপনার বোঝাপড়াটা কেমন?
মহিউদ্দিন আহমদ: আমাদের দেশের মানুষ রাজনীতি সচেতন। এ কারণেই আমার অনেক বই পাঠকপ্রিয় হয়েছে। প্রত্যেক বইয়ের ভূমিকায় আমার ইমেইল ঠিকানা দেওয়া থাকে। ফলে আমি পাঠকের কাছ থেকে সরাসরি ফিডব্যাক পাই। ভুল শুধরে নিতে পারি। আমি জরিপ করে দেখিনি। আমার অনুমান, আমার বেশিরভাগ পাঠকই তরুণ। তাদের মধ্যে রাজনৈতিক সংকীর্ণতা কম। তারা কখনো কখনো নানান বিষয় নিয়ে লিখতে বলেন। এটা আমাকে বিষয় নির্বাচনে কিছুটা সাহায্য করে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যোগাযোগের মাধ্যমে তাদের চাহিদা বুঝতে পারি। আর লেখালেখির মূল লক্ষ্যই হলো পাঠকের কাছে পৌঁছাতে পারা। চুড়ান্ত বিবেচনায় পাঠকই বিচারক। বই পড়ে পাঠক প্রশংসা করলে আমি নিজেকে পুরস্কৃত মনে করি।
Comments