অভিজ্ঞরাই ঢাকার শক্তি, অভিজ্ঞরাই হতে পারেন দুর্বলতা

টি-টোয়েন্টি অভিজ্ঞদের খেলা নাকি তরুণদের খেলা? এই নিয়ে আছে বিতর্ক। তবে অভিজ্ঞ হোক বা তরুণ, নিশ্চিতভাবে খেলাটা মূলত পারফর্মারদের। আরও নির্দিষ্ট করে বললে বয়স যতই হোক, সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারা পারফর্মাররাই এই সংস্করণে রাখতে পারেন ছাপ। সেদিক থেকে ঢাকার দলটি কেমন?

এবার বিপিএলে ঢাকার দল নিয়ে নাটক কম হয়নি। শুরুতে দলটির স্বত্ব পেয়েছিল রুপা ফেব্রিকস ও মার্ন স্টিল। কিন্তু প্লেয়ার্স ড্রাফটের আগের রাতে ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে না পারায় তাদের বাদ দিয়ে দেয় বিসিবি। ঢাকার দলের মালিকানা আপাতত নিজেদের হাতেই রেখেছে বোর্ড।

স্বত্ব পাওয়ার পর ঢাকা স্টার্স নাম দিয়ে সৌম্য সরকারকে ড্রাফটের বাইরে থেকে দলে নেওয়া হয়েছিল। বিসিবি মালিকানা নেওয়ায় সব বদলে যায়। ড্রাফটের বাইরে থেকে মাহমুদউল্লাহকে নেয় তারা। টিম ম্যানেজমেন্টে যুক্ত হন হাবিবুল বাশার সুমন।

প্লেয়ার্স ড্রাফট চলাকালে দলের টেবিলেও বসতে দেখা যায় তাদেরই। প্রথম পর্বে দ্বিতীয় ডাকের সুযোগ পেয়ে ঢাকা দেরি না করেই নিয়ে নেয় তামিম ইকবালকে। দল নিশ্চিত হওয়ার পরপরই টেবিলে এসে যোগ দেন তামিমও। বোঝা যায়, তামিম ও ঢাকার আগেই কথার্বাতা হয়ে গিয়েছিল। এরপর আরেক সিনিয়র ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজাকেও দলে নেয় তারা।

মাহমুদউল্লাহ, মাশরাফি ও তামিম তিনজনই 'এ' ক্যাটাগরির ক্রিকেটার। তাদের পারিশ্রমিক ৭০ লাখ টাকা। অর্থাৎ এই তিন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের পেছনেই ঢাকার খরচ হয়েছে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা।

ঢাকা দলের নেতৃত্বে কোনো সংকট নেই। টি-টোয়েন্টি দলের বর্তমান অধিনায়ক, ওয়ানডে দলের বর্তমান অধিনায়কের সঙ্গে বিপিএলের সফল ও জাতীয় দলের সাবেক নেতাও আছেন। তাদের অভিজ্ঞতার ঝুলি এতই সমৃদ্ধ যে এই তিনজন মিলেই স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে খেলে ফেলেছেন ৬৬৩ ম্যাচ।

দেশের মাঠের কন্ডিশন ও কন্ডিশন অনুযায়ী পরিস্থিতি তাদের হাতের তালুর মতই চেনা। ঢাকার শক্তিও মূলত এখানেই। বড় টুর্নামেন্ট জেতা, বড় মঞ্চের চাপ সামলানো তাদের জন্য তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়ার বিষয়।

কিন্তু অভিজ্ঞ হলেও লম্বা সময় ধরে খেলার মধ্যে নেই তামিম ও মাশরাফি দুজন। স্বীকৃত ক্রিকেটে তামিম সবশেষ ম্যাচ খেলেছেন গত ৬ অক্টোবর, নেপালে এভারেস্ট প্রিমিয়ার লিগে। ওই লিগের আগেও আরেকটি বড় বিরতির মধ্যে ছিলেন তিনি। জাতীয় দলের হয়ে তামিম শেষ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন গত বছরের মার্চে।

এক বছরের বেশি সময় আগে যেকোনো পর্যায়ের কোনো ক্রিকেটে ম্যাচ খেলেছেন মাশরাফি। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে খেলেছিলেন তিনি। এরপর খেলা দূরে থাক, অনুশীলনেও দেখা যায়নি তাকে। মাঝে ওজন ছাড়িয়েছিল ১০০ কেজি, ব্যস্ত ছিলেন রাজনৈতিক কাজে। ওজন কমিয়ে ফের খেলায় ফিরছেন বিপিএল দিয়েই। মাশরাফির সামনে তাই অপেক্ষায় কঠিন চ্যালেঞ্জ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ভালো না গেলেও সেদিক থেকে মাহমুদউল্লাহই আছেন খেলার মাঝে।

এই তিন অভিজ্ঞ ছাড়াও আরও অভিজ্ঞদের ছড়াছড়ি ঢাকায়। পেসার রুবেল হোসেনের সঙ্গে আছেন শফিউল ইসলাম। অলরাউন্ডার শুভাগত হোমকেও নিয়েছে ঢাকা। শুভাগত ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতে নিয়মিত পারফর্মার। গত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টিতে দেড়শোর বেশি স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন, কার্যকর অফ স্পিনেও রাখতে পারেন ভূমিকা।

জহুরুল ইসলাম অমি, শামসুর রহমান শুভদের নিয়েও ঢাকার ব্যাটিং লাইনআপে বয়স্কদের প্রধান্য। স্পিন বিভাগ সামলাতে আছেন আরাফাত সানি।

জাতীয় দলের ওপেনার নাঈম শেখকে দলে নিয়েছে ঢাকা। তামিমের সঙ্গে ইনিংস ওপেন করতে পারেন তিনি। এই জায়গা ঢাকার জন্য একটু উদ্বেগের কারণ। রান পেলেও টি-টোয়েন্টির চাহিদার বিপরীতে ব্যাট করেন নাঈম। তামিমেরও শুরুতে লাগে সময়। এই দুজন পাওয়ার প্লেতে দ্রুত শুরু আনতে পারেন কিনা তা দেখার বিষয়। এই জায়গায় তেড়েফুড়ে ব্যাট করতে পারদর্শী তরুণ ইমরানুজ্জামানকে কাজে লাগাতে পারে ঢাকা।

বিদেশি খেলোয়াড় বাছাইয়েও চমক দেখাতে পারেনি বিসিবির মালিকানাধীন দল। আফগানিস্তানের মাঝারি মানের চারজন ক্রিকেটারকে দলে নিয়েছে তারা। ড্রাফটের বাইরে থেকে তাদের দলে খেলবেন নাজিবুল্লাহ জাদরান। ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি জুতসই। লেগ স্পিনার কাইস আহমেদ রাখতে পারেন ভালো ভূমিকা। শ্রীলঙ্কার পেসার ইসুরু উদানার স্কিলসেট বাংলাদেশের উইকেটের জন্য আদর্শ। কিন্তু তিনি খুব একটা ছন্দে নেই।

ড্রাফট থেকে ঢাকা নিয়েছে আফগানিস্তানের মোহাম্মদ শাহজাদকে। ওপেনিংয়ে বিবেচনায় থাকতে পারেন তিনিও। আরেক বিদেশি আফগান বাঁহাতি পেসার ফজল হক ফারুকি স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে খেলেছেন কেবল দুই ম্যাচ।

ঢাকা:

সরাসরি: মাহমুদউল্লাহ, নাজিবউল্লাহ জাদরান (আফগানিস্তান), ইসুরু উদানা (শ্রীলঙ্কা), কাইস আহমেদ (আফগানিস্তান)।

ড্রাফট থেকে দেশি: তামিম ইকবাল, রুবেল হোসেন, মাশরাফি বিন মর্তুজা, শুভাগত হোম চৌধুরী, নাঈম শেখ, আরাফাত সানি, ইমরানুজ্জামান, শফিউল ইসলাম, জহুরুল ইসলাম অমি, শামসুর রহমান শুভ ও ইবাদত হোসেন।

ড্রাফট থেকে বিদেশি: মোহাম্মদ শাহজাদ (আফগানিস্তান), ফজল হক ফারুকি (আফগানিস্তান)।

ড্রাফট শেষ হওয়ার পর: রিশাদ হোসেন।

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda departs for London

The air ambulance ferrying the former prime minister departed from Hazrat Shahjalal International Airport at 11:47pm

4h ago