পেটে কাঁচি রেখেই সেলাই, ৬৪৩ দিন পর অপসারণ
ফরিদপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক তরুণীর পেটে অস্ত্রোপচারের সময় চিকিৎসকের রেখে দেওয়া একটি কাঁচি ৬৪৩ দিন পর আবার অস্ত্রোপচার করে বের করা হয়েছে।
২০২০ সালের ৩ মার্চ মনিরা খাতুন (১৯) নামের ওই তরুণীর অস্ত্রোপচারের সময় প্রায় ছয় ইঞ্চি লম্বা কাঁচি রেখে সেলাই করে দিয়েছিলেন চিকিৎসক।
এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ওই হাসপাতালের পরিচালক সাইফুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছে তা খতিয়ে দেখার জন্য একটি কমিটি করা হবে। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মনিরা খাতুন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার ঝুটিগ্রামের বাসিন্দা খাইরুল মিয়ার মেয়ে। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়।
মনিরার ভাই মো. কাইয়ুম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গত বছর ৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোল্লা সরফউদ্দিনের অধীনে মনিরার অস্ত্রোপচার হয়। তার পেটে ছয় ইঞ্চি লম্বা মিডিয়াম সাইজ অর্টারি ফরসেপ রেখেই সেলাই করা হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের আগে আট দিন এবং অস্ত্রোপচারের পরে নয় দিন সে হাসপাতালে ভর্তি ছিল।
তিনি বলেন, অস্ত্রোপচারের কিছু দিন পর মনিরার বিয়ে হয়। তখন সে পেটের ব্যথায় ভুগছিল। এরপর সে অন্তঃসত্ত্বা হয়। কিন্তু গর্ভপাত হওয়ায় স্বামী তাকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেন। এর পর বিভিন্ন গ্রাম্য চিকিৎসক দিয়ে তার চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু ব্যথা কমেনি। ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে প্রায় দুবছর চলে। ব্যথা অসহনীয় হয়ে ওঠায় বুধবার তাকে মুকসুদপুরে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নেওয়া হয়। সেখানে এক্সরে করে তার পেটে কাঁচি থাকার ব্যাপারে ডাক্তার নিশ্চিত হন। শুক্রবার ফরিদপুরে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে আবার এক্সরে করা হয়।
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফরিদপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মনিরার অস্ত্রোপচার করা হয়। এতে অংশ নেন সার্জারি বিভাগ অধ্যাপক রতন কুমার সাহা, সহযোগী অধ্যাপক মোল্লা সরফউদ্দিন ও রেজিস্ট্রার সালেহ মো. সৌরভ।
রতন কুমার সাহা বলেন, তিন ঘণ্টা অস্ত্রোপচার করে কাঁচিটি সফলভাবে অপসারণ করা হয়েছে। মনিরার সংজ্ঞাও ফিরেছে। দীর্ঘদিন কাঁচিটি পেটে থাকায় নাড়ি পেঁচিয়ে গিয়ে পচন ধরেছিল।
তিনি আরও বলেন, মনিরা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। ৭২ ঘণ্টা পর তার অবস্থা সম্পর্কে বলা যাবে।
মনিরার ভাই বলেন, 'আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য শুক্রবার রাতে কোতয়ালী থানায় গিয়েছিলাম। ওসি বলেছেন, আগে রোগী সুস্থ হোক, তার পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।'
Comments