চকরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনা

৫ সহোদরের শেষকৃত্য সম্পন্ন, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আহত রক্তিম

শুক্রবার বিকেলে নিহত ৫ ভাইয়ের স্মরণে বাড়িতে শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান হয়। ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজরা ইউনিয়নের মালুমঘাট এলাকার হাসিনাপাড়া গ্রামে রক্তিম সুশীলদের বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের ভিড়। গত ৮ ফেব্রুয়ারি পিকআপ চাপায় নিহত হয় তার ৫ ভাই। শুক্রবার বিকেলে নিহত ভাইদের স্মরণে বাড়িতে শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান হয়। আর দুর্ঘটনায় আহত রক্তিম জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে। 

ভিড়ের মধ্যে বাড়ির উঠানে শূন্য চোখে বসে ছিলেন তাদের মা বৃদ্ধা মনু রানী শীল। একপর্যায়ে তিনি উঠে দাঁড়ান এবং অশ্রুসিক্ত চোখে সাদা শাড়ি পরা ৫ পুত্রবধূকে নিয়ে আসেন নিহত সন্তানদের ছবির সামনে।

স্ত্রীরা যখন আচার পালন করছেন, তখন মা অশ্রুসিক্ত চোখে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছেন তার আরেক ছেলে রক্তিমের জন্য।

মনু রানী বলছিলেন, 'ভগবান আমার ছেলেকে বাঁচাও। দয়া করে তাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও। তুমি আর কতবার আমার পরীক্ষা নেবে।'

তাদের বাবা সুরেশের মৃত্যু হয় ৫ ছেলের মৃত্যুর ১০ দিন আগে। বাবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে গিয়ে ফেরার পথে ৯ ভাইবোনের মধ্যে ৫ ভাইয়ের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন-অনুপম শীল (৪৭), নিরুপম শীল (৪৫), দীপক শীল (৪০) ও চম্পক শীল (৩০) ও স্মরণ সুশীল (২৯)। এ দুর্ঘটনায় রক্তিম ও প্লাবন ২ ভাই এবং আরেক বোন হীরা আহত হন।

দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পরিবারের সব স্বপ্ন তছনছ হয়ে গেছে। আজ বিকেলে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে এসে এ হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখে প্রতিবেশীরাও চোখের জল ফেলেন।

নিহত ৫ সহোদরের স্ত্রীরা আচার পালন করছেন। ছবি: সংগৃহীত

নিহত অনুপম শীলের স্ত্রী পপি শীল (৩৫) কাঁদছিলেন। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জানি না ভাগ্যে কী আছে। আমার ২ সন্তান। তিনি (অনুপম) গ্রামের ডাক্তার ছিলেন। রোগী দেখে তিনি সংসার চালাতেন। চোখের পলকে সব শেষ হয়ে গেল।'

দীপক সুশীলের স্ত্রী পূজা সুশীল বলেন, 'আমার স্বামী কাতার প্রবাসী ছিলেন। বিদেশে তার একাধিক দোকান আছে। বাবার সৎকারের জন্য দেশে এসে তিনিও মারা গেলেন।'

তাদের একটি ছেলে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমরা জানি না বিদেশের দোকানগুলোর কী হবে।'

হিন্দু রীতি অনুযায়ী যদি কেউ স্বাভাবিকভাবে মারা যায়, তবে তার শেষকৃত্য করা হয় মৃত্যুর ১০ দিন পর। যদি কারো অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়, তবে মৃত্যুর ৪ দিন পর শেষকৃত্য করতে হয়।

অনুষ্ঠানের তদারকি করছিলেন আহত বোন মুন্নির স্বামী খগেশ চন্দ্র। অনুষ্ঠানে প্রায় ১ হাজার মানুষ উপস্থিত হয়েছে বলে জানান তিনি।

খগেশ বলেন, 'রক্তিমের অবস্থা খুবই সঙ্কটাপন্ন। এখন সে অচেতন অবস্থায় আছে।'

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শেখ ফজলে রাব্বি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মেডিসিন, নিউরোসার্জারি, রেসপিরেটরি মেডিসিন, অর্থোপেডিকস ও আইসিইউর পরামর্শকদের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে রক্তিমের চিকিৎসা পরিচালিত হচ্ছে।'

'তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে এবং তিনি অজ্ঞান আছেন,' বলেন এই চিকিৎসক।

গত মঙ্গলবার সকালে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় তাদের সদ্য প্রয়াত বাবার শেষকৃত্য সম্পন্ন করে শ্মশান থেকে ফেরার পথে পিকআপ ট্রাকের চাপায় ওই পাঁচ ভাই নিহত হয় এবং রক্তিম, প্লাবন ও আরেক বোন হীরা আহত হন।  প্লাবন সুস্থ হয়ে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আসেন। হীরা বর্তমানে চকরিয়ার মালুমঘাট খ্রিষ্টান মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।

মালুমঘাট এলাকার রিভাবাং গ্রামে নিজ বাড়িতে যাওয়ার জন্য ৯ ভাইবোন মহাসড়ক পার হওয়ার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় প্লাবন বাদী হয়ে চকরিয়া থানায় একটি মামলা করেন। পুলিশ পিকআপ ভ্যানটিকে আটক করলেও চালক ও হেলপার পলাতক আছে।

Comments

The Daily Star  | English

People will have to take to the streets for voting rights: Fakhrul

People will have to take to the streets like they did on August 5 to realise their voting rights, said BNP Secretary General Mirza Fakhrul Islam Alamgir today

1h ago