মৃত্যুঞ্জয়ের হ্যাটট্রিকে জিতল চট্টগ্রাম

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর প্রথমে দুই বলে একটি ছক্কা ও চার যখন মারলেন এনামুল হক বিজয়, তখন উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল সিলেট সানরাইজার্সের স্বপ্নটা। কিন্তু দপ করে নিভে গেল এর পরপরই। পরের তিন বলে দুই সেট ব্যাটারসহ অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেনকে তুলে নিয়ে মৃত্যুঞ্জয় করলেন অসাধারণ এক হ্যাটট্রিক। তাতেই জয় নিশ্চিত হয়ে যায় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের।

শনিবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিলেট সানরাইজার্সকে ১৬ রানে হারিয়েছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ২০২ রান তোলে তারা। জবাবে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৮৬ রানের বেশি করতে পারেনি সিলেট।

মৃত্যুঞ্জয়ের হ্যাটট্রিকের আগ পর্যন্ত ম্যাচেই ছিল সিলেট। অসাধারণ সেই হ্যাটট্রিকই পাল্টে দেয় সব। তিন জন প্রতিষ্ঠিত ব্যাটারকে ফেরান এ পেসার। অথচ এদিন ক্যারিয়ারে প্রথমবার বিপিএল খেলতে নেমেছিলেন মৃত্যুঞ্জয়। প্রথম ম্যাচেই রাখেন দারুণ অবদান।

মৃত্যুঞ্জয়ের এ হ্যাটট্রিক বিপিএলের আসরে পঞ্চম। এর আগে ২০১২ সালে পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ সামির পর ২০১৫ সালে করেন আল-আমিন হোসেন। আর ২০১৯ সালের এক আসরেই আলিস আল ইসলাম, পাকিস্তানি পেসার ওয়াহাব রিয়াজ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে রাসেল হ্যাট্রিক করেন।

বড় লক্ষ্য তাড়ায় প্রথম ওভারেই দুটি বাউন্ডারি মেরে শুরু করেছিলেন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান লেন্ডল সিমন্স। কিন্তু পরের ওভারের শুরুতেই তাকে ছাঁটাই করেন নাসুম আহমেদ। এরপর কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়ে দলটি। টানা ১৪ বলে আসেনি কোনো বাউন্ডারি। চতুর্থ ওভারে কিছুটা হাত খুলে ব্যাট করার চেষ্টা করে দলটি। ফলে পাওয়ার প্লেতে আসে ৪৬ রান।

ইনগ্রামের সঙ্গে বিজয়ের দ্বিতীয় উইকেট জুটি ক্রমেই জমে উঠেছিল। রানের চাকাও সচল রাখার চেষ্টা চালান এ দুই ব্যাটার। মাঝে রেজাউর রহমান রাজার এক ওভারে তুলে নেন ২১ রান। গড়েন ১১২ রানের দারুণ এক জুটি। যা দ্বিতীয় উইকেটে চলতি আসরের সর্বোচ্চ জুটিও বটে।

কিন্তু এ জুটি ভাঙতে মাত্র ১৩ রানের ব্যবধানে ৩টি উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে যায় দলটি। এরপর ইংলিশ তারকা রবি বোপারাকে নিয়ে ফের দলের হাল ধরেন বিজয়। ৪২ রানের জুটি গড়েন এ দুই ব্যাটার। কিন্তু এরপর মৃত্যুঞ্জয় টানা তিন বলে তিন উইকেট তুলে ফের কোণঠাসা করে দেয় দলটিকে। ফলে আরও একটি হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় সিলেটকে।

দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৮ রানের ইনিংস খেলেন বিজয়। ৪৭ বলে ৯টি চার ও ৩টি ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান এ ওপেনার। ইনগ্রামের ব্যাট থেকে আসে ৫০ রান। ৩৭ বলে ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় এ রান করেন তিনি।

চট্টগ্রামের পক্ষে ৩৩ রানের খরচায় ৩টি উইকেট পান মৃত্যুঞ্জয়। ২টি উইকেট নেন নাসুম আহমেদ। তবে বেশ কিপটে বোলিং করেন তিনি। ৪ ওভারে রান দিয়েছেন ১৮টি।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে জ্যাক উইলসের সৌজন্যে শুরুটা দারুণ করে চট্টগ্রাম। কেনার লুইসকে সঙ্গে নিয়ে ৬২ রানের জুটি গড়েন এ ইংলিশ অলরাউন্ডার। যেখানে লুইসের অবদান মাত্র ৮ রান। এরপর অবশ্য চার রানের ব্যবধানে এ দুই সেট ব্যাটারকে ফিরিয়ে ম্যাচে ফিরেছিল সিলেট।

তবে তৃতীয় উইকেটে সাব্বির রহমানকে নিয়ে দলকে আরও একটি জুটি গড়ে সিলেটের হতাশা বাড়াতে থাকেন আফিফ হোসেন। স্কোরবোর্ডে ৪৭ রান যোগ করেন এ দুই ব্যাটার। তাতে বড় সংগ্রহের ভিত পেয়ে যায় দলটি। তবে তখনও মনে হয়েছিল দলীয় ইনিংস দুইশ কাছাকাছি গিয়ে শেষ হবে। কিন্তু এক প্রান্তে ঝড় তুলে সহজেই দুইশ পার করেন বেনি হাওয়েল।

মূলত বেশ কিছু ছোট ছোট জুটিতে দলের সংগ্রহ বড় করেন হাওয়েল। আফিফকে নিয়ে চতুর্থ উইকেটে ২৪, অধিনায়ক নাঈম ইসলামকে নিয়ে ৩৪ ও মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে ৩৩ রানের জুটি গড়েন এ ইংলিশ ব্যাটার। 

দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫২ রানের ইনিংস খেলেন উইলস। মাত্র ১৯ বলে নিজের ইনিংসটি সাজাতে ৭টি চার ও ৩টি ছক্কা মেরেছেন এ ওপেনার। আর শেষ দিকে ২১ বলে ৪৪ রানের ইনিংস খেলেন হাওয়েল। ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় এ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি।

অবদান ছিল বাংলাদেশের দুই ড্যাশিং ব্যাটার সাব্বির ও আফিফেরও। ২৮ বলে ৩৮ রান করেন আফিফ। ১টি চার ও ৩টি ছক্কায় এ রান করেন তিনি। সাব্বির অবশ্য দেখেশুনেই খেলেন। ২৯ বলে ৩টি চারে ৩১ রান করেন তিনি। শেষ দিকে ৪ বলে ২টি ছক্কায় ১২ রানে অপরাজিত থাকেন মিরাজ।

Comments

The Daily Star  | English

Fire disrupts regular activities at Secretariat

Most officials have vacated the Secretariat, with electricity disconnected, halting regular operations completely

13m ago