দু প্লেসির ব্যাটে চট্টগ্রামকে হারাল কুমিল্লা
প্রথমবারের মতো এবারের আসরে মাঠে নেমেই রান পেলেন লিটন দাস। প্রায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এক প্রান্তে আগলে রেখে অসাধারণ এক ইনিংস খেললেন প্রোটিয়া তারকা ফাফ ফু প্লেসি। তার সঙ্গে শেষ দিকে দারুণ এক ক্যামিও খেলেন স্বদেশী ক্যামেরুন ডেলপোর্টও। তাতে বড় সংগ্রহই পায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। এরপর বাকি কাজ সারেন বোলাররা। তাতে টানা জয়ের ধারায় ধরে রেখেছে দলটি। আসরে একমাত্র অপরাজিত দলই তারা।
সোমবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে ৫২ রানে হারিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ১৮৩ রান করে তারা। জবাবে ১৫ বল বাকি থাকতে ১৩১ রানে গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা।
বিপিএলে কোনো ম্যাচ ছিল না রোববার। তারপরও উত্তেজনায় ঠাসা ছিল দিনটি। মেহেদী হাসান মিরাজের দলে থাকা না থাকা নিয়েই ছিল আলোচনা। শেষ পর্যন্ত থেকে গেছেন। তবে দিনভর নাটকীয়তার প্রভাব পড়েছে তার পারফরম্যান্সে। বল হাতে দারুণ ছন্দে থাকা এ স্পিনার এদিন উইকেট শূন্য থেকে বেশ খরচ করে। ৩ ওভারে দিয়েছেন ৩০ রান। এমনকি প্রথমবারের মতো আসরে পূরণ করতে পারেননি বোলিংয়ে কোটাও। ব্যাট হাতেও ব্যর্থ।
এদিন পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে নেমেছিলেন মিরাজ। প্রথম পাঁচ বলে কোনো রানই করতে পারেননি তিনি। তবে পরের দুই বলে তানভির ইসলামকে টানা একটা ছক্কা ও চার মারেন। এরপর নাহিদুল ইসলামের বলে পড়েছেন স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে। ৯ বলে ১০ রান আসে তার ব্যাট থেকে।
এর আগেই অবশ্য তিনটি উইকেট হারিয়ে চাপে ছিল স্বাগতিকরা। দ্বিতীয় উইকেটে অবশ্য জ্যাক উইলস ও সাব্বির ৩০ রানের জুটি গড়েছিলেন। যা ইনিংসেরই সর্বোচ্চ জুটি।
ওপেনার কেনার লুইস এদিনও যথারীতি ব্যর্থ। ৪ রান করেছেন। এ আসরে এখন পর্যন্ত ছয়টি ম্যাচ খেলেও কেবল একটি ম্যাচে দুই অঙ্ক স্পর্শ করতে পেরেছেন। অথচ চট্টগ্রামের কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী, এই ওপেনিং পজিশনে নামার জন্যই কি-না তাদের সঙ্গে মিরাজের রেষারেষির শুরু। শেষ পর্যন্ত তাকে সরিয়ে দেওয়া হয় নেতৃত্ব থেকে।
দারুণ ছন্দ ধরে রেখে এদিনও ঘূর্ণির মায়াজাল বিছান নাহিদুল। চট্টগ্রামের ব্যাটিং লাইন আপ ধসিয়ে দেন তিনিই। শুরুতে কেনার লুইসকে আউট করার পর সাব্বির রহমানকেও তুলে নেন। ফেরান মিরাজকেও। ৪ ওভার বল করে মাত্র ১৭ রান খরচ করে পান এ তিন উইকেট।
মিরাজের বিদায়ের পর এক ছক্কা মেরে ব্যক্তিগত ৮ রানে ফিরে যান অধিনায়ক নাঈম ইসলাম। তবে স্বাগতিক শিবিরে বড় ধাক্কাটা এরপরই দেন তরুণ স্পিনার তানভির। বোল্ড করে দেন উড়ন্ত ছন্দে থাকা বেনি হাওয়েলকে। তাতে বড় চাপে পড়ে যায় দলটি।
এরপর মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীকে নিয়ে দলের হাল ধরার চেষ্টা করেছিলেন উইলস। তবে একটি করে চার ও ছক্কা মেরে ১৩ রানে মোস্তাফিজুর রহমানের কাটারে বিভ্রান্ত হয়ে আউট হন মৃত্যুঞ্জয়। এ ব্যাটার ফিরে গেলে এক প্রান্ত ধরে রেখে রানের গতি সচল রাখার চেষ্টা করেন উইলস। তবে তানভিরের বলে বোল্ড হয়ে যান তিনি। কার্যত তখনই ম্যাচ হেরে যায় চট্টগ্রাম। বাকি থাকে কেবল আনুষ্ঠানিকতা।
দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৯ রান করেন উইলস। ৪২ বলে ৭টি চার ও ৩টি ছক্কায় এ রান করেন তিনি। এছাড়া মিরাজ ও মৃত্যুঞ্জয় কেবল দুই অঙ্ক স্পর্শ করতে পেরেছেন। কুমিল্লার হয়ে নাহিদুলের সঙ্গে এদিন দারুণ বোলিং করেছেন মোস্তাফিজ, তানভির ও শহিদুলও। প্রত্যেকেই পেয়েছেন ২টি করে উইকেট।
এর আগে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামা কুমিল্লার শুরুটা ভালো হয়নি। শুরুতেই মাহমুদুল হাসান জয় স্বীকার হন দারুণ ছন্দে থাকা নাসুম আহমেদের বলে। কভারে সাব্বির রহমানের হাতে সহজ ক্যাচ তুলে দেন জয়। এরপর দু প্লেসিকে সঙ্গে নিয়ে দারুণ এক জুটি গড়েন লিটন। শুরুর ধাক্কা সামলে স্কোরবোর্ডে ৮০ রান যোগ করেন এ দুই ব্যাটার।
ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা এ জুটি লিটনকে ফিরিয়ে ভাঙেন নাসুম। ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লংঅফ সীমানায় সাব্বিরের ক্যাচে পরিণত হন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটার। এরপর স্কোরবোর্ডে ২ রান যোগ হতে কুমিল্লা অধিনায়ক ইমরুল কায়েসকে তুলে নেন বেনি হাওয়েল। তাতে ম্যাচে ফিরেছিল চট্টগ্রাম।
তবে অপর প্রান্ত ধরে রেখে রানের গতি বাড়ানোর কাজ চালিয়ে যান দু প্লেসি। স্বাগতিকদের হতাশ করে ক্যামেরুন ডেলপোর্টকে নিয়ে আরও একটি দারুণ জুটি গড়েন তিনি। অবিচ্ছিন্ন ৯৭ রানের জুটিতে দলকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেন এ দুই প্রোটিয়া তারকা।
শেষ পর্যন্ত ৮৩ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন দু প্লেসি। ৫৫ বলে ৮টি চার ও ৩টি ছক্কায় এ রান করেন এ ব্যাটার। ২৩ বলে ৫১ রানের দারুণ এক ক্যামিও খেলেন ডেলপোর্ট। ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় এ রান করেন এ প্রোটিয়া তারকা। ৩৪ বলে ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪৭ রান করেন লিটন।
চট্টগ্রামের পক্ষে ৪ ওভার বল করে ২৩ রানের খরচায় ২টি উইকেট পান নাসুম। ১টি উইকেট পেয়েছেন বেনি হাওয়েল।
Comments