সাকিবের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে জিতল বরিশাল
প্রায় আড়াই বছর পর ফিফটির দেখা পেলেন সাকিব আল হাসান। তার ব্যাটে চড়েই লড়াইয়ের পুঁজি পেল ফরচুন বরিশাল। এরপর বল হাতেও দুর্দান্ত। তার ঘুনিতেই কোণঠাসা হয়ে পড়ে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। অবশ্য সাকিবকে দারুণ সহায়তা করেছেন আফগান স্পিনার মুজিব উর রহমান। ফলে আরও একটি দারুণ জয়ে চট্টগ্রাম পর্ব শেষ করল বরিশাল।
মঙ্গলবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে ১৪ রানে হারিয়েছে ফরচুন বরিশাল। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ১৯.১ ওভারে ১৪৯ রানে গুটিয়ে যায় তারা। জবাবে দুই বল বাকি থাকতে ১৩৫ রানে গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা।
লক্ষ্য তাড়ায় এদিন স্কোরবোর্ডে কোনো রান যোগ না হতেই দলের ইনফর্ম ব্যাটার জ্যাক উইলসকে হারায় চট্টগ্রাম। তাকে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলেন মুজিব। এরপর অবশ্য শামিম পাটোয়ারিকে ৬৯ রানের দারুণ জুটি গড়েন আরেক ওপেনার আফিফ হোসেন। তাতে মনে হয়েছিল সহজেই লক্ষ্য তাড়া করবে চট্টগ্রাম।
কিন্তু এরপর বল হাতে এসেই ম্যাচের পরিস্থিতি বদলে দেন সাকিব। আগের দিন টানা বোলিং করে স্পেল শেষ করেছেন প্রথম ১০ ওভারের মধ্যেই। আজ প্রথম ১০ ওভারে বল করতেই আসেননি সাকিব। একাদশ ওভারে বল হাতেই নিয়েই ভাঙেন ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা দ্বিতীয় উইকেট জুটি।
আফিফকে বোল্ড করে জুটি ভাঙেন অধিনায়ক। পরের ওভারে শামিমকে ফেরান মেহেদী হাসান রানা। দ্রুত দুই সেট ব্যাটারকে হারিয়ে ফের চাপে পড়ে যায় দলটি। এরপর আর সে চাপ থেকে বের হতে পারেনি চট্টগ্রাম। নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট পড়েছে। কেনার লুইসের জায়গায় চ্যাডউইক ওয়াল্টন প্রথমবারের মতো নেমে উইকেটে থিতু হয়েছিলেন। কিন্তু ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। প্রথমবারের মতো সুযোগ পেয়ে খালি হাতে ফিরেছেন আকবর আলী।
আট নম্বরে নেমে অবশ্য চেষ্টা করেছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ডোয়াইন ব্রাভো করা ১৮তম ওভারে দুটি চার ও একটি ছক্কা মেরে ম্যাচ জমিয়ে দিয়েছিলেন। তবে তার ক্যামিওতে কেবল হারের ব্যবধানই কমেছে।
দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৯ রানের ইনিংস খেলেন আফিফ। ৩২ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় এ রান করেন তিনি। ৩০ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ২৯ রান করেন শামিম। ১৩ বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৬ রানের ক্যামিও খেলেন মিরাজ।
৪ ওভার বল করে মাত্র ৯ রান খরচ করে ৩টি উইকেট নেন মুজিব। ৩টি উইকেট পেয়েছেন সাকিবও। তবে খরচ করেন ২৩ রান। এছাড়া ব্রাভো ও রানা ২টি করে উইকেট নিয়েছেন।
টস জিতলেই ফিল্ডিং। এবারের আসরে এমনটাই করে আসছে দলগুলো। সেখানে আগের দিন টস জিতে ব্যাটিং নিয়ে চমকে দিয়েছিলেন ফরচুন বরিশাল অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। চমকের ধারা ধরে রাখলেন এদিনও। যদিও প্রথমে ব্যাট করতে নামা বরিশালের সূচনাটা ভালো হয়নি। শুরুতেই মুনিম শাহরিয়ারকে মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর তালুবন্দি করেন শরিফুল ইসলাম।
তবে দ্বিতীয় উইকেটে আরেক ওপেনার ক্রিস গেইলকে নিয়ে দলের হাল ধরেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ৪২ রানের জুটি গড়েন এ দুই ব্যাটার। গেইলকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন উইল জ্যাকস। তবে লংঅনে দুর্দান্ত এক ক্যাচ ধরেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এ ক্যারিবিয়ানের বিদায়ের পর শান্তকে দলের হাল ধরেন সাকিব। স্কোরবোর্ডে ৩১ রান যোগ করেন তারা। শান্তকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন আফিফ। যদিও আউট হওয়ার পর কিছুটা অসন্তুষ্ট দেখা গেছে তাকে।
এরপর তৌহিদ হৃদয়কে দলের হাল ধরেন সাকিব। গড়েন ৫৫ রানের আরও একটি দারুণ জুটি। এ জুটি ভাঙেন মৃত্যুঞ্জয়। তার বল ওড়াতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেট অঞ্চলে আফিফের তালুবন্দি হন বরিশাল অধিনায়ক। কিন্তু এ জুটি ভাঙতেই টপাটপ উইকেট হারাতে থাকে বরিশাল। আর ১৭ রান যোগ করতেই হারায় ৬টি উইকেট। ফলে সাদামাটা স্কোর নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় দলটিকে।
প্রায় আড়াই বছর পর এদিন হাফসেঞ্চুরির মুখ দেখেছেন সাকিব। ৪৫ ইনিংস পর। শেষবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২০১৯ সালে চট্টগ্রামের এই মাঠেই ত্রিদেশীয় সিরিজে করেছিলেন অপরাজিত ৭০ রান। কাটায় কাটায় ৫০ রান আসে তার ব্যাট থেকে। ৩১ বলের ইনিংসে তিনি মেরেছেন সমান ৩টি করে চার ও ছক্কা। ছক্কা নাসুম আহমেদের করা ১৫তম ওভারে টানা তিনটি ছক্কা হাঁকান সাকিব।
এছাড়া শান্ত ২৮, গেইল ২৫ ও হৃদয় ২২ রান করেন। চট্টগ্রামের পক্ষে ১২ রানের খরচায় ৪টি উইকেট নিয়েছেন মৃত্যুঞ্জয়। ২টি শিকার শরিফুলের।
Comments