মেঘলা দিনে যেমন হলো বাংলাদেশের বোলিং
বৃষ্টিতে বেশিরভাগ সময় ভেসে যাওয়ায় এই ম্যাচ থেকে দুদলের পাওয়ার আছে সামান্য। তবে যেটুকু খেলা হলো তাতে কন্ডিশন ছিল বোলিং সহায়ক। সেই সুবিধা কতটা কাজে লাগাতে পারলেন বাংলাদেশের বোলাররা?
প্রথম দিনে খেলা হয়েছিল দুই সেশন। সেখানে ঝলক দেখিয়েছিলেন তাইজুল ইসলাম। শেষ সেশন ভেসে যাওয়ার পর দ্বিতীয় দিনে কেবল ৬.২ ওভার বল করতে পারে বাংলাদেশ। মেঘে ঢাকা আকাশের নিচে ওই সময়টুকুতেই চরম হতাশার ছবি দেখিয়েছিলেন দুই পেসার ইবাদত হোসেন ও সৈয়দ খালেদ আহমেদ।
তৃতীয় দিনের পুরোটা বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার পর চতুর্থ দিনে ইবাদত-খালেদকে পাওয়া যায় ভিন্ন চেহারায়। তাদের মধ্যে দেখা যায় উন্নতির ছাপ। চতুর্থ দিনে পাকিস্তান ব্যাট করেছে ৩৫.১ ওভারে। তাতে ২ উইকেটে ১১২ রান যোগ করে ৩০০ স্পর্শ করেই ইনিংস ছেড়ে দেয় তারা। শুরুর ঘন্টাখানেক বাদ দিলে পাকিস্তানি ব্যাটারই দেখিয়েছেন দাপট।
এদিনও আকাশ সেই মেঘে ঢাকাই। এমন পরিস্থিতিতে পেসাররা লাল বলে পেয়ে থাকেন মুভমেন্ট। সেসব অনেকটা কাজে লাগাতে দেখা গেল তাদের। তাতে ফলও কিছুটা মিলেছে। আগের দিনের হতাশা ঝেড়ে দিন প্রথম স্পেলে ১১.৪ ওভারে ৩২ রান দিয়ে দুই উইকেট নেন তারা। রিভিউ নিলে ইবাদত উইকেট নিতে পারতেন আরেকটি।
পাকিস্তানও অবশ্য এদিন নেমেছিল দ্রুত রান তোলার তাড়ায়। ম্যাচের প্রায় সাত সেশন ভেসে যাওয়ায় ফল বের করতে মরিয়া ছিল বাবর আজমের দল।
সেই মেজাজের ফলস্বরূপ এসেছে প্রথম উইকেট। শুরুতে ১৩০-১৩২ কিমির গণ্ডিতে শর্ট বল করছিলেন তিনি। আজহার আলির বাউন্ডারি পেতেও সমস্যা হচ্ছিল না। অফ স্টাম্পের বাইরে তেমন একটি বল পুল করতে গিয়ে আকাশে উঠিয়ে ফেরেন আজহার।
বাজে একটি বলে উইকেট পেলেও ইবাদত এদিন ছিলেন আগের দিনের থেকে অনেক ধারালো। ফাওয়াদ আলমকেও কাবু করেছিলেন। অফ স্টাম্পের বাইরে লেন্থ থেকে লাফানো এক বলে ব্যাট ছুঁইয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচও দেন ফাওয়াদ। বাংলাদেশের বোলার-কিপার-ফিল্ডার কেউই তা টের পাননি! আবেদন না করায় মেলেনি উইকেট। ১২ রানে জীবন পাওয়া ফাওয়াদ পরে অপরাজিত থাকেন ৫০ রানে।
এর আগেই উইকেটের দেখা পান খালেদ। অভিষেকের তিন বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর টেস্টে প্রথম উইকেটটা এসেছে দারুণ এক বলে। এই তিন বছরে অবশ্য কেবল তৃতীয় টেস্টে নেমেছিলেন খালেদ। প্রথম দিন থেকে একদম নির্বিষ বল করা এই ডানহাতি পেসার এদিন বল ফেলেছেন ভালো লেন্থে। গুড লেন্থে বল ফেলে ভেতরে ঢুকিয়েছেন। পেছনে ফেলা বলগুলোতেও মুভমেন্ট আদায় করতে দেখা গেছে তাকে।
তার ভেতরে ঢোকা তেমন এক বল কিছুটা নিচু হয়ে কাবু করে দেয় বাবরকে। এলবিডব্লিউ আউট রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি পাকিস্তান অধিনায়ক।
বাংলাদেশকে হতাশ করে অবশ্য স্পিনারদের বোলিং। তাইজুল প্রথম দিনের প্রথম সেশনে ছিলেন দারুণ। রীতিমতো কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানের। তবে এদিন তাইজুলের বল সামলাতে মোহাম্মদ রিজওয়ান-ফাওয়াদ আলমদের কোন সমস্যাই হয়নি।
লাঞ্চের পর বল হাতে নেওয়া অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসানও কোন প্রভাব ফেলতে পারেননি। ইনিংসে ১৯ ওভারে ৫২ রান দিয়ে পাননি কোন উইকেট। প্রথম দিনে অবশ্য উইকেট নেওয়ার কিছু পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন তিনি। সবচেয়ে হতাশ করেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এই অফ স্পিনারকে চট্টগ্রাম টেস্টেও দেখে গেছে বিবর্ণ। ঢাকায় তার বোলিং ছিল বেশ রক্ষণাত্মক। ১৪ ওভার বল করে ৩৭ রান দিয়ে থেকেছেন উইকেটশূন্য। বাকিদের সঙ্গে তার তফাৎ উইকেট নেওয়ার বিন্দুমাত্র কোন পরিস্থিতিও তৈরি করতে পারেননি মিরাজ।
এমনিতে তার বল থেকে বাড়তি বাউন্স দেখা যায় না, ছোট ছোট টার্ন আদায় করে সাফল্য আনেন। মিরাজের বোলিং ছিল খুবই অনুমিত ঘরানার। ব্যাটসম্যানরা তাতে থিতু হতে পেয়েছেন কিছু স্পেস।
Comments