শুধু পড়ে থাকল হিমেলের টুপি আর মাফলারের টুকরো

রাত তখন ২টা বেজে ৩০ মিনিট। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনে রাস্তার পাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে কারও মাথায় পরার একটা টুপি, আর ছেড়া এক টুকরো মাফলার। তার পাশেই পড়ে আছে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া রক্তমাখা একটি মোটরসাইকেল।

এর কয়েক ঘণ্টা আগেই, পাশে পড়ে ছিল ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন হওয়া একটি মরদেহ। সে মরদেহটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়া থাকা এই টুপি আর মাফলারের মালিক কিংবা মোটরসাইকেলের চালক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মাহমুদ হাবিব হিমেলের।

মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার আগেই ঘটনাস্থলের পাশের একটি হোটেলে খাওয়া শেষ করেন রাবি শিক্ষার্থী হিমেল। এরপরে পৌনে ৯টার দিকে মোটরসাইকেলে হবিবুর হলের সামনের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় নির্মাণ সামগ্রী বহনকারী একটি ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে নিহত হন গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এই শিক্ষার্থী।

এ ঘটনায় আহত হন মোটরসাইকেলের পেছনে থাকা তারই বন্ধু রায়হান রিমেল। আহত অবস্থায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩১ নাম্বার ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।

এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে দুর্ঘটনাস্থলের পাশে থাকা ৫টি ট্রাকে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রীতে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।

এছাড়া, শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবন এবং প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে এ ঘটনায় বিচার দাবিতে প্রতিবাদে নামে।

পরবর্তীতে রাত ১২টায় উপাচার্য ভবনের সামনে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে নিহত শিক্ষার্থীর পরিবারকে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণসহ বেশ কয়েকটি দাবি জানান। দাবিগুলোর মধ্যে আছে- দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ট্রাকচালককে গ্রেপ্তার, প্রক্টর ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের প্রত্যাহার, ক্যাম্পাসের রাস্তা সংস্কার এবং সব জায়গায় পর্যাপ্ত লাইটের ব্যবস্থা করা।

দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর মি. লিয়াকত আলীকে অপসারণের মৌখিক সিদ্ধান্ত জানান। এছাড়া বাকি দাবিগুলো বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলে রাত ২টায় শিক্ষার্থীরা সাময়িকভাবে আন্দোলন স্থগিত করেন।

আন্দোলন চলাকালে রাত সাড়ে ১০টায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা হিমেলের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে নিয়ে যায়।

তবে, রাত আড়াইটায় যখন হিমেল আর পৃথিবীতে নেই। ক্যাম্পাসে হিমেলের মরদেহও নেই। এমনকি যখন নেই হিমেলের মৃত্যুর ঘটনায় শুরু হওয়া আন্দোলনও, যখন উপাচার্যের নির্দেশে থেমে গেছে ভবন নির্মাণের কাজ। তখনো ঘটনাস্থলে রাস্তার পাশে ফাঁকা মাঠে অযত্নে পড়ে আছে নিহত হিমেলের শীতার্ত শরীরে শেষবারের মত উষ্ণতা ছড়ানো একটি টুপি আর এক টুকরো ছেড়া মাফলার!

উল্লেখ্য, আজ বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নামাজে জানাজা শেষে হিমেলের মরদেহ তার বাড়ি নাটোরে পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাবি কর্তৃপক্ষ।

Comments

The Daily Star  | English

Yunus, Modi exchange Eid greetings

The interim government on Sunday shared both the letters on its Facebook page

2h ago