শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা উদ্বেগজনক

দেশে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগতে থাকা শিক্ষার্থীর সংখ্যা এবং তাদের আত্মহত্যার ঘটনা বাড়ছে— এটি একটি গভীর উদ্বেগের বিষয়।

অলাভজনক সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশনের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, গত বছর অন্তত ১০১ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। ২০২০ সালে এই সংখ্যা ছিল ৭৯। অথচ এর আগে, ২০১৮ ও ২০১৭ সালে আত্মহত্যা করা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১১ জন ও ১৯ জন। 

আত্মহত্যা সাধারণত কম রিপোর্ট করা হয়, তাই প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। আমাদের কাছে এখনো বিগত বছরের সামগ্রিক জাতীয় আত্মহত্যার তথ্য না থাকলেও, এটি অনস্বীকার্য যে মহামারি মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের আরও অবনতি ঘটিয়েছে।

সরকার বর্তমানে মানসিক স্বাস্থ্য খাতে জাতীয় বাজেটের মাত্র শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশ ব্যয় করে। আরও খারাপ খবর হচ্ছে, দেশে প্রতি ১ লাখ মানুষের জন্য মাত্র শূন্য দশমিক ০৭৩ জন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আছেন বলে জানা গেছে।

পুরনো লুনাসি অ্যাক্ট বাতিল করে মানসিক স্বাস্থ্য আইন-২০১৮ প্রণয়ন করা হলেও, এলাকাভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। এর অর্থ হচ্ছে, বেশিরভাগ সেবা এখনো প্রধান প্রধান শহুরে এলাকাভিত্তিক। বেসরকারি হাসপাতালগুলো তুলনামূলক ভালো সেবা দিলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শুধু বিত্তবানদের পক্ষেই এগুলো থেকে সেবা নেওয়া সম্ভব হয়।

এমনকি শিক্ষিত পরিবারগুলোতেও মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে ভ্রান্তি আছে। তার ওপর মানসিক স্বাস্থ্যসেবার এমন ভয়াবহ অবস্থা। সব মিলিয়ে মহামারির প্রভাব পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটিয়েছে। ফলে আত্মহত্যার হার যে বেড়েছে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

বিশেষ করে শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন এবং নিজেদের ভবিষ্যত নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তার কারণে শিক্ষার্থীদের ওপর খারাপ প্রভাব পড়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পুরুষ শিক্ষার্থীরা। ২০২১ সালে আত্মহত্যা করা প্রতি ৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২ জন পুরুষ। আমাদের সমাজে পুরুষদের দুঃখ ও কষ্টের আবেগ প্রদর্শন করতে যে কীভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়, এর মাধ্যমে তা বোঝা যায়। নারীরা হয়তো তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বিষয়ে পেশাদার সাহায্য চাইতে পারেন, পুরুষরা প্রায়ই তা করতে পারেন না।

কোভিড সংক্রমণ বৃদ্ধির বিষয়ে যেমন আমাদের ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে, ঠিক তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত করার জন্যও আরও বিনিয়োগের জরুরি প্রয়োজন আছে। সরকারি খাতে আরও বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া দরকার, যাতে সেবা সবার জন্য আরও সহজলভ্য হয়। সমস্যার মধ্যে থাকা শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে লক্ষ্য আরও সুনির্দিষ্ট করে ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নয়, শিক্ষক, বাবা-মা এবং একাডেমিক প্রশাসকদেরও এ বিষয়ে কাজ করতে হবে।

মানুষকে মানসিক অসুস্থতা সম্পর্কে জানাতে এবং তাদের ভ্রান্তি দূর করতে সহায়তা করার জন্য সচেতনতামূলক কর্মসূচিরও প্রয়োজন আছে। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা শারীরিক অসুস্থতার মতো দৃশ্যমান নাও হতে পারে, তবে এর পরিণতি কিন্তু একই রকম বিপজ্জনক।

অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম  

Comments

The Daily Star  | English

Dengue testing fees to remain Tk 50 in govt hospitals

DGHS issues circular extending the fixed charges for dengue tests till Dec 31

20m ago