সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা বন্ধ হতে পারে

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে ব্যাংকিং সেবা দেওয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক্ষেত্রে নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকার কথা বললেও এতে দেশে ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা জনপ্রিয় করার একটি পথ অঙ্কুরেই বিনষ্ট হতে পারে।

এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সামাজিক যোগাযোগ ব্যাংকিং সেবা চালুর জন্য দুটি ব্যাংকের করা আবেদন ফিরিয়ে দিয়েছে।

সম্প্রতি এক চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ফেসবুক মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ও ভাইবারের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে বিদেশি ওইসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হবে না।

আইসিটি নীতিমালায় 'বাংলাদেশের সব তথ্য বাংলাদেশের ভৌগলিক সীমার মধ্যে রাখা নিশ্চিত করার' কথা বলা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো অথবা মেসেঞ্জার প্লাটফর্মগুলো স্থানীয়ভাবে তথ্য সংরক্ষণ করে না, এতে গ্রাহকদের তথ্য বাইরে চলে যাওয়ার ঝুঁকি আছে। যা 'গ্রাহকের স্বার্থ এবং দেশের অর্থনৈতিক তথ্যভান্ডারের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে পারে।'

গত ১২ জানুয়ারি ব্যাংকগুলোর কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে দেওয়া ব্যাংকিং সেবার বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামীতে সব ব্যাংককে এ ধরনের সেবা দেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলতে পারে।

বাংলাদেশে কিছু ব্যাংক এরই মধ্যে মেসেঞ্জিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সেবা দেওয়া শুরু করেছে, করোনাভাইরাস মহামারির সময় যা আরও বেড়েছে।

এ সেবাগুলোর মধ্যে আছে অ্যাকাউন্টের স্থিতি অনুসন্ধান, অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট, এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে তহবিল স্থানান্তর, মোবাইল ফোন রিচার্জ করা এবং বিভিন্ন পরিসেবার বিল দেওয়া। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হোয়াটসআপ ব্যবহার করে এ সেবাগুলো দেওয়া হচ্ছে।

অনলাইন ব্যাংকিং এর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকায় কিছু ব্যাংক এরই মধ্যে, নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরিতে বিনিয়োগও করেছে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি) গত বছরের জুনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যাংকিং সেবা চালু করে এবং ১ মাস পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এর অনুমোদন পেতে আবেদন করে।

বাংলাদেশ ব্যাংক অক্টোবরে ওই আবেদন নাকচ করে দেয়। ইতোমধ্যে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে সেবা নিতে ১১ হাজার গ্রাহক এমটিবির প্ল্যাটফর্মে নিবন্ধন করেছেন।

এমটিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা পরিচালনার জন্য তারা জনবল নিয়োগ করেছেন।

অনেক দেশেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবার অনুমোদন দিয়েছে।

তরুণরা প্রথাগত ব্যাংকিংয়ের পরিবর্তে ডিজিটাল ব্যাংকিং বেশি পছন্দ করছে উল্লেখ করে সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, 'আমরা বৈশ্বিক মডেল অনুসরণ করেই সেবাটি চালু করেছি।'

২০২০ সালে ঢাকা ব্যাংক হোয়াটসঅ্যাপ ব্যাংকিং সেবা চালু করে।

ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমরানুল হক বলেন, 'কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত ছোট আকারে হলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা পরিচালনার অনুমতি দেওয়া।'

ইস্টার্ণ ব্যাংক লিমিটেড ফেসবুক মেসেঞ্জার ও ভাইবারের মাধ্যম ব্যবহার করে গেল বছর ২ লাখেরও বেশি গ্রাহককে ব্যাংকিং সেবা দিয়েছে।

প্রাইম ব্যাংক ৪ থেকে ৫ মাস আগে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যাংকিং সেবা চালু করেছে এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যে প্ল্যাটফর্মটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই প্ল্যাটফর্মে ইতোমধ্যে ৭০ হাজার গ্রাহক নিবন্ধন করেছেন।

বাংলাদেশে এসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর সাবেক সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির জানান, আইসিটি নীতিমালা অনুযায়ী, সব প্রতিষ্ঠানকে দেশের ভেতর তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে।

তিনি ভারতের উদাহরণ দিয়ে বলেন, সেখানে ২০১৯ সালে হোয়াটসঅ্যাপ তাদের সার্ভার স্থাপন করেছে, যাতে সেদেশের তথ্য স্থানীয়ভাবে সংরক্ষণ করা যায়।

আলমাস কবির বলেন, 'সরকার হোয়াটসঅ্যাপকে বাংলাদেশে আলাদা সার্ভার স্থাপনের জন্য বলতে পারে। এতে সমস্যার সমাধান হবে।'

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মী জানান, ডিজিটাল ব্যাংকিং-এ গ্রাহকরা ক্রমেই বেশি বেশি অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছেন, এমন অবস্থায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার করে ব্যাংকিং বন্ধ করা ঠিক হবে না'।

তিনি বলেন, 'আমাদের উচিত ভারতের মডেল অনুসরণ করা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা'।

তিনি জানান, হোয়াটসঅ্যাপও বাংলাদেশে সার্ভার বসাতে আগ্রহী হতে পারে, কারণ এতে তাদের আয় বাড়বে।

গত বছর সেপ্টেম্বরে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংককে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রাহকদের অভিযোগ গ্রহণ ও তা সমাধানের অনুমোদন দেয়। যার অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগের দৃষ্টিভঙ্গি ও সর্বশেষ নির্দেশের মধ্যে একটি গরমিল রয়েছে, বলে একজন ব্যাংকার মন্তব্য করেছেন।

তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ ব্যাংকের বিষয়টি পরিষ্কার করা উচিত।'

সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাশরুর আরেফিন জানান, প্রতি মাসে তাদের ব্যাংক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রাহকদের ৯ হাজারের মতো সমস্যার সমাধান করে।

তিনি বলেন, 'যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ধরনের সেবায় নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাহলে ওয়েবসাইট বা গ্রাহক সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে এই সেবা দিতে হবে'।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Drug smuggling via air, land routes on the rise

This grim picture emerges as Bangladesh, like other countries around the world, observes the International Day Against Drug Abuse and Illicit Trafficking today.

12h ago