মহামারিতেও ঋণ মওকুফে বেপরোয়া ব্যাংক, আদায়ে নয়

খেলাপিদের কাছ থেকে ঋণ আদায়ের ব্যাপারে দুর্বল রেকর্ড থাকা সত্ত্বেও করোনাভাইরাস মহামারির পুরোটা সময় জুড়ে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো ঋণ মওকুফের ক্ষেত্রে বেপরোয়া ভাব দেখিয়ে এসেছে।

গত বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে ব্যাংকগুলো মোট ২ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকার ঋণ মওকুফ করেছে, যা ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থার জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই ধরনের চর্চা ভালো গ্রাহকদেরও ঋণ ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। প্রভাবশালী ঋণগ্রহীতারা সহজেই এই সুবিধাটি নিয়ে থাকেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৯ সালে ব্যাংকগুলো ২ হাজার ২৯৩ কোটি টাকার ঋণ মওকুফ করেছিল। ২০১৮ সালে এর পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদের ভাষ্য, ব্যাংক মালিক ও খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে এক ধরনের অনৈতিক সম্পর্ক থাকে। কিছু ব্যক্তি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের পদে আছেন। আবার তারা শিল্প মালিকও বটে। এভাবেই মূলত পরিচালকরা একে অপরের সঙ্গে যোগসাজশ করে মওকুফের এসব সুবিধা নিচ্ছেন।

সাবেক এই গভর্নর বলেন, 'ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে ব্যবসায়ীদের অধিষ্ঠিত থাকার ব্যাপারটি গোটা বিশ্বে বিরল। তবে বাংলাদেশে এই চর্চা পুরোপুরি ভিন্ন, যা শেষ পর্যন্ত যা স্থানীয় ব্যাংকগুলোর করপোরেট সুশাসনকে দুর্বল করে দেয়।'

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ব্যাংকগুলো তাদের খেলাপি হওয়া ঋণ থেকে ৪ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা আদায় করেছে। ১ বছর আগে একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা।

সব মিলিয়ে ২০২০ সালে ব্যাংকগুলো তাদের সম্মিলিত খেলাপি ঋণ থেকে ৫ হাজার ৮০২ কোটি টাকা পুনরুদ্ধার করে। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে এর পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের বক্তব্য, খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার কারণে ব্যাংকিং খাত ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে আছে।

'সুতরাং, প্রভাবশালী খেলাপিদের ঋণ মওকুফ করা হলে তা ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থার অবনতি ঘটাবে। ঋণ মওকুফের কারণে ব্যাংকের আয় কমবে। এমনকি এই প্রক্রিয়া ভালো ঋণগ্রহীতাদেরও সময়মতো ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করে থাকে।'

সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। ৯ মাস আগের তুলনায় যা ১৪ শতাংশ এবং ১ বছর আগের তুলনায় ৭ দশমিক ১ শতাংশ বেশি।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, যেসব ঋণগ্রহীতা ব্যবসা পরিচালনার সময় নগদ অর্থের সঙ্কটে ভোগেন এবং একই সময়ে খেলাপি হয়ে পড়েন, তাদের ক্ষেত্রে ঋণ মওকুফের বিষয়টি বিবেচনায় আনা হয়। তবে এটি সচরাচর ঘটে না।

তাই অন্য ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে এ ধরনের আচরণের জন্য ব্যাংকগুলোকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান মাহবুব হোসেন।

যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা ইলিয়াস উদ্দিন আহমেদ জানান, যেসব ঋণগ্রহীতাদের ব্যবসা বিভিন্ন কারণে বন্ধ হতে চলেছে, তাদের ক্ষেত্রে ব্যাংক কেবল সুদের পরিমাণ মওকুফ করতে পারে। তিনি বলেন, 'যাদের ব্যবসা চলমান আছে, তাদের সাধারণত আমরা এই সুবিধা দেই না।'

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তার ভাষ্য, এর আগে কিছু প্রভাবশালী গ্রাহকের খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করার সময় কয়েকটা ব্যাংক তাদের বিপুল পরিমাণ ঋণ মওকুফ করছিল।

অনুবাদ করেছেন মামুনুর রশীদ

Comments

The Daily Star  | English

Drug smuggling via air, land routes on the rise

This grim picture emerges as Bangladesh, like other countries around the world, observes the International Day Against Drug Abuse and Illicit Trafficking today.

12h ago