সাকিব জেতালেন বরিশালকে
বিপিএলে এবার দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে দেড়শ রান হয় হরহামেশা। চট্টগ্রামে তো দুইশর কাছাকাছি রান করেও নিশ্চিত থাকতে পারে না কোনো দল। সেখানে ফরচুন বরিশালের সংগ্রহ মাত্র ১৪৫ রান। কে জানত তখন এই রানই বিশাল হয়ে দাঁড়াবে খুলনা টাইগার্সের জন্য। দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে খুলনাকে কোণঠাসা করে রোমাঞ্চকর এক ম্যাচ জিতে নেয় বরিশালই।
সোমবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে খুলনা টাইগার্সকে ৬ রানে হারিয়েছে ফরচুন বরিশাল। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ১৮.৫ ওভারে ১৪৫ রানে অলআউট হয়ে যায় তারা। জবাবে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৩৯ রানের বেশি করতে পারেনি খুলনা। এর আগের লড়াইয়েও খুলনাকে হারিয়েছিল বরিশাল।
বরিশালের জয়ের এদিন মূল নায়কই ছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। বল হাতে অসাধারণ বোলিং করেছেন। আর ব্যাট হাতেও বরিশালের ইনিংস গড়তে অন্যতম ভূমিকা রেখেছেন তিনিই। তার দারুণ অলরাউন্ড নৈপুণ্যের কাছেই হারে মুশফিকুর রহিমের দল।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরুতেই সাকিবের ঘূর্ণিতে পড়ে খুলনা। টানা চার ওভার বল করে মাত্র ১০ রান খরচ করে ২টি উইকেট তুলে নেন সাকিব। অবশ্য তাকে দারুণ সঙ্গ দেন আফগান স্পিনার মুজিব উর রহমানও। উইকেট না পেলেও ৪ ওভারে তিনি দেন মাত্র ১৩ রান। টানা বল করে কোটা শেষ করা এ দুই বোলার ৪৮ বলে করে ডট দেন মোট ৩৭টি। ফলে প্রথম ১০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৩৫ রান তুলতে পারে খুলনা।
অবশ্য লক্ষ্যটা ছোট হওয়ায় শুরুতে দেখে শুনে খেলতে শুরু করেন খুলনার দুই ওপেনার আন্দ্রে ফ্লেচার ও সৌম্য সরকার। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। সেট হতে গিয়ে বল নষ্ট করেছেন। তাতে বেড়েছে চাপ। পরে চাপমুক্ত হতে গিয়ে রানের জন্য হাঁসফাঁস করে উল্টো উইকেট হারিয়ে আরও চাপ বাড়ান তারা। সাকিবের বলে সৌম্য ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে সীমানায় ধরা পড়েন। আর রনি তালুকদার হয়েছেন বোল্ড।
সাকিব ও মুজিবের কোটা শেষ হতে ইনিংসের দশম ওভারে বল হাতে আসেন ডোয়াইন ব্রাভো। এসেই নিয়ে খুলনা শিবিরে দেন জোড়া ধাক্কা। স্বদেশী আন্দ্রে ফ্লেচারকে ফেরানোর পর লঙ্কান অলরাউন্ডার থিসারা পেরেরাকে ফেরান এ ক্যারিবিয়ান। তাতে বড় চাপে পড়ে যায় খুলনা।
এরপর অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে দলের হাল ধরেন ইয়াসির আলী। অধিনায়ক কিছুটা দেখে খেললেও রানের গতি বাড়াতে থাকেন তিনি। নিয়মিত বাউন্ডারি রানের গতি সচল করার চেষ্টা করেন। ১৬তম ওভারের শেষ দুই বলে একটি করে চার ও ছক্কা হাঁকালে কিছুটা জমে ওঠে ম্যাচ।
তবে ১৭তম ওভারে বল করতে এসে ৭ রান দিয়ে ম্যাচ আবার নিজেদের দিকে হেলিয়ে দেন শফিকুল ইসলাম। তবে মেহেদী হাসান রানার করা পরের ওভারে একটি করে চার ও ছক্কায় ফের খুলনাকে ম্যাচে ফেরান মুশফিক। যদিও ফিরতে পারতেন প্রথম বলেই। ব্যক্তিগত ১৭ রানে গ্যালিতে তার ক্যাচ ছাড়েন মুজিব। কিন্তু শফিকুলের পরের ওভারে আর বাঁচতে পারেননি মুশফিক।
ফলে শেষ দিকে সমীকরণটা কঠিন হয়ে যায়। এরপর ইয়াসির সেকুগে প্রসন্ন ও শেখ মেহেদী হাসানকে নিয়ে চেষ্টা চালালেও শেষ রক্ষা করতে পারেননি। কেবল হারের ব্যবধানই কমিয়েছেন।
শেষ পর্যন্ত লড়াই করে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৭ রানের ইনিংস খেলেন ইয়াসির। ৩৪ বলে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান এ ব্যাটার। অধিনায়ক মুশফিক করেন ৩৩ রান। ২২ বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় এ রান করেন তিনি। বরিশালের পক্ষে ৪০ রানের খরচায় ৩টি উইকেট পান ব্রাভো।
আসরে এখন পর্যন্ত টস জিতে প্রতিটি দলই আগে ফিল্ডিং বেছে নিয়েছে। সেখানে সাকিব আল হাসান এদিন বেছে নিলেন ব্যাটিং। বিস্ময়ের শুরু তখন থেকেই। এরপর আরেক বিস্ময় উপহার দিয়ে ওপেনিংয়ে নামেন ডোয়াইন ব্রাভো। যদিও ক্যারিয়ারে আগেও ওপেনিংয়ে নেমেছিলেন এ ক্যারিবিয়ান। এমনকি আন্তর্জাতিক ম্যাচেও। তবে কেবল একটি ম্যাচেই।
এদিন গেইলের সঙ্গে ওপেনিংয়ে নেমে সুবিধা করে উঠতে পারেননি ব্রাভো। প্রথমবারের মতো এদিন এবারের আসরে খেলতে নেমে এ দুই ওপেনারকে ছাঁটাই করেন সৈয়দ খালেদ আহমেদ। আর দুই রান নিতে গিয়ে রানআউট হন তৌহিদ হৃদয়। ফলে ২৪ রানেই তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বরিশাল।
এরপর নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে দলের হাল ধরেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। স্কোরবোর্ডে ৭৯ রান যোগ করেন এ দুই ব্যাটার। কিন্তু এ জুটি ভাঙতে ফের ধসে পড়ে বরিশালের ব্যাটিং লাইন আপ। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে কোনো মতে দেড়শর কাছাকাছি রান করে দলটি।
দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৫ রানের ইনিংস খেলেন শান্ত। ৪০ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কার সাহায্যে এ রান করেন তিনি। অধিনায়ক সাকিবের ব্যাট থেকে আসে ৪১ রান। ২৭ বলে ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান এ অলরাউন্ডার। খুলনার পক্ষে ৪১ রানের খরচায় ৩টি উইকেট পান খালেদ। ২৫ রানের বিনিময়ে ২টি উইকেট নেন কামরুল ইসলাম রাব্বি। ২টি উইকেট পান ফরহাদ রেজাও।
Comments