সংক্রমণ কমে আসায় ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বাড়ছে
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে পর্যটন ও হসপিটালিটি খাতের ব্যবসা বাড়তে থাকায় চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসেও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে খরচের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বরে সব মিলিয়ে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৪০ কোটি টাকায়। আগের মাসের তুলনায় যা ১০ শতাংশ এবং গত বছরের একই বছরের তুলনায় ৫১ শতাংশ বেশি।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর সংক্রমণ কমে আসার পরিপ্রেক্ষিতে গত আগস্টে পর্যটন ও হসপিটালিটি খাত পুনরায় চালু হয়।
ক্রেডিট কার্ড বাণিজ্য সম্প্রসারণের সঙ্গে যুক্ত ব্যাংকারদের অভিমত, এটি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যয় করার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
এ ছাড়া মহামারির প্রকোপ কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় মানুষ এখন কার্ডের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় লাইফস্টাইল পণ্য কিনছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে অগ্রিম কেনাকাটার কারণে চলতি বছরের জুনে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন বেড়ে যায়। ওই মাসে এই লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকা। এর আগের মাসের তুলনায় যা ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেশি।
আগস্টে নাগাদ লেনদেনের পরিমাণ বৃদ্ধির আগে ঈদের পর পর তা আবার কমে যায়।
মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল জানান, মহামারিজনিত নিয়ন্ত্রণ শিথিলের কারণে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভ্রমণ বেড়েছে। মানুষ লাইফস্টাইল পণ্য কিনছে।
সম্প্রতি বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক রুটে পুনরায় ফ্লাইট চালু হওয়ায় মানুষ দেশের বাইরে ভ্রমণের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠছে। এই প্রেক্ষাপটে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বাড়ছে বলেও মন্তব্য করেন মোহাম্মদ কামাল।
যদিও করোনাভাইরাসের নতুন ধরণ শনাক্ত হওয়ার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। যা এর মধ্যে কিছু দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি দুশ্চিন্তা তৈরি করেছে ব্যবসায়ী মহলেও।
এ অবস্থায় সবাই সংস্পর্শহীন (ডিজিটাল) লেনদেনের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার। কারণ করোনা সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে এটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি বলেন, 'দেশে যদি কোভিডের আরেকটি ঢেউ আঘাত হানে, তাহলে আগের অর্থনৈতিক দুরবস্থা আবার ফিরে আসতে পারে।'
সম্প্রতি ই-কমার্স খাতে উদঘাটিত ব্যাপক অনিয়মের কারণে তৈরি আস্থাহীনতা ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে একটি বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে।
দেখা গেছে, কিছু ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম অগ্রিম অর্থ বুঝে নেওয়ার পরেও গ্রাহকদের পণ্য ও পরিষেবা সরবরাহ করেনি।
গ্রাহকরা এখন বেশিরভাগ সময় কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন এড়িয়ে পণ্য বুঝে নিয়ে মূল্য পরিশোধ করছেন।
সেপ্টেম্বরে ই-কমার্স লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৭৭৮ কোটি টাকা। এর আগের মাসের তুলনায় যা শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ এবং গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯১ শতাংশ বেশি।
ব্র্যাক ব্যাংকের রিটেলইল ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান মহিউল ইসলামও জানান, ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার অনেকাংশেই বেড়েছে।
ব্যাংকটি চলতি মাসে তার গ্রাহকদের প্রায় ৭ হাজার ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাজারে মোট ক্রেডিট কার্ড ছিল ১৮ লাখের বেশি। এর আগের মাসের তুলনায় যা ১ শতাংশ ও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি।
মহিউল ইসলাম বলেন, 'করোনাভাইরাসের সর্বশেষ ধরণ নিয়ে আমরা খানিকটা চিন্তিত। এটা যদি উদ্বেগজনকভাবে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আবার বিঘ্নিত হবে।'
এ ছাড়া এটি অর্থনীতির বিদ্যমান ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অনুবাদ করেছেন মামুনুর রশীদ
Comments