শুরু আর শেষের ধসে সাকিবদের কাছে মুশফিকদের হার

Mushfiqur Rahim
৪০ রান করলেও দলকে জেতাতে পারেননি মুশফিকুর রহিম। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

২২ বলে দরকার ছিল ৩১ রানে, হাতে ৪ উইকেট। ক্রিজে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে থিসারা পেরেরা। ম্যাচ হেলে ছিল খুলনা টাইগার্সের দিকেই। কিন্তু এরপরই বদলে যায় ছবি। বাকি ১৫ বলের মধ্যে বাকি ৪ উইকেট খুইয়ে হেরেই গেল তারা।

চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শনিবার খুলনাকে ১৭ রানে হারিয়েছে ফরচুন বরিশাল। আগে ব্যাট করে মাত্র ১৪১ রানের পুঁজি নিয়েই ম্যাচ জিতে নিয়েছে সাকিব আল হাসানের দল। ১৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে বরিশালের বোলিং হিরো রানা। ব্যাটিংয়ে ৩৪ বলে ৪৫ রান করে দলকে লড়াইয়ের পরিস্থিতি পাইয়ে দেন ক্রিস গেইল।

ম্যাচ জিততে শেষ দুই ওভারে ছিল রোমাঞ্চের আভাস। খুলনার দরকার ছিল ২১ রান। রানার প্রথম বলেই ক্যাচ উঠিয়েছিলেন খুলনার শেষ ভরসা মুশফিক। সহজ সে সুযোগ হাতছাড়া করেন শফিকুল ইসলাম। পরের বলেই ফরহাদ রেজার উইকেট পায় বরিশাল। দুই বল পর ছক্কার চেষ্টায় ক্যাচ উঠিয়ে বিদায় শরিফুল্লার। ঠিক পরের বলে স্কুপের চেষ্টায় উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে দেন মুশফিকও। শেষ হয়ে যায় ম্যাচ।

শেষের মতো শুরুতেও টপাটপ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় মুশফিকের দল। ৪০ রানে ৪ উইকেট পড়ার পর দলের হাল ধরেছিলেন মুশফিক। কিন্তু ম্যাচ জেতাতে পারেননি। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে তার বিদায় হয় ৩৬ বলে ৪০ রান করে। 

রান তাড়ায় নেমে প্রথম ওভারেই মুজিব উর রহমানের জোড়া আঘাতে বিপাকে পড়ে যায় খুলনা। মুজিবকে এক বাউন্ডারি মারার পর আরেকটির চেষ্টায় ক্যাচ উঠিয়ে বিদায় নেন আন্দ্রে ফ্লেচার। পরের বলেই মুজিবের ভেতরে ঢোকা বলে এলবিডব্লিউতে কাবু হয়ে খালি হাতে ফেরেন সৌম্য সরকার।

আরেক প্রান্তে পেসার শফিকুলও চাপ জারি রাখলে হাঁসফাঁস করছিল খুলনা। মুজিব তার প্রথম ৩ ওভারে দেন মাত্র ১০ রান। চাপ সরিয়ে রনি তালুকদার মারেন ছক্কা, শেখ মেহেদীর ব্যাটে আসে চার। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ৩০ রান তুলে তারা।

পাওয়ার প্লের পর পরই সাকিবকে ছক্কায় উড়িয়েছিলেন মেহেদী। পরের বলে ক্রিজ থেকে বেরিয়ে স্টাম্পিংয়ে ইতি তার। রনি খেলছিলেন সাবলীল। জ্যাক লিন্টটের অনেক বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে ব্যাটে নিতে পারেননি। আবেদনে সাড়া দিয়ে তাকে কিট বিহাইন্ড ঘোষণা করেন মাঠের আম্পায়ার। রিভিউ নিলে রিপ্লেতে একটি বাড়তি নয়েজ থাকলেও ব্যাট-বলে ছিল অনেক গ্যাপ। তবু আউটই বহাল রাখেন টিভি আম্পায়ার। ৪০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বসে খুলনা।

এরপর মুশফিকের সঙ্গে জুটি বাধেন ইয়াসির আলি। পঞ্চম উইকেটে আসে ৪০ বলে ৪৬ রান। দুজনেই এগিয়েছেন রানে-বলে তাল রেখে। তবে আস্কিং রানরেটের দাবি ছিল আরও বেশি। সেই দাবি মেটানোর চেষ্টায় মারতে গিয়ে উইকেট ছুঁড়ে দেন ইয়াসির।

এরপর থিসারা নেমে তুলেন ঝড়। সেই ঝড় বড় হতে পারেনি। শফিকুলের অনেক বাইরের বল উড়াতে গিয়ে দিয়ে ফেরেন ৯ বলে ১৯ করা থিসারা। আরেক লঙ্কান আগ্রাসী ব্যাটসম্যান সেকুগে প্রসন্ন নেমেও করেন হতাশ। সব চাপ চলে আসে মুশফিকের উপর। একা হাতে সেই চাপ জেতা হয়নি খুলনা অধিনায়কের।

এর আগে একাদশে চার বদল নিয়ে টস হেরে ব্যাট করতে নামে বরিশাল। তাদের ব্যাটিং অর্ডারেও দেখা যায় অনেক রদ বদল।  আগের ম্যাচগুলোতে মিডল অর্ডারে খেলানো হয়েছিল গেইলকে। এবার তাকে পাঠানো হয় ওপেনিংয়ে। সঙ্গী হিসেবে চমক চায়নাম্যান স্পিনার হিসেবে দলে থাকা জ্যাক লিন্টট।

টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ওপেনিং জুটি জমেনি। তৃতীয় ওভারে দলের ২৬ রানে বিদায় নেন লিন্টট। তবে বল নষ্ট করেননি তিনি। ৬ বলে ১১ রান করে ক্রিজ থেকে বেরিয়ে মারতে গিয়ে হন বোল্ড। বরিশালের ফাটকা থাকে চলমান। জিয়াউর রহমানকে নামানো হয় তিন নম্বর।  কিন্তু জিয়া করেন হতাশ। অনেকগুলো ডট বল খেলে উল্টো চাপ বাড়িয়ে দেন এই ডানহাতি। আরেক পাশে গেইল কিছু বাউন্ডারি বের করতে পারছিলেন। এক ছক্কায় জিয়া ফেরেন ১৩ বলে ১০ রানে।

চারে নামানো হয় নুরুল হাসান সোহানকে। তিনিও ব্যর্থ। তবে তার আগেই থিতু হওয়া ইনিংসটার সমাপ্তি টানেন গেইল। ক্যারিবিয়ান তারকা লেগ স্পিনার সেকুগে প্রসন্নকে উড়াতে গিয়ে ৩৪ বলে ৪৫ রান করে নেন বিদায়। গেইলের ৪৫ রানের ৩৬ রানই এসেছে বাউন্ডারি থেকে। শেখ মেহেদীর বলে ছক্কার চেষ্টায় বাউন্ডারি লাইনে সৌম্যর দারুণ ক্যাচে ধরা দেন সোহান।

ওপেনিং থেকে পাঁচে সরে যাওয়া শান্ত আর ছয়ে নামা তৌহিদ হৃদয় মিলে যোগ করেন ৩৫ রান, কিন্তু সেটা করতে লাগিয়ে ফেলেন ৩১ বল। হৃদয় বিদায় নেন ২১ বলে ২৩ করে।  স্লগ ওভারে দ্রুত রান আনার চাহিদা মিটছিল না। সাত নম্বরে নেমে প্রথম দুই বলে দুই চার মারার পর সাকিবও উড়তে পারেননি বেশি। ৬ বলে ৯ রান করে থিসারার বলে ক্যাচ দেন মিড উইকেটে। ১৫ বলে ১৯ করা শান্তও শিকার থিসারার।

খুলনার বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং, চোখ ধাঁধানো ফিল্ডিংয়ে শেষ দুই ওভারেও আসেনি পর্যাপ্ত রান। তবে ওই রান নিয়েই অসাধারণ বোলিংয়ে ম্যাচ বের করে নেয় বরিশাল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ফরচুন বরিশাল: ২০ ওভারে ১৪১/৯ (লিন্টট ১১, গেইল ৪৫, জিয়া ১০, সোহান ৮, শান্ত ১৯, হৃদয় ২৩, সাকিব ৯, শুক্কুর ২, মুজিব ৭, মেহেদি রানা ১*; কামরুল ৩-০-৩০-২, মেহেদি ৪-০-১৮-১, শরিফউল্লাহ ৩-০-২৭-১, থিসারা ৪-০-১৮-২, প্রসন্ন ৪-০২৮-১, ফরহাদ ২-০-১৮-২)

খুলনা টাইগার্স: ১৯ ওভারে ১২৪  (ফ্লেচার ৪, সৌম্য ০, রনি ১৪, শেখ মেহেদী ১৭, মুশফিক ৪০ , ইয়াসির ২৩, থিসারা ১৯, সেকুগে ২, রেজা ০, শরিফুল্লাহ ১, কামরুল ০*  ; মুজিব ২/২২, শফিকুল ১/৩০, সাকিব ১/২, লিন্টট ২/১৯, জিয়া ০/১১, রানা ৪/১৭)

ফল: ফরচুন বরিশাল ১৭ রানে জয়ী। 

Comments

The Daily Star  | English
 Al Bakhera killings Al Bakhera killings

Killings in Chandpur: Water transport workers go on strike

Water transport workers has started an indefinite strike from midnight

38m ago