যে কারণে এক উইকেটের দুই চরিত্র
বিপিএল শুরুর আগেই যা নিয়ে ছিল শঙ্কা সেই উইকেট প্রথম থেকেই এসেছে আলোচনায়। দুদিন খেলা হওয়ার পর ক্রিকেটারদের কাছ থেকেই উইকেট পাওয়া যাচ্ছে অভিযোগের সুর। এই দুদিনে আবার দিনে রাতের খেলায় পাওয়া গেছে ভিন্নতা। দিনের ম্যাচে রান পেতে ধুঁকেছেন ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু একই উইকেট সন্ধ্যার পর আচরণ করেছেন ভিন্ন। রান এসেছে বেশ ভালো গতিতেই।
শুক্রবার বিপিএলের প্রথম ম্যাচে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স করতে পারে ১২৫ রান। ওই রান তাড়া করতে গিয়েও ১৯ ওভার পর্যন্ত খেলতে হয় ফরচুন বরিশালকে।
একই উইকেটে ওই দিন রাতেই মেলে ভিন্ন দৃশ্য। মিনিস্টার ঢাকা আগে ব্যাট করে করে ফেলে ১৮৩ রান। এক ওভার আগেই বিশাল ওই রান তাড়া করে জিতে যায় খুলনা টাইগার্স।
শনিবার দ্বিতীয় দিনেও দিনের আলোয় উইকেট ছিল কঠিন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে ১৯তম ওভারে গিয়ে অলআউট হওয়া সিলেট সানরাইজার্স করে মাত্র ৯৬ রান। ৯৭ রান তুললেই ম্যাচ প্রায় হেরে বসছিল কুমিল্লা। ১৯তম ওভারে গিয়ে কোন রকমে ২ উইকেটের জয় পায় তারা।
উইকেট নিয়ে ম্যাচের শেষে হতাশা জানায় দুদলই। কুমিল্লা অধিনায়ক ইমরুল জিতলেও জানান উইকেট ছিল কত কঠিন। সিলেটের হয়ে কথা বলতে এসে বিজয় বলেন, টি-টোয়েন্টির জন্য আদর্শ ছিল না মিরপুরের বাইশ গজ।
রাতে বেলা খেলতে নেমেই রানের দেখা পায় চট্টগ্রাম। আগে ব্যাট করে তারা বোর্ডে জমায় ১৬১ রান। তাড়া করতে গিয়ে ১৩০ রানে গুটিয়ে ৩০ রানে হারে ঢাকা।
একই উইকেটের দুই আচরণের পেছনে অবশ্য যৌক্তিক কারণই আছে। মিরপুরের উইকেটের চিরায়ত ধরণ মন্থরই। দিনের বেলা সেই মন্থরতার প্রভাব থাকে পুরোটা। দ্বিতীয় দিনের উইকেটে ছিল টার্ন, অসমান বাউন্সও। কিন্তু একই উইকেট রাতের বেলা বদলে যাওয়ার প্রধান কারণ আসলে শিশির।
ভরা শীতের মৌসুমে সন্ধ্যার পর পরই নামে ঘন কুয়াশা। শিশিরে বল স্কিড করায় বল ব্যাটসম্যানদের ব্যাটে যায় বাড়তি গতিতে। অর্থাৎ দিনের বেলা যে বল ব্যাটসম্যানের কাছে থেমে ধীরে যেত, রাতে সেটা যায় ভালো গতিতে। শিশিরের কারণে সমস্যা হয় বোলারদেরও। বল ঠিকমতো গ্রিপ করতে না পারায় জায়গায় ফেলতে পারেন না তারা।
অবশ্য শুধু উইকেটের উপর দায় চাপিয়ে দিনের ম্যাচের রানখরায় ব্যাখ্যা করলে কিছুটা একপেশে হতে পারে। দুদিনই ব্যাটসম্যানরা দিয়েছেন বাজে ব্যাটিংয়ের মহড়া। উইকেটে প্রচুর রান না থাকলেও দিনের বেলাতেও ভাল ব্যাট করলে ১৪০ রান করা সম্ভব। কিন্তু পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে ব্যাটিং হয়নি জুতসই।
ফরচুন বরিশালের প্রধান কোচ খালেদ মাহমুদ সুজনও জানালেন এই কারণের কথা, 'প্রথম ম্যাচে আমার মনে হয় না উইকেট এত খারাপ ছিল। কিন্তু দুটো দলই আমরা মনে হয় ভাল ব্যাট করিনি। এর থেকে ভাল ব্যাট করা উচিত ছিল। হয়ত ১২৫ হয়েছে, যেটা ১৫০-১৬০ রানের উইকেট ছিলই। আর রাত্রে যেটা হয়েছে কুয়াশা পড়ছে, বল স্কিড করছে, গ্রিপ করছে না ওইরকম যার কারণে ব্যাটিং সহজ মনে হচ্ছে না। আবার এটাও দেখেন সূর্যটা গত দুদিন ধরে পাচ্ছে না। যখন পানি দিয়ে যখন রোল করছে তখন ভেতরে আর্দ্রতাটা থেকে যাচ্ছে। মাঠকর্মীরা আশা করছে সূর্য উঠবে সেটা নেই।'
রোববার বিপিএলের বিরতি। সোম ও মঙ্গলবার ঢাকায় প্রথম পর্বের আরও দুদিনের খেলা। এরপর বিপিএল যাবে চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামের উইকেট সাধারণত হয় রান প্রসবা। এবার সেসব ম্যাচে দেশি-বিদেশি ব্যাটসম্যানরা কেমন করেন, কতটা বিনোদন যোগাতে পারেন দেখার বিষয়।
Comments