গোলকধাঁধাঁয় ৯ হাজারের বেশি চাকরিপ্রার্থী

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো একটি প্রকল্পে নিয়োগের জন্য ভাইভার চূড়ান্ত ফলাফলের অপেক্ষায় রয়েছেন ৯ হাজার চাকরিপ্রার্থী। প্রকল্পের শিক্ষার্থী তালিকা চূড়ান্ত না হওয়ায় এই ফল ঘোষণায় দেরি করছে ব্যুরো।

এই প্রার্থীরা ২০১৯ সালের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর গত বছরের জানুয়ারিতে স্কুলের বাইরের শিশু শিক্ষা কার্যক্রমের (ওএসসিই) অধীনে উপজেলা/আরবান প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর (ইউপিসি) পদের জন্য বিভিন্ন ধাপে ভাইভা দেন।

চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির একটি সাব-কম্পোনেন্ট ওএসসিই। স্কুলে ভর্তি হতে পারেনি কিংবা স্কুল ছেড়ে দিয়েছে এমন ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই প্রকল্প চলার কথা এবং এর জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় প্রায় ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

প্রাথমিকভাবে ৬১টি জেলায় ৩১ হাজার শিক্ষাকেন্দ্রের মাধ্যমে এমন প্রায় ৯ লাখ ৩১ হাজার শিক্ষার্থীকে শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। এই শিক্ষাকেন্দ্রগুলো পরিচালনার জন্য উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো মোট ৫৩টি এনজিওকে ইমপ্লিমেন্টেশন সাপোর্ট এজেন্সি হিসেবে নিয়োগ দেয়।

তবে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো এখনো শিক্ষার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করতে পারেনি।

শিক্ষাকেন্দ্রের কার্যকর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর ৩০০ জন ইউপিসি নিয়োগ দেওয়ার কথা ছিল। প্রকল্পের বিবরণ অনুসারে, এনজিও এবং উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো জেলা পর্যায়ের অফিসগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের দায়িত্ব থাকবে ইউপিসিদের।

ইউপিসি নিয়োগের জন্য ২০১৯ সালের ৩০ জুন শূন্যপদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটকে (আইইআর) পরীক্ষা পরিচালনায় পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

এই পদের জন্য ২৪ হাজারের বেশি প্রার্থী আবেদন করেন। ২০২০ সালের ২৫ জানুয়ারি মধ্যে লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষা নেওয়া শেষ হয়। এর পর ২৩ মাস পেরিয়ে গেলেও পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রার্থী বলেন, 'আমরা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোকে ফল প্রকাশের অনুরোধ জানালে তারা বলেন আইইআর-এ যোগাযোগ করতে। আইইআর-এ গেলে তারা বলেন, তারা কেবল পরীক্ষা পরিচালনার জন্য নিয়োগ পেয়েছেন। ফল প্রকাশ করতে পারে শুধুমাত্র উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো।'

অপর এক প্রার্থী বলেন, একজন উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো কর্মকর্তা তাদেরকে এনজিওগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছেন। কারণ এনজিওগুলোর কাছ থেকেই তারা বেতন পাবেন। 'এটা হাস্যকর। কারণ ইউপিসি হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হবে এনজিওগুলোর অধীনে পরিচালিত শিক্ষাকেন্দ্রগুলোর কার্যকারিতা নিরীক্ষণ করা। যদি আমারা এনজিওর অধীনে কাজ করি তাহলে কীভাবে মান পর্যবেক্ষণ এবং তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করতে পারব?'

যোগাযোগ করা হলে আইইআর-এর পরিচালক অধ্যাপক আবদুল হালিম জানান, তাদের দায়িত্ব কেবল পরীক্ষার মান ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, 'আমরা ফল প্রকাশ এবং প্রকল্পের ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছুই জানি না।'

প্রকল্পের চাহিদা অনুযায়ী, বিএনএফই ৬১টি জেলার প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। ২০১৯ সালে এই কমিটিগুলোকে শিক্ষার্থীদের তালিকা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

২০২০ সালের জানুয়ারির মধ্যে ৯ লাখ ৩১ হাজার শিক্ষার্থীর একটি তালিকা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোতে জমা দেওয়া হয়েছিল।

কমিটিগুলোকে এই তালিকা আরও যাচাইপূর্বক চূড়ান্ত করে জমা দিতে বলেছে ব্যুরো। তবে এই কাজটি গত ২ বছরেও সম্পূর্ণ হয়নি।

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক আতাউর রহমান বলেন, 'তালিকা চূড়ান্ত না করে ইউপিসি নিয়োগ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। কারণ, শেষ পর্যন্ত এমন জায়গাও আমরা পেতে পারি যেখানে এই প্রকল্পের অধীনে শিক্ষার্থী না পাওয়ার কারণে শিক্ষাকেন্দ্র খুলতে পারব না।'

সার্বিক দেরির কারণ হিসেবে তিনি মহামারিকে দায়ী করেছেন।

তিনি বলেন, 'তালিকা চূড়ান্ত হয়ে গেলে আমরা শিক্ষাকেন্দ্রগুলো শুরু করব এবং ইউপিসি নিয়োগ দেব।'

তিনি যোগ করেন, 'একটি বিষয় পরিষ্কার হওয়া উচিত, নিয়োগের পরে ইউপিসিরা এনজিওগুলোর সঙ্গে কাজ করবে। তারা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর কর্মচারী হবেন না। ব্যুরো কেবলমাত্র মান ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য নিয়োগ প্রক্রিয়া সহজতর করেছে।'

Comments

The Daily Star  | English
US attack on Iran nuclear sites

Iran denounces US attack as ‘outrageous’

Iran says 'no signs of contamination' after US attacks on key nuclear sites

8h ago