ফিরে দেখা-২০২১: বিচারবহির্ভূত হত্যা ৬৭, কারাগারে মৃত্যু ৭৮, গুম ৬

ছবি: স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে সম্প্রতি বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এবং এর সাবেক ও বর্তমান ৭ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন অভিযোগকে একেবারে উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ সরকার।

যদিও মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বলছে, কেবল ২০২১ সালেই দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর  ঘটনা পাওয়া গেছে ৬৭টি। এ ছাড়া, কারা হেফাজতে ৭৮ আসামির মৃত্যু এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে ৬ জনের গুম হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

বিচারবহির্ভূত হত্যা ও পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু

আসক'র হিসেবে, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা পাওয়া গেছে ৬৭টি। অভিযোগ আছে, র‌্যাব, পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), নৌপুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা এসব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।

প্রথম সারির কয়েকটি জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এসব তথ্য সংগ্রহ করেছে আসক। সে হিসেবে দেশে প্রতি মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ৬টিরও বেশি।

আসক'র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়, এ সময়ের মধ্যে র‌্যাব ২৫টি, পুলিশ ১৯টি, ডিবি পুলিশ ৬টি, নৌপুলিশ ১টি এবং বিজিবি ১৬টি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ আছে।

র‌্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ, এই বাহিনী গ্রেপ্তারের আগে 'ক্রসফায়ারে' ২৩টি এবং গ্রেপ্তারের পর 'ক্রসফায়ারে' ২টি হত্যাকাণ্ড ঘটায়। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ, গ্রেপ্তারের আগে 'ক্রসফায়ারে' ২টি, গ্রেপ্তারের আগে 'নির্যাতনে' ১টি ও গ্রেপ্তারের পর 'নির্যাতনে' ৩টি হত্যাকাণ্ড ঘটায়।

এ ছাড়া, গ্রেপ্তারের আগে পুলিশের সঙ্গে 'বন্দুকযুদ্ধে' ১২ জন নিহত এবং পুলিশি হেফাজতে 'হার্ট অ্যাটাকে' ১ জনের মৃত্যুর অভিযোগ আছে। ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ, গ্রেপ্তারের আগে 'ক্রসফায়ারে' ৩টি, গ্রেপ্তারের পর 'ক্রসফায়ারে' ১টি হত্যাকাণ্ড ঘটায় এবং গ্রেপ্তারের পর এই বাহিনীর 'নির্যাতনে' ২ জনের মৃত্যু হয়।

পাশাপাশি, গ্রেপ্তারের আগে নৌপুলিশের সঙ্গে 'বন্দুকযুদ্ধে' ১ জন নিহতের অভিযোগ আছে। বিজিবির বিরুদ্ধে অভিযোগ, গ্রেপ্তারের আগে 'ক্রসফায়ারে' ১২টি হত্যাকাণ্ড ঘটায় এবং গ্রেপ্তারের আগে এই বাহিনীর সঙ্গে 'বন্দুকযুদ্ধে' ৪ জন নিহত হন।

এসব হত্যাকাণ্ডে নিহতদের মধ্যে ১৩ জন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বলে জানায় আসক।

আসক'র মাস-ভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জানুয়ারিতে গ্রেপ্তারের আগে 'ক্রসফায়ারে' ২টি হত্যাকাণ্ড ঘটে। অভিযোগ আছে, ১টি ঘটায় র‌্যাব এবং অপরটি বিজিবি। নিহতদের মধ্যে রোহিঙ্গা ১ জন।

ফেব্রুয়ারিতে গ্রেপ্তারের আগে 'ক্রসফায়ারে' ৭টি হত্যাকাণ্ড ঘটে। অভিযোগ আছে, ৪টি ঘটায় র‌্যাব এবং ৩টি বিজিবি। নিহতদের মধ্যে রোহিঙ্গা ৬ জন।

মার্চে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটে ৫টি। অভিযোগ আছে, র‌্যাব গ্রেপ্তারের আগে 'ক্রসফায়ারে' ১টি হত্যাকাণ্ড ঘটায়। বিজিবি গ্রেপ্তারের আগে 'ক্রসফায়ারে' ২টি হত্যাকাণ্ড ঘটায় এবং গ্রেপ্তারের আগে এই বাহিনীর সঙ্গে 'বন্দুকযুদ্ধে' ১ জন নিহত হন। এ ছাড়া, গ্রেপ্তারের আগে আনসারের সঙ্গে 'বন্দুকযুদ্ধে' ১ জন নিহতের অভিযোগ রয়েছে।

এপ্রিলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটে ১০টি। অভিযোগ আছে, ৮টি ঘটায় পুলিশ (গ্রেপ্তারের আগে 'নির্যাতনে ১টি ও গ্রেপ্তারের আগে 'বন্দুকযুদ্ধে' ৭টি), র‌্যাব গ্রেপ্তারের আগে 'ক্রসফায়ারে' ১টি হত্যাকাণ্ড ঘটায় এবং ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর 'নির্যাতনে' ১ জনের মৃত্যু হয়। এদের মধ্যে রোহিঙ্গা ১ জন।

মে মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটে ৬টি। র‌্যাবের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারের আগে 'ক্রসফায়ারে' ১টি এবং ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে ৫টি (গ্রেপ্তারের আগে 'ক্রসফায়ারে' ৩টি, গ্রেপ্তারের পর 'ক্রসফায়ারে' ১টি এবং গ্রেপ্তারের পর 'নির্যাতনে' ১টি) হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আছে।

জুনে গ্রেপ্তারের আগে 'ক্রসফায়ারে' হত্যাকাণ্ড ঘটে ২টি। অভিযোগ আছে, ১টি ঘটায় র‌্যাব এবং অপরটি পুলিশ।

ছবি: স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

জুলাইয়ে গ্রেপ্তারের আগে 'ক্রসফায়ারে' হত্যাকাণ্ড ঘটে ৬টি। অভিযোগ আছে, ৫টি ঘটায় র‌্যাব এবং অপরটি বিজিবি। নিহতদের মধ্যে রোহিঙ্গা ২ জন।

আগস্টে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটে ৬টি। অভিযোগ আছে, ৫টি ঘটায় র‌্যাব (গ্রেপ্তারের আগে 'ক্রসফায়ারে' ৩টি ও গ্রেপ্তারের পর 'ক্রসফায়ারে' ২টি)। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ, গ্রেপ্তারের আগে এই বাহিনীর সঙ্গে 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত হন ১ জন। নিহতদের মধ্যে রোহিঙ্গা ১ জন।

সেপ্টেম্বরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটে ৪টি। র‌্যাবের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারের আগে 'ক্রসফায়ারে' ১টি এবং বিজিবির বিরুদ্ধে ২টি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আছে। এ ছাড়া, পুলিশি হেফাজতে 'হার্ট অ্যাটাকে' ১ জনের মৃত্যুর অভিযোগ রয়েছে।

অক্টোবরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটে ৭টি। র‌্যাবের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারের আগে 'ক্রসফায়ারে' ১টি এবং বিজিবির বিরুদ্ধে ১টি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আছে। এ ছাড়া, পুলিশি হেফাজতে 'হার্ট অ্যাটাকে' ৫ জনের মৃত্যুর অভিযোগ রয়েছে।

নভেম্বরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটে ১২টি। র‌্যাবের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারের আগে 'ক্রসফায়ারে' ৬টি এবং বিজিবির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারের আগে 'ক্রসফায়ারে' ১টি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আছে। এ ছাড়া, গ্রেপ্তারের পর পুলিশি 'নির্যাতনে' ২ জনের মৃত্যু এবং গ্রেপ্তারের আগে বিজিবির সঙ্গে 'বন্দুকযুদ্ধে' ৩ জন নিহতের অভিযোগ রয়েছে। নিহতদের মধ্যে রোহিঙ্গা ২ জন।

কারা হেফাজতে মৃত্যু

আসক'র হিসেবে, জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত দেশে কারা হেফাজতে ৭৮ আসামির মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে বিচারাধীন ৫২ হাজতি এবং দণ্ডপ্রাপ্ত ২৬ কয়েদি রয়েছেন।

এদের মধ্যে ঢাকায় ৩৯ জন (২৬ হাজতি, ১৩ কয়েদি), চট্টগ্রামে ১৪ জন (১১ হাজতি, ৩ কয়েদি), রাজশাহীতে ৬ জন (৪ হাজতি, ২ কয়েদি), খুলনায় ৩ জন (১ হাজতি, ২ কয়েদি), বরিশালে ৩ হাজতি, সিলেটে ৫ জন (৩ হাজতি, ২ কয়েদি), রংপুরে ১ কয়েদি এবং ময়মনসিংহে ৭ জন (৪ হাজতি, ৩ কয়েদি) মারা যান।

গুম

আসক জানায়, জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে ৬ জনের গুম হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে আসক'র বিবরণীতে জানানো হয়, তাদের মধ্যে ১ জন চাকরিজীবী, ২ জন ব্যবসায়ী, ২ জন শিক্ষার্থী (মাদ্রাসার ১ জন) এবং ১ জন ইমাম রয়েছেন।

উল্লেখ্য, আসক'র হিসেবে, ২০২০ সালে দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ছিল ২২২টি। এ ছাড়া, কারা হেফাজতে ৭৫ আসামির মৃত্যু হয় এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে ৬ জনের গুম হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়।

Comments

The Daily Star  | English

Enforced disappearances: Eight secret detention centres discovered

The commission raised concerns about "attempts to destroy evidence" linked to these secret cells

1h ago