তামিমের ঝড়ো সেঞ্চুরিতে উড়ে গেল সিলেট
'আশা করি তরুণরা এতোই ভালো খেলবে যে, আমাকে আর বাংলাদেশ দলে প্রয়োজন হবে না।' আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে সাময়িক বিরতি নিয়ে আগের দিনই এ কথাটি বলেছিলেন তামিম ইকবাল। কিন্তু তার এক দিন না পেরুতেই খেললেন অসাধারণ এক ইনিংস। তার ব্যাটে চড়ে সিলেট সানরাইজার্সকে রীতিমতো উড়িয়ে দিয়ে মধুর প্রতিশোধ নিল মিনিস্টার ঢাকা।
শুক্রবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ম্যাচে সিলেট সানরাইজার্সকে ৯ উইকেটে হারিয়েছে মিনিস্টার ঢাকা। প্রথম ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৭৫ রান করে সিলেট। জবাবে ১৮ বল বাকি থাকতেই লক্ষ্যে পৌঁছায় মাহমুদউল্লাহ বাহিনী। দুই দলের প্রথম লড়াইটিও ছিল এক পেশে। সেবার ঢাকাকে ৭ উইকেটে হারিয়েছিল মোসাদ্দেক হোসেনের দল।
সিলেট মূলত হেরে যায় তামিমের কাছেই। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে তুলে নেন দারুণ এক সেঞ্চুরি। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এটা তার চতুর্থ তিন অঙ্কের স্কোর। বিপিএলেই করলেন দুটি। বাংলাদেশের আর কোনো ব্যাটার একটি বেশি সেঞ্চুরি করতে পারেননি এ আসরে। ৬১ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া এ ব্যাটার শেষ পর্যন্ত খেলেন হার না মানা ১১১ রানের ইনিংস। ৬৪ বলের ইনিংসটি ১৭টি চার ও ৪টি ছক্কায় সাজান এ ওপেনার।
অথচ ইনিংসের তৃতীয় বলেই ফিরতে পারতেন তামিম। তাসকিন আহমেদের বলে স্লিপে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন এ ওপেনার। কিন্তু সে সুযোগ লুফে নিতে পারলেন না মোহাম্মদ মিঠুন। ঝাঁপিয়ে বলের নাগাল পেলেও ক্যাচ গেল ফসকে। আর সেই সঙ্গে ম্যাচটিও ফসকে যায় সিলেটেরও।
এরপরেও অবশ্য আরও দুটি জীবন পেয়েছেন তামিম। ব্যক্তিগত ৭১ রানেই দুইবার। মুক্তার আলীর করা একই ওভারে প্রথমে ক্যাচ ছাড়েন উইকেটরক্ষক এনামুল হক বিজয়। এক বল পর ক্যাচ শর্ট লেগে ছাড়েন আলাউদ্দিন বাবু। তখন অবশ্য জয়ের পাল্লা হেলে ছিল ঢাকার দিকেই।
মোহাম্মদ শাহজাদকে নিয়ে ওপেনিংয়ে নামা তামিম অবশ্য শুরুতে দেখে শুনেই খেলেন। শূন্য রানে জীবন পেয়ে প্রথম বাউন্ডারিটি মারেন নিজের দশম বলে। বাবুর করা সে ওভারে দুটি চার ও একটি ছক্কা মারেন তামিম। এরপর সানজামুল, তাসকিন, মোসাদ্দেকের টানা তিন ওভারে একাধিক বাউন্ডারি মারেন এ ওপেনার। পেয়ে যান হাফসেঞ্চুরি।
২৮ বলে হাফসেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার সময় তার সঙ্গী শাহজাদ ছিলেন ১৪ রানে। এরপর অবশ্য তামিমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যাট করতে থাকেন এ আফগানীও। জয় থেকে তিন রান দূরে থাকতে আলাউদ্দিন বাবুর বলে আউট হওয়ার আগে খেলেন ৫৩ রানের ইনিংস। ৩৯ বলে ৭টি চার ও ১টি ছক্কায় এ রান করেন তিনি।
মোহাম্মদ শাহজাদের সঙ্গে ১৭৩ রানের জুটিটি ওপেনিংয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তবে রান তাড়ায় সর্বোচ্চ ওপেনিং জুটি। সবমিলিয়ে পঞ্চম সর্বোচ্চ রানের জুটি এটা।
অথচ এদিন দারুণ লেন্ডল সিমন্সের এক সেঞ্চুরিতে বড় পুঁজিই সংগ্রহ করেছিল সিলেট। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে খেলেন ১১৬ রানের ইনিংস। যা এবারের আসরের প্রথম সেঞ্চুরি। সব আসর মিলিয়ে পঞ্চম সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। কিন্তু তার সেঞ্চুরি ম্লান করে দিলেন তামিম।
এদিন টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা দারুণ করেছিল সিলেট। মাশরাফি বিন মুর্তজার করা ইনিংসের প্রথম ওভারেই দুটি বাউন্ডারি মেরে শুরু করেন ওপেনার এনামুল হক বিজয়। শুরুতেই বেশ হাত খুলে খেলতে থাকেন এ ওপেনার। এরপর তার সঙ্গে যোগ দেন সিমন্স। ওপেনিং জুটিতে এ দুই ব্যাটার স্কোরবোর্ডে যোগ করেন ৫০ রান।
বিজয়কে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন ইবাদত হোসেন। ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে স্কয়ার লেগ সীমানায় কায়েস আহমেদের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এ ব্যাটার। জুটি ভাঙতেই ৫ রানের ব্যবধানে আরও দুটি উইকেট হারায় সিলেট। কায়েসের বলে গুগলি না বুঝে বোল্ড হয়ে যান মোহাম্মদ মিঠুন। আর মাশরাফির বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরেন কলিন ইনগ্রাম।
দ্রুত তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া দলকে এক প্রান্তে ঝড়ো ব্যাটিং করে এগিয়ে যেতে থাকেন সিমন্স। সঙ্গী হিসেবে পান পান রবি বোপারা ও অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেনকে। চতুর্থ উইকেটে ৬৩ ও পঞ্চম উইকেটে ৩৮ রানের জুটি গড়ে আউট হন সিমন্স।
৫৯ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া সিমন্স ১৯তম ওভারে আন্দ্রে রাসেলের বলে আউট হওয়ার আগে দলের হয়েছেন ১১৬ রানের ইনিংস খেলেছেন। ৬৫ বলের ইনিংসটি সাজাতে ১৪টি চার ও ৫টি ছক্কা হাঁকান এ ক্যারিবিয়ান তারকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৮ রান করেন বিজয়।
Comments